Main Menu

সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিকার চাই..

আব্দুর রশিদ, জকিগঞ্জঃ প্রতিদিনই যেন সড়কে মৃত্যুর মিছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা খবরের কাগজ খুললেই চোখে পড়ে অসংখ্য তাজা মৃতদেহের ছবি, ক্ষত-বিক্ষত দেহ রাস্তায় পড়ে আছে, ঝরে যায় কত তাজা প্রাণ, কত পরিবার পথে বসছে, সেই অশ্রুসজল করুণ মুখের হিসাব কেউ রাখে না। পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ অথবা অপ্রাপ্ত বয়স্ক পুত্রের সামনে পিতার রক্তাক্ত নিথর দেহ। অনেকেই আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে আজীবনের অভিশপ্ত জীবন যাপন করছে।

সিলেট জেলা শহর থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী উপজেলা (প্রায় ৯৫ কিলোমিটার) জকিগঞ্জ সড়কে ইদানিং ‘সড়ক দুর্ঘটনা’ শব্দটি একটি আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনার এ করুণ পরিস্থিতি দেখে অনেকেই একে সড়কে মৃত্যুর মিছিল নামে অভিহিত করেছেন। আর এ মৃত্যুর মিছিল সকালে ঘর থেকে বের হয়ে বিকালে সুস্থ শরিরে বাড়ি ফেরা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় মানুষের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।

ছবিঃ সংগৃহীত

একসময় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসত, প্রতিবাদ করত, প্রশাসন জেগে উঠত, সাধারণ মানুষের মনে গভীর রেখাপাত তৈরি করত, মানবাধিকার কর্মীরা ছুটে আসতেন। আর এখন মানুষের মনে রেখাপাত তৈরি করলেও তা যেন মনেই থেকে যায়, কেউ ছুটে আসে না। প্রশাসন কিংবা মানবাধিকার কর্মি কারো এ নিয়ে ভ্রুক্ষেপ করার সময় নেই। মানুষ যেন সড়কে মৃত্যুকে তাদের নিষ্ঠুর নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়েছে। হয়তো এমন দিন আসবে সড়ক দূর্ঘটনার মৃত্যুকে একটি স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে মেনে নেওয়া হবে।

জকিগঞ্জ, সিলেটের বাসিন্দা তথা দেশ ও জাতিকে এ করুণ পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে অবশ্যই সচেতন নাগরিক সমাজকে জেগে উঠতে হবে, প্রশাসনকে সজাগ হতে হবে, সড়কের আইন-কানুনগুলোর প্রয়োগ শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে।

সাধারণত আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনাগুলো কয়েকটি কারণে হয়ে থাকেঃ

১। সঠিক আইন ও আইনের প্রয়োগ না থাকা;

২। ত্রুটিযুক্ত ও অতিরিক্ত অবৈধ যানবাহন;

৩। অনভিজ্ঞ বা মাদকাসক্ত চালক;

৪। সড়কের ভগ্নদশা, গর্ত ও প্রসস্ততা কম;

৫। চালকদের এক নাগাড়ে অতিরিক্ত ডিউটি ও অসচেতনতা;

৬। ধারণ ক্ষমতার অধিক মালামাল বা যাত্রী বহন;

৭। নির্মান সামগ্রী রেখে রাস্তা দখল;

৮। ট্রাফিক আইন না মানার মানসিকতা;

৯। অসচেতন পথচারী।

এছাড়াও আরো অনেক ছোট বড় কারণ রয়েছে এদেশে ঘটমান সব সড়ক দূর্ঘটনার পেছনে। আর এসব কারণগুলোকে চিহ্নিত করে এর প্রতিকারে সবাইকে একসাথে এগিয়ে আসতে হবে।

সড়ক দূর্ঘটনার প্রতিকারঃ

ক. আইনের শতভাগ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

খ. আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বা প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক অপরাধীর কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও প্রতিটি দূর্ঘটনার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

গ. ড্রাইভারদের লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে ঘুষ প্রথার বিলুপ্তি অবশ্যম্ভবী এবং চালকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের পরিমাণ মত বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে।

ঘ. সড়ক নির্মাণে রাজনৈতিক ছত্রছায়ামুক্ত কর্মকান্ড নিশ্চিত করে স্বচ্ছ জবাবদিহিতার প্রচলন করতে হবে।

ঙ. মাদকাসক্তি বিষয়ে চালকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

চ. সড়ক ও ফুটপাত অবৈধ দখল মুক্ত করে এর সাথে যুক্ত সকলকে কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

ছ. ঝুকিপুর্ণ স্থানে প্রয়োজন অনুযায়ী ডিভাইডার স্থাপন করে, ঝুকিমুক্ত সড়ক নির্মান করতে হবে।

জ. সড়কে লাইসেন্সবিহীন অটোবাইক, সিএনজি, প্রচলিত দশসিটা সহ অবৈধ যানবাহন চলাচলের ব্যপারে প্রশাসনকে কঠোর অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

ঝ. সড়ক দূর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির পরিবারকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ক্ষতিপূরণ নির্দিষ্ট সময়ে প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

আশা করি, প্রতিকারের এসব বিষয়গুলোর উপর কঠিন নজরদারীসহ বাস্তব প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে সড়ক দূর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে।পরিশেষে একটিই কামনা, সড়কে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে মুক্তিপাক সাধারণ মানুষ, ভালো থাকুক জন্মভূমি প্রিয় বাংলাদেশের মানুষ ও বাংলাদেশ।

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.