এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা

আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ ঘোষণা দেন তিনি।
ভাষণের শুরুতে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, ছাত্র-ছাত্রী, বয়স্ক, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সবাইকে সালাম জানান প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি জানি, আগামী জাতীয় নির্বাচন কখন হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানার জন্য রাজনৈতিক দল ও জনগণের মধ্যে বিপুল আগ্রহ রয়েছে। আমি বারবার বলেছি, এই নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এ সময়ের মধ্যে দেশে নির্বাচন উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যা যা করা দরকার, সরকার তাই করছে।
তিনি আরও বলেন, এখানে মনে রাখা জরুরি, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে যতবার গভীর সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে তার সবগুলোরই প্রধান কারণ ছিল ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন। ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বারবার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার মধ্য দিয়ে একটি রাজনৈতিক দল বর্বর ফ্যাসিস্টে পরিণত হয়েছিল। এ ধরনের নির্বাচন যারা আয়োজন করে তারা জাতির কাছে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যায়। এমন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে দল ক্ষমতায় আসে তারাও জনগণের কাছে ঘৃণিত হয়ে থাকে।
ড. ইউনূস বলেন, এ সরকারের একটি বড় দায়িত্ব হলো একটি পরিচ্ছন্ন, উৎসবমুখর, শান্তিপূর্ণ, বিপুলভাবে অংশগ্রহণের পরিবেশে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এমন একটি নির্বাচন আয়োজন করা যাতে করে দেশ ভবিষ্যতে নতুন সংকটে না পড়ে। এজন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার। যেই প্রতিষ্ঠানগুলো নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত সেগুলোতে যদি সুশাসন নিশ্চিত করা না যায় তাহলে ছাত্র-জনতার সকল আত্মত্যাগ বিফলে যাবে।
তিনি বলেন, সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন এই তিনটি ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলাম। সে বিবেচনায় আগামী রোজার ঈদের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য জায়গায় পৌঁছাতে পারব বলে বিশ্বাস করি। বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার যা কি না জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি আমাদের সম্মিলিত দায় সে বিষয়ে আমরা দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে পারব।
প্রধান উপদেষ্টা বলেনষ্টা বলেন, এতে আমাদের ওপর আপনাদের অর্পিত ম্যান্ডেট ন্যূনতম হলেও বাস্তবায়ন করে যেতে পারব। সে বিবেচনায় ও ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য সকল পক্ষের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। পাশাপাশি, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন সংক্রান্ত চলমান সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করে আমি আজ দেশবাসীর কাছে ঘোষণা করছি যে আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত সময়ে আপনাদের কাছে নির্বাচনের বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রদান করবে।
তিনি বলেন, আমরা এমন নির্বাচন চাই যা দেখে অভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মা তৃপ্তি পাবে, তাদের আত্মা শান্তি পাবে। আমরা চাই আগামী নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোটার, সবচেয়ে বেশি প্রার্থী ও দল অংশ নিক। এটা সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবে জাতির কাছে স্মরণীয় থাকুক।
চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে তুলে দিলে ‘নিরাপত্তা হুমকি তৈরি হবে না’ দাবি করে বিরোধিতাকারীদের ‘প্রতিহত’ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “বন্দর ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা যাদের আনছি তারা পৃথিবীর যে-সব দেশে কাজ করে সেসব কোনো দেশেরই সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েনি। আমি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাই আপনারা নিজেদেরকে ভিত্তিহীন বিরোধিতা এবং অপপ্রচারের শিকার হতে দেবেন না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বন্দর ব্যবস্থাপনার উদ্যোগে আপনাদের দৃঢ় সমর্থন অব্যাহত রাখুন। যারা বিরোধিতা করছে তাদের প্রতিহত করুন।
