Main Menu

পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিয়েছেন বিশ্বনেতারাসহ হাজারো মানুষ

রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসকে শেষ বিদায় জানাতে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং হাজারো শোকাহত মানুষ। ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) পোপ ফ্রান্সিসকে শেষ বিদায় জানানো হয়। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে এক কার্ডিনাল বলেন, অভিবাসী, নিপীড়িত জনগণ এবং পরিবেশের প্রতি পোপের যত্নের ঐতিহ্য যেন তার মৃত্যুর সঙ্গে মরে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারের বিশাল প্রাঙ্গণে ফ্রান্সিসের কফিনের এক পাশে বসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্ব নেতারা। অন্য পাশে বসেছিলেন কার্ডিনালরা। সমবেত ভক্তরা পিনপতন নীরবতায় অপেক্ষা করছিলেন।

এর আগে ভ্যাটিকানের স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় (বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা) শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে পোপ ফ্রান্সিসের কফিন নিয়ে আসা হয়। উপস্থিত জনতা তখন নীরবতা ভেঙে করতালি দেন।

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পরিচালনাকারী ইতালীয় কার্ডিনাল জিওভান্নি বাত্তিস্ত রে বলেন, মানবিক উষ্ণতায় পরিপূর্ণ এবং আজকের চ্যালেঞ্জগুলোর প্রতি গভীরভাবে সংবেদনশীল পোপ ফ্রান্সিস সত্যিই এই সময়ের উদ্বেগ, দুর্ভোগ এবং আশা ভাগ করে নিয়েছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই যখন ১৪ জন সাদা গ্লাভস পরা বাহক একটি বড় ক্রুশ খোদাই করা কফিন সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা থেকে বের করে স্কোয়ারে নিয়ে আসে, তখনও করতালির ঝড় ওঠে।

ভ্যাটিকানের উপরিভাগ থেকে দেখা যায় রঙের এক মোজাইক – বিশ্বনেতাদের কালো পোশাক, প্রায় ২৫০ জন কার্ডিনালের লাল পোশাক, প্রায় ৪০০ জন বিশপের বেগুনি পোশাক এবং ৪০০০ পুরোহিতের সাদা পোশাক।

কয়েকটি ভাষায় – ইতালীয়, স্প্যানিশ, চীনা, পর্তুগিজ ও আরবিতে – প্রার্থনা করা হয় এবং কোরাস দল লাতিন স্তোত্র গান পরিবেশন করে, যা ১৪ লাখ সদস্যবিশিষ্ট রোমান ক্যাথলিক চার্চের বৈশ্বিক বিস্তৃতি প্রদর্শন করে।

বিশ্বাসীরা রাত থেকেই সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে আসতে শুরু করে এবং অনেকে সামনের সারিতে জায়গা নিশ্চিত করতে রাত জেগে ক্যাম্প করে। ভ্যাটিকানের হিসাব মতে, অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রায় ২ লাখ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া গত তিন দিনে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ তাঁর দেহের সামনে দিয়ে হেঁটে গিয়েছে। এসময় তার দেহ খোলা কফিনে বিশাল ষোড়শ শতাব্দীর ব্যাসিলিকার বেদীর সামনে রাখা ছিল।

ট্রাম্প ও তাঁর স্ত্রী মেলানিয়া নিজেদের আসন গ্রহণের আগে সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় ফ্রান্সিসের কফিনের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। শুক্রবার রাতে কফিন সিল করে বন্ধ করা হয

রোমে পৌঁছানো অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে ছিলেন আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, গ্যাবন, জার্মানি, ফিলিপাইন এবং পোল্যান্ডের রাষ্ট্রপতিরা, ব্রিটেন ও নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী, এবং স্পেনের রাজা-রানিসহ অনেক রাজপরিবারের সদস্য। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি উপস্থিত হলে স্কোয়ারে করতালি পড়ে।

গত প্রায় ১৩ শতাব্দীর মধ্যে প্রথম অ-ইউরোপীয় পোপ ফ্রান্সিস রোমান ক্যাথলিক চার্চকে পুনর্গঠনের জন্য সংগ্রাম করেছিলেন, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন এবং ধনী দেশগুলোকে অভিবাসীদের সহায়তা ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আহ্বান জানিয়েছিলেন।

পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ভ্যাটিকানের নয় দিনের আনুষ্ঠানিক শোককাল শুরু হয়েছে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানকে ঘিরে ইতালি ও ভ্যাটিকান সিটির কর্তৃপক্ষ বড় ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। অনুষ্ঠানস্থলে নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করা হয়েছে, যুদ্ধবিমান প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং ছোট নগররাষ্ট্রটির বিভিন্ন ভবনের ছাদে স্নাইপার মোতায়েন করা হয়েছে। জন পল দ্বিতীয়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর ইতালি ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

আর্জেন্টিনার বংশোদ্ভূত পোপ ফ্রান্সিস গত সোমবার ৮৮ বছর বয়সে মারা যান। তিনি ১২ বছর ধরে পোপের দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সময় গির্জাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক পথে পরিচালিত করার লক্ষ্যে কাজ করেছেন ফ্রান্সিস।

Leave a comment






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *