Main Menu

রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনে যুদ্ধ করা সেই বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু

রাশিয়ার সেনাবাহিনীর চুক্তিভিত্তিক সদস্য হিসেবে ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে গিয়ে মিসাইলের আঘাতে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার যুবক ইয়াসিন মিয়া শেখ (২২) মারা গেছেন।

ঈদের পরদিন মঙ্গলবার তার মৃত্যুর খবর পেয়েছে পরিবার। যুদ্ধ চলাকালে মিসাইল হামলায় তিনি প্রাণ হারান বলে জানিয়েছেন রাশিয়ায় থাকা তার পরিচিতজনরা। নিহত ইয়াসিন শেখের পরিবার জানিয়েছে, রাশিয়ায় থাকা তার বন্ধু মেহেদী হাসান মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়েছেন। ২৭ মার্চ ইয়াসিন মারা গেলেও ঈদের পরদিন পরিবার সেটি জানতে পেরেছেন তারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের মরিচালি গ্রামে ইয়াসিনের মা ও ব্যবসায়ী বড় ভাই রুহুল আমিন বসবাস করেন। তার বাবার নাম আব্দুস সাত্তার। তিনি ২০১৬ সালের ১ মার্চ মারা যান। তার চার সন্তানের মধ্যে দুজন আগেই মারা গেছেন। এখন ইয়াসিনের মৃত্যুর খবরে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। তার গ্রামের মানুষও শোকগ্রস্ত। তারা মরদেহ ফিরিয়ে আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ইয়াসিনের বাড়িতে গেলে স্বজনরা জানান, ইয়াসিনের বাবা মারা গেছেন ২০১৬ সালে। বড় ভাই তার পড়াশোনা ও বিদেশযাত্রার খরচ দিয়েছেন। ৪০ শতক জমি বিক্রি করে ১৫ লাখ টাকা দিয়ে গত বছরের ২২ আগস্ট রাশিয়ায় যান ইয়াসিন। সেখানে রাশিয়ার একটি কোম্পানিতে চাকরি করতে যান। পরে অনলাইনে আবেদন করে গত ২২ ডিসেম্বর চুক্তিভিত্তিক যোদ্ধা হিসেবে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। প্রশিক্ষণের পর ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেন। রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়ার ছবি ও ভিডিও নিজের ফেসবুকে প্রকাশ করতেন ইয়াসিন। গত ১ মার্চ ফেসবুকে বাবার মৃত্যুবার্ষিকীতে একটি ভিডিও আপলোড করেন। ভিডিওতে রাশিয়ায় যাওয়া, সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া ও তার স্বপ্নপূরণ নিয়ে কথা বলেন তিনি।

সাবেক ছাত্রদল কর্মী ইয়াসিন ভিডিওতে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিচারণা করেন এবং তার রাজনৈতিক সহকর্মীদের জন্য দোয়া চান। সরকারবিরোধী আন্দোলনের সাহস তাকে ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দেওয়ার মনোবল তৈরি করেছে বলে উল্লেখ করেন। যুদ্ধে মারা গেলে তার আফসোস থাকবে না বলেও উল্লেখ করেন। ওই ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করার মাস পেরোনোর আগেই যুদ্ধে নিহত হন তিনি।

ইয়াসিনের চাচাতো ভাই রফিকুল ইসলাম বলেন, রাশিয়ায় যাওয়ার জন্য ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে রাশিয়ার ভাষা শেখে ইয়াসিন। পরে বন্ধুর সহায়তায় রাশিয়ায় একটি কোম্পানিতে ভালো চাকরি পায়। সবই ঠিকঠাক চলছিল। পরে রাশিয়ার সেনাবাহিনী যোগ দিয়ে সব উলটপালট হয়ে যায়। রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার সময় ইয়াসিনের মা ও বড় ভাইকে ঢাকায় নিয়ে অনাপত্তিপত্রে স্বাক্ষর নেয় রাশিয়া পাঠানো এজেন্সির লোকজন।

গৌরীপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আহাম্মদ তায়েবুর রহমান বলেন, শ্রম চুক্তিতে ইয়াসিন রাশিয়ায় যাওয়ার পর কাজ বাদ দিয়ে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু যুদ্ধে মারা গেছেন। সেখানে থাকা তার সহযোদ্ধারা জানিয়েছেন, তার দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। লাশ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। পরিবারটি যাতে ক্ষতিপূরণ পায়, সে জন্য সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।

বিকালে গৌরীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার সুনন্দা সরকার প্রমা নিহত ইয়াসিনের বাড়িতে যান। তিনি বলেন, পরিবারকে আবেদন করতে বলা হয়েছে। আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সেই আবেদন পাঠিয়ে ইয়াসিনের মরদেহ দেশে ফেরত আনাসহ অন্যান্য কার্যক্রমে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজ্জাদুল হাসান বলেন, বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এ ব্যাপারে সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.