তিনি বলেন, আমরা চাই, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক। এ কারণে বিনিয়োগ পরিষেবার উন্নয়নের পাশাপাশি বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছি।
এটা করা সম্ভব না হলে দেশের কোটি কোটি মানুষের বেকারত্ব ঘুচবে না। অর্থনৈতিক সংকট রয়েই যাবে।”
সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশি ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার খবরে এ নিয়ে বির্তক তৈরি হয়েছে।
বিদেশিদের হাতে বন্দর ছেড়ে দিলে দেশের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অর্থনীতির বিশ্লেষকদের কেউ কেউ এ উদ্যোগের বিরুদ্ধে মত দিচ্ছেন।
শ্রমিক সংগঠন চট্টগ্রামে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে দেওয়া নিয়ে সেনাপ্রধানের পক্ষ থেকেও কথা এসেছে। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক সরকারের মাধ্যমে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত; এখানে স্থানীয় মানুষ ও রাজনৈতিক নেতাদের মতামত প্রয়োজন হবে।
২৫ মে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার ব্যবস্থাপনার বিষয়ে তিন দেশের তিন কোম্পানির সঙ্গে সরকারের আলোচনা চলার কথা বলেছেন।
পুঁজিবাজারভিত্তিক সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দরে আমরা গভীর সংস্কার করতে চাচ্ছি। আমরা চাচ্ছি যেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় কোম্পানি বন্দর ব্যবস্থাপনা করতে পারে।
এজন্য আমরা বিদেশের সবচেয়ে বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে কথা বলছি। দুবাই পোর্ট ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে কথা বলছি; এপি মুলার মার্কসের সঙ্গে কথা বলছি এবং পোর্ট অব সিঙ্গাপুর অথরিটির সঙ্গে কথা বলছি। ফলে যেটা হবে, ওরা যদি ম্যানেজ করেন, তাহলে আমাদের বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে।
প্রায় ৪০ মিনিটের ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে অনেকের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। মাঝেমাঝে এমন কথাও শুনেছি যে এ বন্দর বিদেশিদেরকে নাকি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আমি আগেও জানিয়েছি, চট্টগ্রাম বন্দর হলো বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। বর্তমানে এই হৃৎপিণ্ড অতি দুর্বল। এখন যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় তাকে রেখে দিলে আমাদের অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।
চট্টগ্রাম বন্দরকে শক্তিশালী করার জন্য অভিজ্ঞদের সাহায্য লাগবে দাবি করেন মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি তারা বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের সেরা, সবচেয়ে অভিজ্ঞ। তারা ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকাসহ বিশ্বজুড়ে বন্দর পরিচালনা করে।
তাদের কাজ বন্দর ব্যবস্থাপনা করা, আমাদের লক্ষ্য হলো বন্দর ব্যবস্থাপনার কাজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের কাছ থেকে শিখে নেওয়া।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, যদি ৩১ সালের মধ্যে আমরা বন্দরের কাজ শিখে ফেলি এর পরবর্তী ৫ বছরে অর্থাৎ ৩৬ সালের মধ্যে পৃথিবীর যত দেশে যত বন্দর এই কোম্পানিগুলো চালায় তাদের বহু বন্দর এই বাংলাদেশিরাই পরিচালনা করবে।
আপনারা যে বন্দরেই পা দেবেন, দেখবেন সেখানে বাংলাদেশিরা আছেন। বহু লোকের কর্মসংস্থান হবে। বহু লোকের ওপরে ওঠার সুযোগ হবে। তাদের নিজেদের প্রয়োজনেই তারা আমাদের চাকরি দেবে।”
নিজের জাহাজে চড়ার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আগে যেকোনো জাহাজে চড়লে দেখতেন জাহাজের নাবিক চট্টগ্রামের কিংবা সিলেটের।
বন্দরের কাজ একবার শিখে নিতে পারলে ভবিষ্যতে আমরা যে বন্দরে যাব না কেন দেখব সেখানে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, সিলেট আর বরিশালের লোক। বাংলাদেশের লোক।
বন্দর আধুনিক হলে তা শুধু বাংলাদেশের অথর্নীতিতেই ভূমিকা রাখবেন না, বরং আমরা নেপাল, ভূটানসহ পাশের সকল দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ‘ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে’ বলে দাবি করেন তিনি।
এই বন্দরই এ অঞ্চলের অর্থনীতির সমৃদ্ধির ‘চাবিকাঠি’ দাবি করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কুমিরা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত নানা বন্দরের কর্মচাঞ্চল্যে সমগ্র উপকূল অঞ্চল দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
এই পুরো অঞ্চলে অনেকগুলো শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠবে শুধু সমুদ্রের সান্নিধ্য এবং তার ব্যবহারের দক্ষতার কারণে। তার সঙ্গে গড়ে উঠবে আরেকটি নতুন শিল্প।
আধুনিক পদ্ধতিতে সমুদ্রে মাছ পালন, আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের শিল্প। এটি আরেকটি নতুন জগত সৃষ্টি করবে। এ ব্যাপারে আমরা আমাদের বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি এবং তারা উৎসাহ সহকারে সাড়া দিয়েছেন।
মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়ার খবরকে ‘সর্বৈব মিথ্যা’ ও ‘চিলে কান নিয়ে যাওয়ার’ গল্প হিসেবে অভিহিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব গত মার্চে ঢাকা সফরকালে রাখাইনের মানবিক বিপর্যয় মোকাবেলায় একটি ত্রাণ চ্যানেলের প্রস্তাব করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, প্রস্তাবটি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহায়ক হবে। বিষয়টি প্রস্তাব পর্যায়েই রয়ে গেছে।”
ইউনূস বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি, রাখাইনের জন্য বাংলাদেশ করিডোর দিয়ে দিয়েছে বলে একটা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমি সুস্পষ্টভাবে বলছি, এটি সর্বৈব মিথ্যা। এটা চিলে কান নিয়ে যাওয়ার গল্প।
যারা অসত্য কল্পকাহিনী বানিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ক্রমাগত বিভ্রান্ত করে অশান্তি সৃষ্টিতে নিয়োজিত, এটা তাদেরই শিল্পকর্ম। আপনারা এ বিষয়ে হুঁশিয়ার থাকবেন। কোনোভাবেই বিভ্রান্ত হবেন না। এসব অপপ্রচারের পরেও আমরা লক্ষ্যচ্যুত হব না। এই জটিল সমস্যা সমাধানে আমাদের কাজ চালিয়ে যাব।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আপনারা জানেন, আমাদের দেশে এখন ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা এসেছে ২০২৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর সময়কালে, যখন রাখাইন রাজ্যে ব্যাপক যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছিল।
সেখানে চলমান সংঘাত ও মানবিক পরিস্থিতির কারণে এখনো অনেকে আসতে চেষ্টা করছেন। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসা বন্ধ করতে এবং যারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন, তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলাম, তখন রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে প্রায় মৃত অবস্থায় পেয়েছিলাম। আন্তর্জাতিক এজেন্ডা থেকে ইস্যুটি ঝরে পড়েছিল। সেই অবস্থা থেকে আমরা ইস্যুটিকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টিতে নিয়ে আসতে পেরেছি।
আমি গত বছর সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গা বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছিলাম। আপনারা জেনে খুশি হবেন, জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্র এ বিষয়ে একমত হয়েছে এবং তারা একটি উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বছর সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে।
ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আমরা আন্তর্জাতিক জনমত গঠন করতে পেরেছি। গত মার্চ মাসে বাংলাদেশ সফরে এসে জাতিসংঘের মহাসচিব এনতোনিও গুতেরেজ পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করেছেন যে, মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান।
প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আরেকটি বড় অগ্রগতি হচ্ছে মিয়ানমার সরকার কর্তৃক প্রত্যাবাসনযোগ্য রোহিঙ্গাদের সর্বপ্রথম তালিকার ঘোষণা। গত এপ্রিলে ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে আলোচনার সময় মিয়ানমার সরকার প্রথমবারের মতো ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনযোগ্য বলে ঘোষণা করেছে।”
মিয়ানমারের সরকারসহ সেখানকার বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে ঢাকার আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা যত দেশেই সফর করেছি, সব দেশে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয় নেতা ও সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছি, তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। তারাও ইতিবাচকভাবে আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন।
