ইসরায়েলে সেনাবাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, ইরান থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে এই দাবি করা হয়েছে। ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী এক বিবৃতিতে হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ খবর জানিয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে যে, ইরান থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে এবং ইসরায়েলের হোমফ্রন্ট কমান্ড দেশের বিভিন্ন অংশের জনগণকে জীবন রক্ষাকারী নির্দেশনা প্রদান করেছে।
এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলজুড়ে হামলার সতর্কসংকেত বাজানো হচ্ছে। ইরান থেকে ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ কার্যকর রয়েছে। যে কোনও স্থানে হুমকি সনাক্ত ও প্রতিহত করছে। এমনকি এই মুহূর্তেও। আমরা বিভিন্ন ধরনের হুমকির মুখোমুখি হওয়ায় আশঙ্কা রয়েছে যে সতর্কবার্তাগুলো বেশিরভাগ এলাকায় কার্যকর হবে।
দেশের জনগণকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ এলাকায় অবস্থানের আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তারা বলেছে, যেসব বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে সেগুলো ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত বা পতনের।
জর্ডানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, সাময়িকভাবে বিমান চলাচল স্থগিত করা হয়েছে। ইসরায়েলি আর্মি রেডিও জানিয়েছে, বেন-গুরিয়ন বিমানবন্দরে টেক-অফ ও অবতরণ বন্ধ করা হয়েছে।
নাসরাল্লাহকে হত্যার প্রতিশোধে ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ইরানের অভিজাত বাহিনী ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস কর্পস (আইআরজিসি) বলেছে, হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহর হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। ইরানের ফার্স নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, আইআরজিসি বলেছে, ইসরায়েলের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলাটি গত সপ্তাহে হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ এবং এ বছরের শুরুর দিকে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াহর হত্যার জবাব।
এক বিবৃতিতে আইআরজিসি বলেছে, ইসমাইল হানিয়াহ, হাসান নাসরাল্লাহ এবং নিলফোরশানের (আইআরজিসি গার্ডস কমান্ডার) শাহাদতের প্রতিশোধ হিসেবে আমরা দখলকৃত ভূখণ্ডের মূলকেন্দ্রকে লক্ষ্য করেছি।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের মিশন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক পোস্টে তেহরান ইঙ্গিত দিয়েছে যে ইসরায়েলের ওপর তাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সমাপ্ত হয়েছে। এতে ইসরায়েলি সরকারকে পাল্টা হামলা থেকে বিরত থাকার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে ইসরায়েলকে রক্ষায় সহায়তা করতে এবং অঞ্চলে মোতায়েন মার্কিন সেনাদের সুরক্ষিত রাখতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত।
এর আগে মার্কিন কর্মকর্তা ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তিন ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, ইরানের পরিকল্পিত হামলার লক্ষ্য তিনটি সামরিক বিমানঘাঁটি এবং তেল আবিবের উত্তরে অবস্থিত একটি গোয়েন্দা সদর দফতর। মঙ্গলবার দুপুরে এই সদর দফতর খালি করে ফেলা হয়েছে।
এপ্রিল মাসে ইরান ইসরায়েলের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। ওই সময় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান সিরিয়ায় থাকা ইরানি শীর্ষ কমান্ডারদের হত্যা করেছিল। তখন উভয় পক্ষই বড় ধরনের যুদ্ধ এড়াতে চেয়েছিল। কিন্তু কূটনীতিক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের আশঙ্কা অনেক বেশি। ইরানের নতুন হামলার পর ইসরায়েল পাল্টা আঘাত করতে প্রস্তুত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইসরায়েলের মিত্ররা এপ্রিলের হামলায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রতিহত করতে সহায়তা করেছিল। ফলে ইসরায়েলের অবকাঠামোয় সীমিত ক্ষতি হয়েছিল।