সিলেট নগরীর গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ও ফুটপাত ফের হকারদের দখলে। গত কয়েকদিন পুর্বে এসব হকারদের উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করার পর যেই কদু সেই লাউ। বরং আগের চেয়ে আরো দ্বিগুন হকার ফুটপাতে বসছে। গোটা নগর যেন পরিণত হয়েছে হকারের নগরে। প্রতিদিন দুপুর থেকেই ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে গভীর রাত পর্যন্ত চলে বিভিন্ন রকম পণ্য বেচা-কেনা। হকারদের জন্য নির্দিষ্ট হকার মার্কেট ছেড়ে অধিকাংশ হকার এখন জায়গা করে নিয়েছেন রাস্তা ও ফুটপাতে।
রাস্তা ও ফুটপাত হকারদের দখলে চলে যাওয়ায় পথচারী তথা যানবাহন চলাচলে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। দেখে মনে হবে অনেকটা স্থায়ীভাবে দখল করে বসেছে ভাসমান ব্যবসায়ীরা। ফলে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে নগরে চলাচলকারীদের। একই সঙ্গে নগরে সারাক্ষণ লেগে আছে যানজটও। স্হায়ীভাবে হকার উচ্ছেদে সিলেট সিটি করপোরেশন ও প্রশাসনকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না।
উল্টো সিলেট সিটি করপোরেশনের অসাদু কর্মচারি পুলিশ ও রাজনৈতিক নোতাদের দিকে চাঁদা তোলার অভিযোগ উঠেছে। তবে এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে পাল্টা অভিযোগ করা হয়।
নগরীর ফুটপাত জুড়ে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের অবস্থান ছিল দীর্ঘদিনের সমস্যা। অতীতে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে সময়ে সময়ে সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা হলে সাময়িকভাবে হকাররা দখল ছেড়ে গেলেও পুনরায় কিছু সময় পরে তারা আবার দখল পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা চালাচ্ছেন।
ইতিমধ্যে হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে লাদীঘিরপাড় হকার মার্কেট সংলগ্ন মাঠকে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় করে মার্কেট স্থাপন করে দেয়া হলেও সেখানে হকাররা যেতে নারাজ। তারও কারন রয়েছে, গ্রাহকরা ভিতরে গিয়ে পণ্য কিনতে সাচ্ছন্দবোধ করেন না। তাই বাধ্য হয়ে হকাররা ফুটপাতে ব্যবসা করছেন এমন বক্তব্য পাওয়া গেছে কয়েকজন হকারের কাছ থেকে।
গত ৫ আগস্টের পর পর্যায়ক্রমে হকাররা আবার রাস্তা ও ফুটপাতে আসতে শুরু করে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে হকার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও অবস্থার তেমন উন্নতি হচ্ছেনা। নগরীর প্রাণকেন্দ্র বন্দরবাজার, জিন্দাবাজারের রাস্তা ও ফুটপাত জুড়ে ভ্রাম্যমাণ হকারদের ব্যবসা এখন জমজমাট। এ ছাড়াও জিন্দাবাজার থেকে চৌহাট্টা হয়ে আম্বরখানা পর্যন্ত রাস্তার পাশে রয়েছে হকারদের অবস্থান।
সন্ধ্যার পর নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজার ও বন্দরবাজারের চেহারা সম্পূর্ণরূপে পাল্টে যায়। হকারদের অবস্থানের কারণে পথচারীদের মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হয়। হকার উচ্ছেদে জোরালো কোন ভুমিকা নেই বললে চলে। নাম কা ওয়াস্তে মাঝে মধ্যে অভিযান চালানো হলেও ফের রাস্তা দখল করে দিব্বি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে হকাররা।
হকারদের ফুটপাত বা রাস্তা দখলের কারনে সব থেকে দুর্ভোগ পোহাতে হয় পথচারিদের। সেই সাথে লেগে থাকে যানজট। সুত্র জানায়, সিলেট নগরীতে প্রতিদিন প্রায় হাজারের উপর হকার বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র নিয়ে বসেন বিত্রিুর জন্য। আর তাদের থেকে চাঁদা হিসেবে উঠে লাখ-লাখ টাকা। সুত্র বলছে এই টাকার ভাগ যায় সিসিক, রাজনৈতিক ও ফাঁড়ির পুলিশের পকেটে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে শুরু করে ধাপে-ধাপে হকারদের কাছ থেকে তোলা হয় চাঁদা।
এই চাঁদা তোলার জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট লোক। এদের মধ্যে কেউ পুলিশ ফাঁড়ির নামে, কেউ সিসিকের লাইনম্যান ও রাজনৈতিক দলের কর্মী। কাউকে ৫০ টাকা, কাউকে ১০০ টাকা দিতে হয়। না দিলে সিস্টেমে সরিয়ে দেওয়া হয় ওই স্থানের হকারদের।
সুত্র জানায় এসব কারনে হকাররা তাদের পণ্যের মুল্য বাড়িয়ে দেয়। যার কারনে সাধারন জনগন চড়া মুল্যে পণ্য খরিদ করতে হয়।
সিলেট নগরের সচেতন নাগরিকদের মতে হকারদের তালিকা করে তাদের হকার মার্কেট মাঠে পুনর্বাসন করে দিলে হয়ত ভোগান্তি কমবে। সেই সাথে আইন অমান্যকারিদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্হা গ্রহন করলে রাস্তা ও ফুটপাত হকারমুক্ত হবে।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার বলেন আমরা ফুটপাত হকারমুক্ত করার জন্য কাজ করছি। চাঁদা তোলার ব্যাপারে তিনি বলেন, এ বিষয় আমার জানা নেই, তবে সঠিক তথ্য পেলে ঐ ব্যাক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্হা গ্রহন করা হবে।
এ ব্যাপারে বন্দর বাজার পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ এবাদউল্লা জানান, ফাড়ির নামে কে বা কারা চাঁদা তুলছে এ বিষয়টি নিয়ে অভিযান অব্যাহত আছে। তথ্য পাওয়া গেলে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন কতোয়ালী থানা বা বন্দর পুলিশ ফাঁড়ির চাঁদা তোলার সাথে জড়িত নয়। যারা পুলিশের নামে এরকম অন্যায় কাজ করছে তাদের খোজে বের করা হবে।
বার্তা বিভাগ প্রধান