Home » ইজ্জত হারানর ভয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় স্কুলছাত্রী দিলরূবা

ইজ্জত হারানর ভয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় স্কুলছাত্রী দিলরূবা

মানবরূপী হায়েনাদের হাতে ইজ্জত না হারিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় এসএসসি পরীক্ষার্থী এক স্কুল ছাত্রী। তার মৃত্যুর পর আজোবধি ব্যবস্থা নেয়া হয়নি ওই বখাটেদের বিরুদ্ধে। গ্রেফতার করা হয়নি তাদের। ফলে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছে ছাত্রীর মা,ভাই বোন ও স্বজনরা। গত ২০ জানুয়ারি নগরীর দক্ষিণ বাগবাড়ি সোনার বাংলা আবাসিক এলাকাস্থ ৮৮ নং মন্নান কুটিরে এ ঘটনা ঘটে। মৃত ছাত্রী দিলরুবা আক্তার পপি (১৭) নগরীর ভাতালিয়ার কারাবন্দী দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে। অভিযোগে প্রকাশ, নগরীর ভাতালিয়ার দেলোয়ার হোসেন দীর্ঘ মেয়াদে কারাবন্দী থাকার সুযোগে একই এলাকার ইকবাল ও শহীদদের নেতৃত্বে একদল বখাটে দেলোয়ারের স্ত্রী ও তার মেয়ে ১০শ্রেণির স্কুলছাত্রী দিলরুবা আক্তার পপি’র (১৭) সাথে যৌন সম্পর্কের চেষ্টা করে। এতে রাজি না হওয়ায় বখাটেরা তাদের নানাভাবে হয়রানী ও নির্যাতন করতে থাকলে দেলোয়ারের স্ত্রী ও ছেলে মেয়েরা বাসা তালা দিয়ে দক্ষিণ বাগবাড়িস্থ মন্নান ভিলায় চলে যায়। সেখানে যাওয়ার পরও তাদের রেহাই মিলেনি। বখাটেরা তাদের ঘরের তালা ভেঙ্গে মালপত্র লুটপাট করে। লুটপাটের খবর পেয়ে গত বছরের ৮জুন দেলোয়ারের স্ত্রী রফা বেগম ও মেয়ে স্কুলছাত্রী দিলরুবা আক্তার পপি বাসায় গেলে বখাটেরা তাদেরকে গুরুতর যৌনপীড়ন ও মারপিট করে গুরুতর জখম করে। সিলেট ওসমানী হাসপাতালে দু’দিন ভর্তি রেখে তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়। এ ঘটনা পর পর স্কুল ছাত্রী দিলরূবা আক্তার পপি ১৭ সেপ্টেম্বর ময়মুন্নেছা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে গেলে ফেরার পথে বখাটেরা তাকে উত্যক্ত করে এবং শরীরের বস্ত্র ছিড়ে প্রকাশ্যে উলঙ্গ করার চেষ্টা করে। এর পর গত ২৭ অক্টোবর স্কুল থেকে ফেরার পথে নগরীর ভাতালিয়া সরকারী প্রথিমিক বিদ্যালয়ের সামনে মা ও মেয়েকে নাজেহাল করে বখাটে ইকবাল ও শহীরা। এসব ঘটনার পর সম্ভ্রম হারানোর ভয়ে স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেয় পপি।

এ ঘটনায় সিলেট কেতোয়ালি মডেল থানায় তার মা মামলা দিতে গেলে থানা পুলিশ প্রভাবশালী পরিবারের বখাটেদের বিরুদ্ধে মামলা না নিয়ে ট্রাইব্যুনালে মামলা দেয়ার পরামর্শ দেয়। পরামর্শ মোতাবেক ছাত্রীর মা রফা বেগম গত বছরের ৩০ অক্টোবর সিলেটের বিভাগীয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি নালিশা মামলা ( নং-৪৮৩/১৮) করেন। মামলায় বখাটেপনা ও যৌনপীড়নের অভিযোগে আসামী করা হয় নগরীর ভাতালিয়া ৯৬ নং বাসার মৃত আব্দুল মন্নানের পুত্র আব্দুশ মহীদ, তালিয়া ৯৫-এর হাজী আব্দুল গণির পুত্র ইকবাল হোসেন ও ইব্রাহীম হোসেন, ভাতালিয়া ৯৪-এর মৃত আতাউর রহমান মিয়াছাবের পুত্র মাহবুবুর রহমান মবু ও ভাতালিয়া ৯৬-এর আব্দুল হকের পুত্র আমিন আহমদ- সহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন। আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিলেট সদর সমাজসেবা অফিসারের কাছে প্রেরণ করেন। আগামী ১২ মার্চ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ধার্য রয়েছে। মামলার খবর পেয়ে সংঘবদ্ধ বখাটেরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং স্কুল ছাত্রী দিলরুবাকে অপহরন ধর্ষন ও গুম করার হুমকি অব্যাহত রাখে। এ অবস্থায় ইজ্জত হারানোর ভয়ে স্কুলছাত্রী দিলরুবা আক্তার পপি গত ২০ জানুয়ারি গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে। ঘটনার পর সুরতহাল রিপোর্ট ও ময়না তদন্ত করে করে তাকে দাফন করা হয়। বখাটে ইকবাল ও শহীদদের হাতে ইজ্জত না হারিয়ে স্কুলছাত্রী দিলরূবা আক্তার পপি আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরী মূলে একটি ইউডি মামলা হলেও আত্মহত্যার প্ররোচনার দায়ে কোন মামলা হয়নি কিংবা কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। কোতোয়ালী থানার ওসি মো. সেলিম মিয়া জানান, বখাটেপনার অভিযোগে আদালতে নালিশা মামলা রয়েছে । ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর ঘটনায় পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *