বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন ও দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গুরুতর অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুরো দেশকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন
আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। মৃত্যুকালে দেশের জনপ্রিয় এই নেত্রীর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী। দেশ-বিদেশে তথা দক্ষিণ এশিয়ায় নারী প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে জনপ্রিয় এ নেত্রী আজ দেশবাসী, দলীয় নেতাকর্মী, ভক্ত ও অনুসারীদের কাঁদিয়ে পরলোকে পাড়ি জমান।
শেষ সময়ে খালেদা জিয়ার পাশে ছিলেন ১৭ বছর নির্বাসনের পর দেশে ফেরা বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান, নাতনি ব্যারিস্টার জাইমা রহমান ও ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমানসহ পরিবারের সদস্য, দলীয় নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা।
সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সারা দেশে এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোকাচ্ছন্ন নেতাকর্মীরা ভিড় করেছেন রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এভারকেয়ার হাসপাতাল, চেয়ারপারসনের গুলশানের বাড়ি ও রাজনৈতিক কার্যালয় এবং নয়াপল্টন এলাকায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন তাঁর ভক্ত, অনুসারী ও সাধারণ মানুষ।
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, এনসিপির আহ্বাবায়ক নাহিদ ইসলাম, এবি পার্টির মুজিবুর রহমান মঞ্জু গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তাঁর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোগী এনটিভির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ফুসফুসের সংক্রমণ থেকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে চলতি বছরের ২৩ নভেম্বর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর দেখা দেয় নিউমোনিয়া। এর সঙ্গে রয়েছে কিডনি, লিভার, আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসের পুরোনো সমস্যা। ফলে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, একটি রোগের চিকিৎসা দিতে গেলে আরেকটির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছিল। তাঁর অনেক শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছিল। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে হাসপাতালের কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যে অবনতি হলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে লন্ডনে নেওয়ার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে অবস্থা সংকটময় হলে এভারকেয়ার হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। সেখানে মেডিকেল বোর্ডের দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছিল।
জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের জন্য ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের সাজানো মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। সেদিনই তিনি কারাবন্দি হন এবং রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে শুরু হয় তাঁর কারাবাস। একই বছরের ৩০ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলায় খালেদা জিয়ার সাজার মেয়াদ বাড়িয়ে ১০ বছর করে আদেশ দেন হাইকোর্ট। ২০১৮ সালের ‘রাতের ভোটের’ আগে ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের আরেকটি মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।
কারাগারে এক বছরের বেশি বন্দিজীবন কাটানোর পর চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে তৎকালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বর্তমান বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) কেবিন ব্লকের প্রিজন সেলে নেওয়া হয়। ২০২০ সালে বিশ্বে করোনা মহামারি আকার ধারণ করলে ২৫ মার্চ তৎকালীন সরকারপ্রধানের নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়, পরে তা কয়েক দফায় বাড়ানো হয়। তখন থেকেই শর্তসাপেক্ষে মুক্ত খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় ছিলেন। এর মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে একাধিকবার তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন।
২০২৪ সালে ৫ আগস্টের পর গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে সরকারের নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়। পরে উচ্চ আদালতে আপিলের শুনানি শেষে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের দুই মামলাতেই খালাস পান খালেদা জিয়া।
এক নজরে খালেদা জিয়া
বিএনপির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, গণমাধ্যমের খবর, বাংলাপিডিয়া, খালেদা জিয়াকে নিয়ে লেখা সাংবাদিক সৈয়দ আবদাল আহমদের আত্মজীবনীমূলক বই ‘নন্দিত নেত্রী খালেদা জিয়া’সহ একাধিক বই ও ওয়েবসাইটে খালেদা জিয়ার জন্ম, শৈশব, বিয়ে, সাংসারিক জীবন এবং স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর রাজনীতিতে আগমন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনাসহ তাঁর বর্ণাঢ্য জীবন সম্পর্কে জানা যায়।
জন্ম : খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালে তৎকালীন অখণ্ড ভারতের দিনাজপুর জেলার জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ইস্কান্দর মজুমদার ব্যবসার সুবাদে সেখানে বসবাস করতেন। যদিও আদি নিবাস ছিল ফেনী জেলার ফুলগাজীতে। তাঁর মা বেগম তৈয়বা মজুমদার ছিলেন দিনাজপুরের চন্দবাড়ির মেয়ে।
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর জলপাইগুড়ির চা ব্যবসা ছেড়ে ইস্কান্দর মজুমদার দিনাজপুর শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে খালেদা জিয়া তৃতীয়। তাঁর শৈশব ও কৈশোর পার হয়েছে দিনাজপুরে।
সোনালি শৈশব : নেতৃত্বের মাধুর্যময় গুণাবলীসম্পন্ন বেগম খালেদা জিয়ার বর্ণাঢ্য শৈশবও ছিল অনন্য। দিনাজপুর শহরে কাটে তাঁর স্মৃতিময় শৈশব, সোনালি কৈশোর। জলপাইগুড়ি থেকে তিনি যখন দিনাজপুর আসেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র দুই বছর।
‘নন্দিত নেত্রী খালেদা জিয়া’ বই থেকে জানা যায়, দিনাজপুরের ঈদগাঁ এলাকার একটি ভাড়া বাসায় ওঠে খালেদা জিয়ার পরিবার। সেখানে তাঁর মেজো বোন বিউটি ছিলেন তাঁর খেলার সঙ্গী। পরিবারে খালেদা জিয়া ছিলেন তখন সবার আদরের পুতুল। তাকে কেউ তখন ধমক দিতে পারত না। আদর করতে হতো। সেই আনন্দময় শৈশবের মুহূর্তগুলো বর্ণনা করে খালেদা জিয়ার মা বেগম তৈয়বা মজুমদার বলেছেন, ‘পুতুল ছিল আমাদের সবার আদরের মেয়ে। ছোটবেলা থেকেই ও খুব সুন্দর। ও একটু বড় হলো, কিছু কিছু বুঝতে শিখল। আমরা যখন রোজা রাখতাম, তখন ও রোজা রাখতে প্রতিদিন কান্নাকাটি করত। একদিন তো সে একটি রোজা রেখেই দিল। অনেক চেষ্টা করেও আমরা তার রোজা ভাঙাতে পারিনি। আমার সঙ্গে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে সে নামাজ পড়ত। শবে বরাতের দিন ফকির-মিসকিনদের মধ্যে হালুয়া রুটি বিলাত। রাতে আমার সঙ্গে নামাজ পড়ত। ছোটবেলা থেকেই তার তেমন চাহিদা ছিল না।
পড়াশোনা : বাংলাপিডিয়া থেকে জানা যায়, খালেদা জিয়া দিনাজপুর মিশনারি স্কুল, গালর্স হাইস্কুল ও সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়ালেখা করেছেন। ১৯৬০ সালে তৎকালীন ক্যাপ্টেন এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। এরপর তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে তাঁর স্বামীর কর্মস্থলে চলে যান।
জিয়াউর রহমানের সাথে যেভাবে বিয়ে : সৈয়দ আবদাল আহমদের বইয়ে খালেদা জিয়ার বড় বোন খুরশিদ জাহানের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করা হয়, “জিয়াউর রহমান একদিন আমাদের বাসায় এলো। আম্মার কাছে গিয়ে বলল, ‘খালা, আমি আপনার জামাই হতে চাই।’ আম্মা হেসে ফেললেন। তখনই কিছু বললেন না। আব্বা বাসায় এলে তাকে বলা হলো। জিয়ার কথায় আব্বা বলল, ‘মন্দ কী?’ তবে পুতুলের বয়স তো খুব কম। আম্মা এ ঘটনা আমার স্বামীকে (মোজাম্মেল হক) জানালেন। তিনি সদ্য আমেরিকা থেকে ফিরেছেন। তিনি কিছুতেই রাজি হলেন না। কারণ, তার যুক্তি ছিল—পুতুলের বয়স খুব কম। মাত্র মেট্টিকুল্যাস পাস করেছে। ডিগ্রি পাস না করা পর্যন্ত বিয়ে হয় কী করে? অন্যদিকে, জিয়া সেনাবাহিনীর লোক। এটা নিয়েও আমরা ভাবলাম প্রথমে। প্রায় সবারই অমত ছিল। তবে, জিয়াকে আমরা সবাই পছন্দ করতাম। এদিকে জিয়াও বারবার খবর নিতে থাকল। অবশেষে আমরা বিয়েতে সম্মত হই।’’
খালেদা জিয়ার মা বেগম তৈয়বা মজুমদারকে উদ্ধৃত করে বইতে উল্লেখ করা হয়, তাঁর মকবুল চাচা (জিয়াউর রহমানের নানা) আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ১৯৬০ সালের আগস্টে মুদিপাড়ার বাসায় জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার বিয়ে হয়। বিয়ে হয়েছিল অনেকটা তাড়াহুড়া করে। প্রথমে আকদ হয়েছিল। এক বছর পর ঢাকার শাহবাগ হোটেলে তাদের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বিয়ের পর ১৯৬৫ সালে স্বামীর সঙ্গে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে যান খালেদা জিয়া। ১৯৬৯ সালের মার্চ পর্যন্ত করাচিতে ছিলেন। এরপর ঢাকায় আসার কিছুদিন পর জিয়াউর রহমানের পোস্টিং হয় চট্টগ্রামের ষোলশহর এলাকায়।
জিয়াউর রহমান-খালেদা জিয়া দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে বড় তারেক রহমান। ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি ইন্তেকাল করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় আটক : জার্মানি থেকে ট্রেনিং শেষে ফিরে এলে তৎকালীন সরকার জিয়াউর রহমানকে চট্টগ্রামে বদলি করে। জিয়াউর রহমানের সঙ্গে চট্টগ্রামের ষোলশহরের বাসায় থাকতেন খালেদা জিয়া। এরই মধ্যে বেজে ওঠে যুদ্ধের ডামাডোল। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে চট্টগ্রাম থেকে পাক সেনাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন জিয়াউর রহমান। সেখান থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কঠিন এ দিনগুলোতে একজন নিবেদিতপ্রাণ স্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়াই তাঁকে (জিয়া) সাহস জুগিয়েছেন এবং সময়ে সময়ে পরামর্শ দিয়েও মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন।
চট্টগ্রামের বাসায় দুই ছেলেসহ খালেদা জিয়াকে রেখে মুক্তিযুদ্ধে জেড ফোর্সের নেতৃত্ব দিতে চলে যান জিয়া। স্বামীকে মুক্তিযুদ্ধে লড়াইয়ে যেতে হাসিমুখেই বিদায় জানান খালেদা। বিদায় জানিয়ে ওই বাসা থেকে দুই সন্তানকে নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান তিনি। পরে ১৬ মে চট্টগ্রাম থেকে নৌপথে নারায়ণগঞ্জে পৌঁছান। সেখান থেকে ঢাকায় ওঠেন বড় বোন খুরশিদ জাহানের বাসায়। পরে নিরাপত্তার অভাবে ৩ জুন খালেদা জিয়াকে দুই সন্তানসহ তৎকালীন ভূ-তত্ত্ব জরিপ বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর এস কে আবদুল্লাহর সিদ্বেশ্বরীর বাসায় নিয়ে রাখা হয়। এক মাস পর ২ জুলাই সিদ্বেশরীর সেই বাসা থেকে পাকিস্তানি বাহিনি খালেদা জিয়া ও তার দুই ছেলেকে আটক করে।
স্বাধীনতা পরবর্তী জীবনযাপন : বাংলাদেশ স্বাধীন হলে দীর্ঘ নয় মাস পর দেখা হয় স্বামী জিয়াউর রহমানের সঙ্গে। স্বাধীন বাংলাদেশে জিয়াউর রহমান কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের ব্রিগেড কমান্ডার নিযুক্ত হলে তাঁর সঙ্গে কুমিল্লায় চলে যান খালেদা জিয়া। ১৯৭২ সালের জুনে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়া বীর সৈনিকের স্ত্রী হিসেবে দিন কাটান।
জিয়াউর রহমানের মৃত্যু ও ঘটনাপ্রবাহ : ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৮১ সালের ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বিপথগামী কিছু সেনাসদস্যের গুলিতে নিহত হন। স্বামী নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত গৃহবধূই ছিলেন খালেদা জিয়া। দুই ছেলেকে লালন-পালনের পাশাপাশি ঘরের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন তিনি। তাই জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি কঠিন সংকটে পড়ে।
গৃহবধূ থেকে রাজনীতির মাঠে খালেদা জিয়া : রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিচারপতি আব্দুস সাত্তার প্রথমে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, পরে রাষ্ট্রপতি হন এবং বিএনপির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু তখন বিএনপিকে নিয়ে দলের ভেতরে বাইরে শুরু হয় নানা চক্রান্ত। এ সময় বিএনপির কর্মীদের দাবি ও কিছু শীর্ষ নেতার অনুরোধে ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি খালেদা জিয়া দলের প্রাথমিক সদস্যপদ নিয়ে গৃহবধূ থেকে রাজনীতির ময়দানে হাজির হন। সেই থেকে রাজনীতিতে তাঁর পথচলা শুরু। এরই মধ্যমে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এলো এক কলংকিত দিন। জেনারেল এরশাদ রাতের অন্ধকারে বঙ্গভবনে ঢুকে বন্দুকের নলের মুখে বিচারপতি সাত্তারের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিলেন। বন্দুকের নলের মুখে তাঁকে জাতির উদ্দেশে টেলিভিশন ও রেডিওতে বক্তব্য দিতে বাধ্য করা হলো। বলানো হলো দুর্নীতি এতই ব্যাপক হয়েছে যে, তার (সাত্তার) পক্ষে দেশ পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না।
এরশাদ নানা কূটচাল সত্ত্বেও দমে যাননি খালেদা জিয়া। শুরু হয় কঠোর সংগ্রামী জীবন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় তিনি প্রথম বক্তব্য দেন। বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব নেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া।
এরপর আন্দোলন, সংগ্রাম, ঘাত-প্রতিঘাত, আটক-গ্রেপ্তার-গৃহবন্দি হলেও দেশের প্রশ্নে খালেদা জিয়া ছিলেন আপসহীন। তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতায় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির প্রকৃত বিকাশ ঘটে।
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে খালেদা জিয়া: জেনারেল এরশাদের পুরো শাসনামলে বিএনপির রাজনীতি ছিল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন। ১৯৮২ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানের প্রথম শাহাদাতবার্ষিকীতে তাঁর সমাধিতে গিয়ে খালেদা জিয়া বক্তব্য দেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে দলের অঙ্গ-সংগঠন ছাত্রদলকে শপথবাক্য পাঠ করান। ২৩ সেপ্টেম্বর তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মজিদ খান নতুন শিক্ষানীতি ঘোষণা করলে বিএনপি তার বিরোধিতা করে ও ছাত্রদলের নেতৃত্বে আন্দোলনের সূচনা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষাদিবসে স্বৈরাচারবিরোধী প্রথম মিছিলটি করে ছাত্রসমাজ। ১১ ও ১২ ডিসেম্বর ছাত্রদলের বর্ধিত সভা ও ১৩ ডিসেম্বর শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ধর্মঘট পালন করে।
ঘরোয়া রাজনীতি থেকে বেরিয়ে খালেদা সারা দেশ সফরে বের হয়ে প্রথম সভা করেন খুলনায় ইউনাইটেড ক্লাবে। ১৯৮৩ সালের ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর সাত দলীয় ও ১৫ দলীয় ঐক্যজোটের মধ্যে বৈঠকে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে পাঁচ দফা প্রণয়নের পর ৬ সেপ্টেম্বর তা ঘোষণা করা হয়। ২৮ নভেম্বর উভয় জোটের সচিবলায় ঘেরাও কর্মসূচিতে আহত খালেদা জিয়া এক আত্মীয়র বাসায় আশ্রয় নেন। ২৮ নভেম্বর রাতেই খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করা হয়। ১১ ডিসেম্বর প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এরশাদ রাষ্ট্রপতি হন এবং বিচারপতি আহসান উল্লাহকে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য করেন। এরপর খালেদা জিয়া বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই দেশব্যাপী গণসংযোগে বের হন। তিনি জেনারেল এরশাদের কুকর্ম জনগণের কাছে তুলে ধরেন।
১৯৮৪ সালের আন্দোলন : এরপর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন গণশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ১৯৮৪ সালের ৭ জানুয়ারি এরশাদ ৫৫টি রাজনৈতিক দলকে সংলাপে ডাকলে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী তা বর্জন করে। এরশাদ ১৯৮৪ সালের ১২ জুলাই জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিলে দুই জোট তা প্রত্যাখ্যান করে। সাত দলীয় জোট ২৫ জুলাই প্রতিরোধ দিবস পালন করে। ৫ আগস্ট জোটের জনসভা ও ২৭ আগস্ট অর্ধদিবস হরতাল পালন করা হয়। ৩ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। এরপর ১৫ অক্টোবর যৌথ আন্দোলনে ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ স্লোগানে ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি এরশাদ রেডিও ও টিভিতে দেওয়া ভাষণে নির্বাচন স্থগিত করেন এবং সংবিধানের আংশিক সংশোধনের ঘোষণা দেন।
আপসহীন নেতৃত্বে উত্তাল বাংলাদেশ : ১৯৮৬ সালের ২১ মার্চ রাতে জাতির উদ্দেশ্যে এক অনির্ধারিত বক্তৃতায় এরশাদ ধমকের সুরে বলেন, ‘আজ রাতের মধ্যে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত না দিলে আগামীকাল সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধ করে দেওয়া হবে।’ এই ভাষণের পর নাটকীয়ভাবে জোটের অন্যান্য দলের সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেখ হাসিনা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্তের কারণে ১৫ দলীয় জোট ভেঙে যায়। এরশাদের অধীনে ১৯৮৬ সালের ৭ মে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টি ১৫৩ আসনে, আওয়ামী লীগ ৭৬ আসনে, জামায়াতে ইসলামী ১০ আসনে এবং বাকি আসনে অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। খালেদা জিয়া স্বৈরাচার এরশাদের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। এই সিদ্ধান্তের কারণে খালেদা জিয়া সারা বাংলাদেশের মানুষ ও বিশ্বের কাছে ‘আপসহীন’ নেত্রী হিসেবে প্রশংসিত হন।
এরশাদ রাষ্ট্রপতি হলেও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলেন অনঢ় থাকে বিএনপি। দিতে থাকে একের পর এক কর্মসূচি। ১৯৮৮ সালে ১ জানুয়ারি এরশাদ নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়। একইদিন টিএসসিতে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে খালেদা জিয়া ‘এক দফা’ ঘোষণা করেন। সেই সঙ্গে ২২টি ছাত্রসংগঠনও নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দেয়। ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত একতরফা ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি তিন-চতুর্থাংশ আসন পায়। যদিও বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামীসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো সেই নির্বাচন বর্জন করেছিল। এরপর এরশাদবিরোধী আন্দোলন আরো বেগবান হয়। ১৯৮৯ সালের ৮ ও ৯ মার্চ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গঠিত হয়। অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএসসি এলাকায় গুলিতে নিহত হন ডা. শামসুল আলম মিলন এবং সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে গিয়ে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে বুকের রক্ত দিয়ে সড়কে লুটিয়ে পড়েন নূর হোসেন। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে দেশ।
১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিন ঢাকা সেনানিবাসে এক জরুরি বৈঠকে বসেন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা। চলমান রাজনৈতিক সংকটে সেনাবাহিনীর করণীয় বিষয়ে আলোচনা হয় এই বৈঠক। পরে ডিসেম্বর মাসের চার তারিখে সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ মেজর জেনারেল আব্দুস সালাম রাষ্ট্রপতি এরশাদের পদত্যাগ করা উচিত বলে জানিয়ে দেন। সে সময় বিবিসিকে দেওয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় খালেদা জিয়া অবিলম্বে এরশাদের পদত্যাগ দাবি করেন। ৬ ডিসেম্বর এরশাদ পদত্যাগ করলে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। এর মাধ্যমে নয় বছরের স্বৈরতন্ত্রের জাল থেকে মুক্ত হয় দেশ।
