শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি অবান্তর, পাবলিক পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত শিগগির

করোনার উচ্চ সংক্রমণের সময়কালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি অবান্তর বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শিগগিরই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো বলে বলেও মন্ত্রী উল্লেখ করেছেন।
বুধবার (৩০ জুন) সংসদে বাজেট পাসের প্রক্রিয়ার সময় বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন ছাঁটাই প্রস্তাবের জবাব দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও গণফোরামের সদস্যরা ছাঁটাই প্রস্তাবেরও পর তাদের বক্তব্য দেন। এসময় কোনও কোনও সংসদ সদস্য স্কুল খুলে দেওয়ার দাবি করেন। অবশ্য কেউ কেউ এর বিরোধিতাও করেন।
বিজ্ঞানকে নিয়ে চলতে হবে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে বৈশ্বিক সংকট করোনা অতিমারির মধ্যে চলতে পারি না। বিজ্ঞান বলছে শতকরা ৫ শতাংশ বা তার কমে সংক্রমণের হার না নামা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বিজ্ঞান সন্মত নয়। এখন সংক্রমণের হার প্রায় ২৪ শতাংশ। কোনও কোনও জেলায় সংক্রমণ ৫০ শতাংশ বা তারও ঊর্ধ্বে। এই সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি আদৌ যৌক্তিক কী না তা ভেবে দেখার দরকার আছে। কারণ এই সংসদ জাতির জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলো বিভিন্ন সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার চেষ্টা করেছিল। তারা খোলার পরে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার পরে আবারও বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। উন্নত দেশগুলো যেখানে শ্রেণি সাইজ ২০/২৫ জনের বেশি নয়। আমাদের এখানে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা গায়ে গায়ে লেগে বসে থাকে। সেখানে খোলার প্রশ্নটা একেবারেই অবান্তর।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন সময়ে অভিভাবকদের সঙ্গে আমার কথা হয়। তাদের কেউ কেউ খুলে দেওয়ার কথা বললেও এসময় খোলা হলে তারা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাবেন না বলে একবাক্যে জবাব দেন। তারা বলেন, সন্তানদের মেরে ফেলার জন্য পাঠাতে পারি না। তাদের বিভিন্নভাবে এক্সপ্রেশন প্রকাশ করেন।
শিগগিরই এসএসসি-এইচএসসির সিদ্ধান্ত
এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বহু দেশ এমন কী উন্নত বিশ্বের দেশগুলোও পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করেছে। কোনও কোনও প্রেডিকটেড গ্রেড দিচ্ছে। আমরা সেখানে ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে ফেলেছিলাম। এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর দিক দুই/তিনদিন আগে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলাম। পরে আমরা জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে তার ফলাফল দিয়েছিলাম। আমরা যেভাবে বিচার বিশ্লেষণ ও টালি করে ফলাফল দিয়েছি দুই একটি ব্যতিক্রম ছাড়া পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীদের ফলাফল এরকমই হতো। কাজেই কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
তিনি বলেন, এ বছরের সিদ্ধান্ত আমরা খুব শিগগিরই জানাবো। কী পদ্ধতি আমরা করবো সবকিছুই আমরা জানাবো। তবে, শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ সবাইকে বলবো উদ্বিগ্ন হবেন না। বৈশ্বিক সংকট চলছে। এই সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সকল ক্ষেত্রে সেভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। একইভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত হবে। এটি সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর। অবশ্যই আমরা প্রজ্ঞা, জ্ঞানের সব কিছু প্রয়োগ করে সিদ্ধান্ত নেবো।
মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন সারা বিশ্বেই ব্যত্যয় ঘটেছে। আমাদের এখানেও কিছুটা ঘটেছে। কিন্তু তাদের যাতে দীর্ঘ মেয়াদে কোনও ক্ষতি না হয়ে যায় তার জন্য সর্বোচ্চ নজর রাখছি। আমরা কেভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির পরামর্শ গ্রহণ করেই আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকি।
বিকল্প সময়ে সরকার দ্রুত সময় পাঠদান শুরু করেছে দাবি করে শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, আমরা যত দ্রুত সক্ষম হয়েছি, বিশ্বের আর কোথাও এত দ্রুত শুরু করেনি। যে কারণে বিশ্বে শিক্ষা নিয়ে কোনও সভা হলে বাংলাদেশের দ্রুততম সময়ের মধ্যে অনলাইনে এবং টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদানের বিষয়টির প্রশংসা করা হয়। সংসদ টেলিভিশন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার জন্য এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, দেশি-আন্তর্জাতিক নানা ধরনের জরিপ বলছে ৪৫ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত শিক্ষার্থী অনলাইন বা টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদান গ্রহণ করতে পারছে। সর্বনিম্নটা ধরে নিয়ে আমরা এই হার বাড়াতে অ্যাসাইনমেন্ট পদ্ধতিতে গেছি। এতে ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। স্বাভাবিক পাঠক্রমে এর চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে না। ফল অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে আমরা স্বাভাবিক সময়ের মত পর্যায়ে পৌঁছতে পেরেছি।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সকলের মধ্যে অ্যাসাইনমেন্টের বিষয় সন্তুষ্টি রয়েছে বলে মন্ত্রী মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, সকলেই এই পদ্ধতিতে ভালো বলে গ্রহণ করেছেন। বিশেষজ্ঞরাও এটার পক্ষে মত দিয়েছেন। আমরা বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে বিকল্প যেকোনও পদ্ধতি গ্রহণ করছি। সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছি।
মন্ত্রী বলেন, বলা হয় শিশুদের ইমিউনিটি অনেক বেশি। শিশুরা কম সংক্রমিত হচ্ছে। এটা যেমন বলা হচ্ছে আবার বিজ্ঞান বলছে শিশুদের মাধ্যমে ছড়ানোর আশঙ্কা অনেক বেশি। তারা নিজেরা হয়তো আক্রান্ত হলে তাদের সিমট্রম হয়তো থাকবে না কিন্তু বাড়িয়ে গিয়ে তাদের বাবা-মাসহ অন্যদের সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। সেটাকে বিবেচনায় থাকতে হবে।
অনলাইনে পাঠদানে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে বলে মন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, এজন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করা হচ্ছে। প্রতিটি জেলায় অনন্ত একজন করে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হবে। তার মাধ্যমে মাঠপ্রশাসনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
সংসদ সদস্যরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি বিষয়ে আপীল করা হয়েছে
ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংসদ সদস্যরা সভাপতি থাকতে পারবেন না বলে আদালতের নির্দেশনার প্রসঙ্গটি ওঠে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, এখানে আইনমন্ত্রী রয়েছেন। উনার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আপীল হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গেও আমার আলাপ হয়েছে। আমরা আশাকরি আপীলটি যখন ওঠবে শুনানি হবে। তখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় যথোপযুক্ত দায়িত্ব পালন করবে। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যেকোনও নাগরিকের এই অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারেন না।

বার্তা বিভাগ প্রধান
Leave a comment
এই বিভাগের আরো সংবাদ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সে ভর্তির মেধা তালিকা প্রকাশ বুধবার, ৩০ জুনের মধ্যে ভর্তি
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্স (নিয়মিত) প্রোগ্রামে ভর্তি কার্যক্রমের মেধা তালিকা আগামীকাল বুধবার (১৮ জুন)বিস্তারিত

বিএড স্কেল-বঞ্চিত শিক্ষকদের কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সামনে বিএড স্কেল-বঞ্চিত শিক্ষকদের কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। পুলিশের দাবি,বিস্তারিত