গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ ও দেশত্যাগের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থার পতন ঘটে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম রাজনৈতিক পালাবদলের ঘটনা। বছর ঘুরে ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত সেই বিজয়ের দিন ফিরে এসেছে। ছাত্র-জনতার বিজয়ের এই ঐতিহাসিক দিনটিকে অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ দিন জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সরকারি চাকরিতে কোটা বহাল রাখার প্রতিবাদে গত বছরের জুলাই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। ক্রমেই তা দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। কোটা না মেধা স্লোগানে শুরু হওয়া এই আন্দোলন দমন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সমর্থকরা আন্দোলনকারীদের ওপর আঘাত হানে।
আন্দোলনে অংশ নিয়ে গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। সেই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। দ্রুতই তা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা করেন তখনকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। ওই দিন সেনা কর্মকর্তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তারা ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালাতে পারবেন না।
পরদিন, ৪ আগস্ট অসহযোগ আন্দোলনের দিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা বাড়তে থাকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ৬ আগস্ট ঘোষিত “মার্চ টু ঢাকা” কর্মসূচি এগিয়ে ৫ আগস্টে আনা হয়। ওই দিন সকাল থেকেই রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে ব্যারিকেড দেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
৫ আগস্ট কারফিউ উপেক্ষা করে বেলা ১১টার পর থেকে ঢাকার পথে ঢল নামে মানুষের। কারফিউ ভঙ্গ করে বিভিন্ন স্থান থেকে আসতে শুরু করেন তারা। একপর্যায়ে শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। দুপুরে গণমাধ্যমে খবর পাঠানো হয়, জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন সেনাপ্রধান। এরই মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে দেশ ছেড়েছেন বলে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি ব্রেকিং নিউজ হিসেবে প্রচার করে। বেলা ৩টা, সেনাপ্রধানের ভাষণের অপেক্ষা না করে মুক্তির আনন্দে বেরিয়ে পড়ে দেশের মানুষ।
প্রতিনিধি