রাষ্ট্র পরিচালনায় খালেদা জিয়া : ১৯৯১ সালে মুক্ত ও সুষ্ঠু পরিবেশে অবাধ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে হজরত শাহজালাল (র.)-এর মাজার থেকে খালেদা জিয়া শুরু করেন নির্বাচনি প্রচারণা। রাত-দিন চষে বেড়ান সারা দেশ। এক হাজার ৮০০ জনসভা ও পথসভা শেষে ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার শেরেবাংলা নগরে সমাবেশে নির্বাচনি প্রচারণা শেষ করেন। এ সময় দিনে ৩৮টি জনসভায় বক্তব্য দেন তিনি। ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বিএনপি ১৪০টি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। খালেদা জিয়া পাঁচটি আসনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সবকটিতে জয়ী হন। এরপর জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি।
১৯ মার্চ খালেদা জিয়া দেশে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। পরে ৬ আগস্ট সংসদীয় সরকার পদ্ধতির পক্ষে ঐতিহাসিক বিল সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। অবসান ঘটে দীর্ঘ ১৬ বছরের রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতির।
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকার দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু, প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামুলক, কোস্ট গার্ড প্রতিষ্ঠাসহ নানা উদ্যোগ নেয়। ১৯৯৬-এর ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২৫ মার্চ রাতব্যাপী সংসদ অধিবেশনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করে বিএনপি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে রাষ্ট্রক্ষমতা পরিবর্তনে আসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা।
১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ১১৬টি আসন পেয়ে রাষ্ট্রের প্রধান বিরোধী দল হয়। পরে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ২১৫টি আসন পেয়ে নির্বাচিত হয়ে ১০ অক্টোবর সরকার গঠন করে। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও চারদলীয় জোট সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে নকলমুক্ত পরীক্ষা, মেয়েদের বিনামূল্যে পড়ালেখাসহ নানা উদ্যোগ নেয়।
ওয়ান-ইলেভেন ও বিএনপি : ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিএনপি। ১১ জানুয়ারি তিনবাহিনী প্রধানসহ নয় ডিভিশনের জিওসি রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জরুরি অবস্থা জারি করেন। পরে আসে ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন সরকার। এই সরকার দুর্নীতি অনুসন্ধান ও বিচারের নামে ‘মাইনাস টু ফর্মুলায়’ দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে সরাতে চায়।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপির তখনকার যুগ্ম মহাসচিব (বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমানকে। এপ্রিলে খালেদা জিয়াকে জোর করে বিদেশ পাঠাতে ব্যর্থ হলে ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে ২৪ ঘণ্টা অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আটকে রাখা হয় এবং খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। এরপর কার্যত খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করা হয়। ২ সেপ্টেম্বর রাতে খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১১ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াকে মুক্তি ও তারেক রহমানকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ফখরুদ্দীন সরকারের সময় দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী বন্দি ও পলাতক এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি না থাকা সত্ত্বেও শুধু গণতন্ত্রের স্বার্থে বেগম জিয়া শেষ মুহূর্তে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ‘পাতানো’ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৩ শতাংশের বেশি ভোট পেলেও মাত্র ২৯টি আসন পায় বিএনপি।

প্রতিনিধি