Main Menu

এবারও বিশ্বজুড়ে নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস

কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের প্রতিবাদে এবং ন্যায়সংগত দাবি আদায়ে রাজপথে নেমেছিলেন নারী শ্রমিকেরা। এই শ্রম আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ পথপরিক্রমায় চালু হয় ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’।

গত শতকের সত্তরের দশকের মাঝামাঝি দিবসটি জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায়। এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ বিশ্বরূপ পায়।

‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ এখন নারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিকসহ সব ধরনের অর্জন উদ্‌যাপনের একটি বৈশ্বিক দিন। একই সঙ্গে দিবসটি লৈঙ্গিক সমতার বিষয়টিও তুলে ধরে। নারীর উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে আরও এগিয়ে নিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের ডাক দেয়।

কোন পটভূমিতে কোন পথ ধরে দিবসটি এল, প্রথম কবে–কোথায় কীভাবে দিবসটি পালিত হলো, তা জানতে আমাদের ফিরে তাকাতে হবে দূর অতীতে।

১৭৭৬ সালের ৩১ মার্চ অ্যাবিগেল স্মিথ অ্যাডামস ‘রিমেমবার দ্য লেডিস’ শিরোনামে একটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে স্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন আইনের খসড়া তৈরির সময় নারীদের অধিকার ও সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করতে কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

একই বছরের ৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। অ্যাবিগেল স্মিথ পরবর্তীকালে মার্কিন ফার্স্ট লেডি (১৭৯৭-১৮০১) হন। তাঁর স্বামী জন অ্যাডামস যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

১৭৯২ সালে ইংরেজ লেখক মেরি ওলস্টোনক্র্যাফ্ট তাঁর ‘আ ভিনডিকেশন অব দ্য রাইটস অব উইমেন’ শীর্ষক বইয়ে নারীদের শিক্ষাগত ও সামাজিক সমতার পক্ষে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেন।

নিউইয়র্কে ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ প্রথমবারের মতো ধর্মঘট পালন করেন নারী টেক্সটাইলকর্মীরা। এই কর্মসূচির মাধ্যমে তাঁরা মজুরি বৈষম্য ও বৈরী কর্মপরিবেশের প্রতিবাদ জানান। সম-অধিকারের পাশাপাশি কম কর্মঘণ্টা ও উপযুক্ত মজুরি দাবি করেন তাঁরা।

১৯০৮ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্ক শহরের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখান প্রায় ১৫ হাজার নারী শ্রমিক। তাঁরা শিশুশ্রম ও বৈরী কর্মপরিবেশের প্রতিবাদ জানান। কর্মঘণ্টা কমানো, বেতন বাড়ানো ও ভোটাধিকার দাবি করেন তাঁরা। এই আন্দোলন নারীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার একটি বড় নজির তৈরি করে।

প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন

সোশ্যালিস্ট পার্টি অব আমেরিকার উইমেন্স ন্যাশনাল কমিটির প্রধান থেরেসা মালকিয়েল ১৯০৯ সালে একটি জাতীয় নারী দিবসের ধারণা দেন যা দলটি অনুমোদন করে।

দলীয় ঘোষণা অনুযায়ী, ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে প্রথমবারের মতো ‘জাতীয় নারী দিবস’ পালিত হয়। দিবসটির আয়োজক ছিল সোশ্যালিস্ট পার্টি অব আমেরিকা।

১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে ‘সেকেন্ড ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট উইমেন্স কনফারেন্স’ হয়। এই সম্মেলনে জার্মানির সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির উইমেন্স অফিসের নেতা ক্লারা জেটকিন একটি বার্ষিক ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ চালুর ধারণা উপস্থাপন করেন।

লারা জেটকিন প্রস্তাব দেন যে প্রতিবছর প্রতিটি দেশে একই দিনে দিবসটি পালন করা উচিত। এই দিবসে নারীরা নিজেদের দাবি জানাবেন।

তবে ক্লারা জেটকিন তাঁর প্রস্তাবে দিবসটি বিশ্বজুড়ে পালনের ক্ষেত্রে কোনো সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ উল্লেখ করেননি। সম্মেলনে ১৭টি দেশের শতাধিক নারী অংশ নেন। তাঁরা সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাবটি সমর্থন করেন।

কোপেনহেগেন সম্মেলনের সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় ১৯১১ সালের ১৯ মার্চ ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া, জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডে প্রথমবারের মতো ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ পালিত হয়।

ইউরোপজুড়ে ১০ লাখের বেশি মানুষ (নারী-পুরুষ) প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবসের র‍্যালি-সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন। তাঁরা নারীর কাজের অধিকার, ভোটের অধিকার, প্রশিক্ষণের অধিকার, সরকারি ও রাষ্ট্রীয় পদে দায়িত্ব পালনের অধিকার দাবি করেন। তাঁরা নানামুখী বৈষম্য বিলোপের দাবি তোলেন।

প্রাথমিক পর্যায়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের ক্ষেত্রে কোনো সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ ছিল না। তবে সাধারণত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে বা মার্চের শুরুর দিকে দিবসটি পালিত হতো। পরে অবশ্য ৮ মার্চ নির্ধারিত হয়।

১৯১৩ সালে রুশ সাম্রাজ্যে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে দিনটি ছিল ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি)। আর গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে তা ৮ মার্চ।

জার্মানিতে ১৯১৪ সালের ৮ মার্চ প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়। একই দিন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে নারীদের ভোটাধিকারের সমর্থনে বো থেকে ট্রাফালগার স্কয়ার পর্যন্ত একটি পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মধ্যে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ১৯১৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি (গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে ৮ মার্চ) রুশ নারী টেক্সটাইলকর্মীরা ‘রুটি ও শান্তি’র দাবিতে ধর্মঘট-বিক্ষোভ শুরু করেন, যা ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের সূত্রপাত ঘটায়। চার দিন ধরে চলা আন্দোলনে জার শাসনের অবসান ঘটে।

রুশ বিপ্লবে নারীদের ভূমিকার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিপ্লবের মহানায়ক ভ্লাদিমির লেনিন ১৯২২ সালে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস ঘোষণা করেন। দিনটিতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন তিনি।

একই বছর চীনে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়। আর ১৯৪৯ সালে দেশটির কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালকে ‘আন্তর্জাতিক নারী বর্ষ’ ঘোষণা করে। একই বছর বিশ্ব সংস্থাটি প্রথমবারের মতো ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করে।

দুই বছর পর ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে দিবসটি আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক রূপ পায়।

জাতিসংঘ প্রথমবার এই দিবসের একটা প্রতিপাদ্য ঠিক করে ১৯৯৬ সালে। জাতিসংঘ সে বছর ‘অতীত উদ্‌যাপন, ভবিষ্যৎ ঘিরে পরিকল্পনা’ প্রতিপাদ্যে দিবসটি পালন করে।

২০১১ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ১০০ বছর পূর্তি হয়েছে। আর ২০২৫ সালে দিবসটির ১১৪ বছর পূর্ণ হচ্ছে। এবার জাতিসংঘ দিবসটির যে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে, তার বাংলা করা হয়েছে: ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন/নারী ও কন্যার উন্নয়ন’।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, ইউএন, ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্সডে ডটকম

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.