ইরান ক্লাস্টার বোমা বহনকারী ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষে এ দাবি করা হয় বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদেনে বলা হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, ইরান ইসরায়েলে অন্তত একটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে যাতে ক্লাস্টার বোমা ছিল। এর লক্ষ্য হলো বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। সংঘাত শুরুর পর ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার হয়েছে এবারই প্রথম।
ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তারা আর কোনো তথ্য দেননি এ দাবি নিয়ে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রের ওয়ারহেডটি প্রায় ৪ মাইল উচ্চতায় বিভক্ত হয়ে মধ্য ইসরায়েলের প্রায় ৫ মাইল জুড়ে অন্তত ২০টি আঘাত করেছে।
ভয়াবহতা বিবেচনায় বিশ্বের অনেক দেশেই ক্লাস্টার বোমার ব্যবহার নিষিদ্ধ। ক্লাস্টার বোমা ফেটে গিয়ে আরও অনেক ছোট ছোট বোমা বেরিয়ে বিরাট এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটায়।
টাইমস অফ ইসরায়েলের সামরিক সংবাদদাতা ইমানুয়েল ফ্যাবিয়ান জানিয়েছেন, মধ্য ইসরায়েলি শহর আজোরের একটি বাড়িতে ছোট একটি বোমা আঘাত করেছে, যার ফলে কিছু ক্ষতি হয়েছে। বোমা থেকে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
রয়টার্স লিখেছে, ক্লাস্টার বোমা বিতর্কিত, কারণ এগুলো নির্বিচারে বোমা ছোড়ে। কখনো কখনো বিস্ফোরণ ব্যর্থ হতে পারে, তবে এক পর্যায়ে তা বিস্ফোরিত হয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অবিস্ফোরিত বোমার বিপদ সম্পর্কে জনসাধারণের সতর্কীকরণ হিসেবে একটি চিত্র প্রকাশ করেছে।
ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডিফ্রিন ব্রিফিংয়ে বলেন, সন্ত্রাসী শাসকগোষ্ঠী বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি করতে চায় এবং এমনকি ক্ষতির পরিধি সর্বাধিক করার জন্য ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া অস্ত্র ব্যবহার করছে।
জাতিসংঘে ইরানের মিশন এবং ওয়াশিংটনে ইসরায়েলের দূতাবাস তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধের জবাব দেয়নি।
অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সমিতির অ্যাডভোকেসি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ড্যারিল কিমবল বলেন, এগুলো ভয়াবহ অস্ত্র যা দিয়ে বিস্তৃত এলাকা ধ্বংস করা যায়। বিশেষ করে যদি এটি একটি বেসামরিক জনবহুল এলাকায় ব্যবহার করা হয়।
ইরান এবং ইসরায়েল ২০০৮ সালে ১১১টি দেশ এবং ১২টি অন্যান্য সংস্থার দ্বারা স্বাক্ষরিত ক্লাস্টার বোমার উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর এবং ব্যবহারের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ২০২৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ান দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ইউক্রেনকে ক্লাস্টার বোমা সরবরাহ করে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়।
গত ১৩ জুন ভোররাতে ইরানে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েলি পক্ষে বলা হয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে ইসরায়েল ও এর বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্রসহ ড্রোন হামলার আশঙ্কা থেকে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় আগাম প্রতিরোধমূলক হামলা চালানো হয়েছে।
ওই হামলা এখনো অব্যাহত রয়েছে। জবাবে ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইরানও। সংঘাত শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ইরানে অন্তত ৬৩৯ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস। ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ২৪।