Home » ইন্টারনেট নিয়ে ভয়াবহ- প্রতারণা অপারেটরদের

ইন্টারনেট নিয়ে ভয়াবহ- প্রতারণা অপারেটরদের

ইন্টারনেট নিয়ে ভয়াবহ প্রতারণা করছে মোবাইল ফোন অপারেটররা। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, অথচ অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। ছোট ছোট নানা ধরনের প্যাকেজ দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, অথচ ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আবার একটু ব্যবহারের পরই বলছে, মেগাবাইট শেষ হয়ে গেছে। কীভাবে শেষ হচ্ছে তার কোনো জবাবও নেই। এখন ফোরজির যুগে খোদ রাজধানীতেই মিলছে না থ্রিজি। রাজধানীর অধিকাংশ জায়গায় ইন্টারনেট চালু করলে হয়ে যাচ্ছে টুজি। এ পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট নিয়ে সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এর মধ্যেই আগামী ২৫ জুলাই রাজধানীতে ফাইভজির টেস্টিং হতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু নামই পরিবর্তন হচ্ছে, কিন্তু ইন্টারনেট সেবার মান বাড়ছে না। সাধারণ মানুষ এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চান। শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধেই মানুষের এসব অভিযোগ বেশি।”
নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে বলা হচ্ছে, ফাইভজি চালু হলে ইন্টারনেট সেবার মান আরও বাড়বে। আদৌ বাড়বে কি-না সেই প্রশ্নের জবাব নেই। রফিকুল ইসলাম নামে একজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, তিনি গ্রামীণফোনের ৫ টাকা দিয়ে ৫০০ মেগাবাইটের একটি প্যাকেজ নেন। এ প্যাকেজের শর্ত ছিল ৭ দিনের মধ্যে তিনি তিনবার ব্যবহার করতে পারবেন। অথচ শুধু একবার ফেসবুক ব্যবহার করতেই তাকে বলা হচ্ছে তার প্যাকেজ শেষ হয়ে গেছে। কীভাবে শেষ হলো তিনি বুঝতেই পারেননি। আরেকজন গ্রাহক মোমিনুল হক বলেন, তিনি ৮৯ টাকা রিচার্জ করে গ্রামীণফোনের এক জিবির একটা প্যাকেজ নেন। সেখানে শর্ত ছিল এই এক জিবির মেয়াদ হবে ৭ দিন আর বোনাস হিসেবে ফোরজি ইন্টারনেট পাবেন এক জিবি, যার মেয়াদ হবে এক মাস। অথচ তাকে ৫ দিনের মধ্যেই বলা হলো তার সব ইন্টারনেট শেষ। কীভাবে দুই জিবি ইন্টারনেট শেষ হলো তার কোনো জবাব তিনি পাননি। কোনো ধরনের ডাউনলোড বা আপলোডও তিনি করেননি। কিছু মেইল চেক করা, আর ফেসবুক দেখেন তিনি। পাশাপাশি কিছু নিউজ ওয়েবসাইট তিনি দেখেন। এতে কোনোভাবেই ৫ দিনে দুই জিবি ইন্টারনেট শেষ হওয়ার কথা না। মোমিনুল হক বলেন, ‘কী ব্যবহারে, কত ইন্টারনেট কাটছে এসব দেখার তো কোনো সুযোগ নেই। ফলে গ্রামীণফোন ইচ্ছেমতো ইন্টারনেট কেটে নিচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে কার কাছে অভিযোগ করব, কীভাবে প্রতিকার পাবো কিছুই বুঝতে পারছি না।”
আমিনুল ইসলাম নামে আরেকজন গ্রাহক অভিযোগ করেন, ১৬ টাকা রিচার্জ করে দুই দিন মেয়াদে শুধু ফেসবুক দেখতে একজিবি ইন্টারনেট কেনেন। এটা কিনতেই তার একাউন্ট থেকে ৪ টাকা বেশি কেটে নিয়ে গেছে। এরপরও তিনি এই ইন্টারনেট ব্যবহারই করতে পারেননি। এর মধ্যেই দুই দিনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ফলে বাধ্য হয়ে তাকে নতুন প্যাকেজ নিতে হয়েছে। এভাবে প্রতিনিয়তই মানুষকে ঠকাচ্ছে মোবাইল ফোন অপারেটররা। তাদের কাছে অনেকটাই জিম্মি হয়ে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে, বিনিময়ে সেবা মিলছে না। সাজেদুর রহমান নামে আরেকজন গ্রাহক বলেন, ইন্টারনেট প্রিপেইড ভিত্তিতে কিনতে হয়। আগে টাকা পরিশোধ করে তারপর পাওয়া যায় ইন্টারনেট। ব্যবহারের সময় দেখা যাচ্ছে সিগন্যাল ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। আবার মাঝে মধ্যে টুজি হয়ে যাচ্ছে। অথচ টাকা ঠিকই কাটা যাচ্ছে, ব্যবহার করা যাচ্ছে না।”
টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ইত্তেফাককে বলেন, ‘মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে কোন সহযোগিতাই পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, কিন্তু তারা কেয়ার করছে না। ইন্টারনেট সেবার মান দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এখন আমরা পারি তাদের কিছু জরিমানা করে দিতে। সেখানেও বিপত্তি। তারা কোর্টে হাজির হন। সেই মামলার নিষ্পত্তি হতে সময় লাগে। আসলে মোবাইল ফোন অপারেটরদের উপার্জনই যদি শেষ করা হয় তাহলে দিনশেষে রেজাল্ট ভালো হবে না। এই পরিস্থিতিতে আমরা বিকল্প ইন্টারনেটের জন্য ফাইবার অপটিক ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।”
যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তাদের সবারই একই ধরনের অভিযোগ। সাধারণ গ্রাহকরা ইন্টারনেট নিয়ে ভয়াবহ ক্ষুব্ধ। তাদের মতে, ‘ইন্টারনেট নিয়ে এক ধরনের গোলকধাঁধার চক্করে পড়ে গেছেন সাধারণ মানুষ। একটি ফাইল খুলতেই কেটে নিচ্ছে কয়েক মেগাবাইট। আবার বন্ধ করে রাখলেও ইন্টারনেট কমে যাচ্ছে! এই বিভিন্ন রকমের প্যাকেজ আর ইন্টারনেটের নামে টাকা কাটার চক্করে পড়ে গ্রাহকদের কাহিল অবস্থা।”
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসলে গ্রাহকদের সেবা দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত স্পেকট্রাম নেই অপারেটরদের হাতে। মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় যেখানে ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষের জন্য এক মেগাহার্ডজ স্পেকট্রাক ব্যবহার করে সেখানে বাংলাদেশে গ্রামীণফোন ২০ লাখ লোকের জন্য এক মেগাহার্ডজ স্পেকট্রাম ব্যবহার করছে। তাহলে সেবা দেবে কিভাবে। অথচ বিটিআরসির কাছে পর্যাপ্ত স্পেকট্রাম পড়ে আছে।’ মন্ত্রী বলেন, গ্রামীণফোন সর্বশেষ যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে সেখানে তারা লাভের পরিমাণ আগের চেয়েও বেশি দেখিয়েছে। তাহলে নেটওয়ার্কে তারা খরচ করবে না কেন? তিনি বলেন, এমএনপি হয়ে যাক, ফ্লাট কলরেট হয়ে যাবে তারপর দেখব অপারেটররা কে কিভাবে চলছে? তিনি দুঃখের সঙ্গে বলেন, সরকার ইন্টারনেটের উপর ভ্যাট ১০ শতাংশ কমিয়ে দিল, অথচ সাধারণ গ্রাহকরা সেই সুবিধা পাচ্ছে না।”
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, একাধিক প্যাকেজের নামে এক ধরনের বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। তারা এই প্যাকেজগুলো নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছেন। একটা কমিটি করা হয়েছে, যারা প্যাকেজের ধরন দেখে এবং কি ধরনের প্যাকেজ রাখা যায়- সে ব্যাপারে সুপারিশ করবে।”
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কে গ্রাহকের অভিযোগ গ্রহণ ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করা হয়েছে। ডাক, ই-মেইল ও ফোন, ওয়েবসাইট এবং শর্ট কোডে অভিযোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে সর্বশেষ তাদের কাছে যে অভিযোগ এসেছে তার অধিকাংশই ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট, বিশেষ করে মেগাবাইট কেটে নেওয়ার।”
ইন্টারনেট নিয়ে গ্রাহকদের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে কিছুদিন আগে গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে ইত্তেফাককে লিখিত বক্তব্য দেওয়া হয়েছিল। তাদের কাছে তখন প্রশ্ন ছিল- গ্রামীণফোনের এত রকমের প্যাকেজ কেন? জবাবে তারা বলেছিল, গ্রামীণফোনের ইন্টারনেট প্যাকেজ গ্রাহকদের প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। প্রতিটি প্যাকেজই বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে প্রয়োজন ভেদে জনপ্রিয়। বিটিআরসি নির্দেশনা মতে ইন্টারনেট প্যাকেজের মেয়াদ ৩০ দিন থাকার কথা। জিপি কেন ৩০ দিন দিচ্ছে না? জবাবে তারা জানায়, তাদের সকল প্যাকেজ ও এর মেয়াদ বিটিআরসির অনুমোদন সাপেক্ষে বাজারে ছাড়া হয়। ইন্টারনেট ডেটা কোনো কারণ ছাড়াই ফুরিয়ে যাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তাদের দাবি, এ বিষয়ে কারো নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তারা পদক্ষেপ নিতে পারেন।”

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *