সিলেটের আলোচিত সাদাপাথর লুটের ঘটনায় চার দিনে প্রায় ৪ লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করেছে যৌথ বাহিনী। আটক করা হয়েছে ছয়জনকে। তবে মামলায় প্রায় দেড় হাজার মানুষকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে আসামি করা নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে—আসল হোতাদের ধরা হচ্ছে না, বরং সাধারণ দিনমজুরদের হয়রানি করা হচ্ছে।
জানা গেছে, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ এবং গোয়াইনঘাটের জাফলংসহ বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে পাথর লুটপাট চলে আসছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এরপর শুরু হয় যৌথ বাহিনীর অভিযান। হাইকোর্টে রিট হয়। লুটেরাদের তালিকাও চান আদালত। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে কয়েক লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার এবং অন্তত ৫০টি নৌকা ধ্বংস করা হয়।ঘটনার তদন্তে গত ১২ আগস্ট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে আরও তিনদিন সময় বাড়ানো হয়েছে। এখন আগামী বুধবার (২০ আগস্ট) তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
কমিটির অন্যতম সদস্য পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের সহকারি পরিচালক আফজালুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, আজ (রবিবার) রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা থাকলেও আমাদের আরও কয়েকদিন সময় প্রয়োজন। সময় বৃদ্ধির আবেদন করায় তা মঞ্জুর হয়েছে এবং আগামী বুধবার আমরা আমাদের প্রতিবেদন জমা দিবো।
এদিকে, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা শাখার অভিযোগ, প্রকৃত লুটেরাদের আইনের আওতায় না এনে প্রশাসন উল্টো শ্রমজীবী মানুষদের হয়রানি করছে। যাদের বিরুদ্ধে এখন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তারা মূলত চুনোপুঁটি, অথচ রাঘববোয়ালরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন।
শনিবার (১৬ আগস্ট) নগরীর কোর্ট পয়েন্টে সমাবেশ থেকে নেতৃবৃন্দ এমন অভিযোগ তোলেন।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অভিযানের নামে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বারকি শ্রমিকদের নৌকা ভেঙে দিয়েছেন। একের পর এক নৌকা ধ্বংস হতে দেখেও অসহায় শ্রমিকরা কিছু করতে পারেননি। এতে তাদের জীবিকার একমাত্র ভরসা নষ্ট হয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, কোম্পানীগঞ্জ থানায় খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক বাদী হয়ে অজ্ঞাত ১ থেকে দেড় হাজার জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। তবে অনেকেই বলছেন, এভাবে অজ্ঞাত হাজারো আসামি দেখিয়ে মূল হোতাদের আড়াল করা হচ্ছে।
সিলেটবাসীর প্রশ্ন ৪ লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার হয়েছে, কিন্তু মূল হোতা কারা? সাদাপাথর খুবলে খাওয়া কালো হাতগুলো এখন কোথায়? তদন্ত প্রতিবেদন পেছানোয় সেই প্রশ্নের উত্তরও আপাতত মিলছে না। তবে সিলেটবাসীর দাবি, প্রকৃত লুটেরাদের চিহ্নিত করে, যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করার।
প্রতিনিধি