সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রবাসে স্বামীকে জিম্মী করে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় দায়েরকৃত দুই মামলার বিচার কার্যক্রম শেষের দিকে। আসামিদের উপস্থিতিতে ধর্ষণ ও অস্ত্র মামলার যুক্তিতর্ক আজ রবিবার (১৬ নভেম্বর) সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যনালে উপস্থাপন হবে।
এরপর আদালত রায়ের দিন ধার্য করবেন। যুক্তিতর্কের সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও আসামীপক্ষের আইনজীবী নিজ নিজ পক্ষে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন। তবে আদালতে এক দিনে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক সম্পন্ন না হলে একাধিক দিনে যুক্তিতর্ক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, আলোচিত এই দুটি মামলায় ইতোমধ্যে ২৪ জন সাক্ষির সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালথ। এরমধ্যে গৃহবধূ, তার স্বামী, আসামিদের স্কীকারোক্তি নেয়া ম্যাজিস্ট্রেট, মামলার তদন্ত কর্মকতা,এমসি কলেজের অধ্যাপক ওসমানী হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকের সাক্ষ্য নিয়েছেন আদালত।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেন সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবুল হোসেন। তিনি জানান, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও অস্ত্র মামলার ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলার যুক্তিতর্ক আজ রবিবার অনুষ্ঠিত হবে। এরপর আদালত এই দুটি মামলার রায়ের তারিখ ধার্য করবেন।
সূত্র জানায়, গ্রেফতারের পর আটজন আসামিকে পর্যায়ক্রমে ৫ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। রিমান্ড শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তারা। জবানবন্দিতে প্রধান আসামি সাইফুর, তারেক, শাহ মাহবুবুর ও অর্জুন লস্কর ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন। রবিউল ও মাহফুজুর ধর্ষণে সহায়তা করার কথা স্বীকার করেন। সন্দেহভাজন দুই আসামিও আদালতে জবানবন্দি দেন। এর আগে ছয় আসামির ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে টেস্টের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। এতে ছাত্রাবাসে তরুণীকে ধর্ষণ করার প্রমাণ মেলে।
ধর্ষণের রাতে এমসি কলেজে ছাত্রাবাসে প্রধান আসামি সাইফুর রহমানের দখলে থাকা কক্ষে অভিযান চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সাইফুরের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করে। এই মামলায় সাইফুরের সঙ্গে পরবর্তী সময়ে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান ওরফে রনিকে আসামি করা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের আট নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করে মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা ও মহানগর পুলিশের শাহপরান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার চান্দাইপাড়ার তাহিদ মিয়ার ছেলে সাইফুর রহমান (২৮), হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বাগুনীপাড়ার শাহ জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার উমেদনগরের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), জকিগঞ্জের আটগ্রামের মৃত অমলেন্দু লস্কর ওরফে কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর (২৬), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুরের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে রবিউল ইসলাম (২৫), কানাইঘাট উপজেলার লামা দলইকান্দির (গাছবাড়ী) সালিক আহমদের ছেলে মাহফুজুর রহমান মাসুমকে (২৫) অভিযুক্ত করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে পুলিশ। এতে ৫২ জনকে সাক্ষী রাখা হয়। ঘটনার মাত্র ২ মাস ৮ দিন পর ১৭ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রটি আদালতে জমা দেওয়া হয়।।

প্রতিনিধি