জাতিসংঘ মহাসচিবের ঢাকা সফরের পর গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের ‘মানবিক সহায়তা চ্যানেল’ বিষয়ে প্রথম ধারণা দেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান।
সেদিন তিনি বলেন, আরাকান আর্মি, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মিয়ানমার সরকার- সবার সঙ্গে আলোচনা করেই জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে গিয়েছিলেন তিনি।
তাকে আমরা বলেছি, রাখাইনে যে মানবিক সমস্যা, যে সংকট, সেটা মোকাবেলার জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্যের বিকল্প নাই। সেই কাজটি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেই হবে।
তার ওই বক্তব্যের প্রায় তিন সপ্তাহ পর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘মানবিক প্যাসেজ’ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে।
তার ওই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক তৈরি হয়। কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে কিনা, সেই প্রশ্ন তোলে রাজনৈতিক দলগুলো।
মানিবক করিডর নিয়ে বক্তব্য আসে সেনা সদর থেকেও। বলা হয়, “জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো বিষয়ে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হবে না। করিডর নিয়ে সমালোচনা তীব্র হতে থাকলে গত ২১ মে সংবাদ সম্মেলনে আসেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান।
সেদিন তিনি বলেন, আমি জানি, মিয়ানমারে জাতিসংঘের সাহায্য নিয়ে বাংলাদেশের একটা করিডোর দেওয়ার যে গুজবটা উঠেছে, আমি দ্ব্যার্থহীন ভাষায় বলে দিচ্ছি, করিডোর নিয়ে আমাদের সঙ্গে কারো কোনো কথা হয় নাই। এবং তাদের সঙ্গে কথা হবে না।
তিনি বলেন, আমি জাতির পক্ষ থেকে সকল রেমিটেন্স যোদ্ধাকে কৃতজ্ঞতা জানাই। প্রবাসীদের সরকারি সেবা পেতে যেসব ভোগান্তি পোহাতে হয়, তা দূর করতে সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বসবাসরত শহরগুলোতে বেসরকারি উদ্যোগে নাগরিক সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এসব কেন্দ্র থেকে প্রবাসীরা পাসপোর্ট নবায়ন, জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেবা পাবেন।
তিনি বলেন, এগুলো কঠিন কাজ, কারণ দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবস্থা জটিল করে রাখা হয়েছে। তবে এখন সরকারের ভেতরে সাহসী এবং উদ্যোগী কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় আমরা এটি বাস্তবায়নের জন্য বদ্ধপরিকর।
অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্যে তিনি বলেন, এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় দেশের অর্থনীতি ছিল ভয়াবহ অবস্থায়। ১৬ বছরের লাগামহীন লুটপাটে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশেও বিরল। তবে এখন দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং জনগণের আমানত নিরাপদ।
তিনি আরও জানান, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও এখন ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আগের সরকার রিজার্ভের দুরবস্থার কারণে বিদেশি ব্যবসায়ীদের আয় পাঠাতে দিচ্ছিল না, যা এখন ঠিক করা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই বাজেট জনকল্যাণমূলক এবং মানুষের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এটি আগের বছরের চেয়ে ছোট বাজেট হলেও এতে ভৌত অবকাঠামোর পরিবর্তে সামগ্রিক উন্নয়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
তিনি রপ্তানি ও রেমিটেন্স বৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, অর্থনীতির দুঃসময়ে প্রবাসীরা এগিয়ে এসেছেন। তাদের পাঠানো রেমিটেন্স উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আমি আবারও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
Leave a comment
এই বিভাগের আরো সংবাদ

এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা
আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেনবিস্তারিত

কালুরঘাট সেতুতে ট্রেন দুর্ঘটনা: ৪ রেলকর্মী বরখাস্ত, তদন্ত কমিটি গঠন
চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুর ওপর কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী পর্যটন এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় বেশ কয়েকটিবিস্তারিত