সিলেট মহানগরে সড়কের বিশৃঙ্খলা দূর করতে ৭ দিন সময় বেঁধে দিয়েছিলেন মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) নতুন কমিশনার মো. রেজাউল করিম (পিপিএম- সেবা)। আজ ২৩ সেপ্টেম্বর শেষ হচ্ছে সেই সময়। আগামীকাল মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) থেকে কঠোর অভিযানে নামে এসএমপি’র ট্রাফিক পুলিশ।
সিলেট মহানগরের সড়কগুলোতে যানজট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রধান দুই কারণ হচ্ছে- সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী বা হকার। মহানগরের ব্যস্ততম সব এলাকায় রাস্তায় অবৈধ পার্কিং করে রেখেছেন অটোরিকশা চালকরা। আর বন্দর-জিন্দাবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ সব স্থানে রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে নিয়েছেন হকাররা।
সিলেট মহানগরে যানজট সৃষ্টির প্রধান কারণ সিএনজিচালিত অটোরিকশা। রেজিস্ট্রেশনবিহীন ও মেট্রো এলাকার বাইরের অটোরিকশাগুলো মহানগরের ভেতরে এসে সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এ অবস্থায় মেট্রো এলাকা থেকে ‘বহিরাগত’ ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ করতে নতুন কিছু কৌশল অবলম্বন করছে মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। এতে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরার আশা করছেন সচেতন মহানগরবাসী।
এসএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিলেট মহানগরের বাসিন্দার মালিকানাধীন প্রায় ১১ হাজার রেজিস্ট্রেশনকৃত অটোরিকশা ও জেলার বাসিন্দাদের মালিকানাধীন প্রায় ২০ হাজার রেজিস্ট্রেশনকৃত অটোরিকশা চলাচল করে। এর বাইরে রেজিস্ট্রেশনবিহীন আরও অন্তত ১০ হাজার অটোরিকশা সিলেটজুড়ে চলাচল করে।
অভিযোগ রয়েছে- রেজিস্ট্রেশনবিহীন এসব অটোরিকশা বিভিন্ন থানা ও ট্রাফিক পুলিশের টুকেন-বাণিজ্যের মাধ্যমে চলাচল করে বছরের পর বছর ধরে। তবে নবাগত এসএমপি কমিশনার এসব বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ হলেও দক্ষিণ সুরমায় সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে ও সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে পুলিশের সামনে দিয়েই প্রতিদিন রেজিস্ট্রেশনকৃত ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিকশা চলাচল করে। এর মধ্যে রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিকশাগুলো দালালের মাধ্যমে পুলিশের দেওয়া টুকেন সামনে লাগিয়ে চলাচল করে। এছাড়া রেজিস্ট্রেশনকৃত অটোরিকশা থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা নিয়ে মহাসড়কে চলাচল করতে দেয় পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিকশাগুলো মহানগরের আম্বরখানা থেকে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কে, তেমুখী-টুকের বাজার থেকে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে, মেজরটিলা-শাহপরাণ থেকে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে, দক্ষিণ সুরমার ওভারব্রিজের নিচ থেকে সিলেট-জকিগঞ্জ-বিয়ানীবাজার সড়ক এবং চন্ডিপুল থেকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে বেশি চলাচল করে। তবে শহরেও আসে এসব গাড়ি যাত্রী নিয়ে। ফলে মহানগরের রাস্তাগুলোতে বাড়ে যানবাহন চাপ। এছাড়া রেজিস্ট্রেশনকৃত জেলার গাড়িগুলো মহানগরে এসে সৃষ্টি করে যানজট। এই যানজট কমাতে মেট্রোর বাইরের গাড়ি মহানগরে না আসতে এবং রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোগুলো চলাচল না করতে নিষেধাজ্ঞা করেছে এসএমপি।
বিষয়টি নিয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন পরিবহন শ্রমিক সংগঠন ও বিআরটিএ-সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বৈঠক করেছেন এসএমপি কমিশনার মো. রেজাউল করিম (পিপিএম- সেবা) । বৈঠকে নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তের মধ্যে একটি ছিলো- আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশনবিহীন ও মেট্রোর বাইরের অটোগুলোকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে তাদের ভেতরে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মাইকিংসহ বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালাবে এসএমপি’র ট্রাফিক পুলিশ। ২৩ সেপ্টেম্বরের পর কঠোর অভিযানে নামবে তারা। মেট্রোর ভেতরে বাইরে গাড়ি পেলে এবং সড়কে রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিকশা পেলেই চালককে দেওয়া হবে আইনানুগ শাস্তি।
প্রচারণার অংশ হিসেবে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে এসএমপি। এছাড়া গত কয়েকদিন টানা মাইকিং করা হয়েছে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে।
এসএমপি’র মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান- সিএনজিচালিত বৈধ অটোরিকশা চালক ও মালিকদের প্রতি এসএমপি নির্দেশনা দিয়েছে- ২৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকায় চলাচলকারী অটোরিকশাগুলোতে সবুজ রঙের উপর হলুদ বর্ডার দিয়ে এবং মেট্রো এলাকার বাইরে চলাচলকারী অটোরিকশাগুলোতে সবুজ রঙের উপর সাদা রঙের বর্ডার দিয়ে চিহ্নিত করতে হবে। এছাড়া বিশেষ কারণ ছাড়া মেট্রো এলাকার বাইরের অটোরিকশাগুলো মেট্রো এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসএমপি কমিশনার মো. রেজাউল করিম (পিপিএম- সেবা) বলেন- ৭ দিন (২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) সময় দেওয়া হয়েছে অটোচালকদের। এই সময়ে তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে আমাদের ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে মাইকিংসহ বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালানো হয়। আশার করছি- সংশ্লিষ্ট সবাই আমাদেরকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করবেন এই বিষয়ে। কারণ- সিলেট আমাদের সবার। নিজেদের শহরকে নিজেরাই পরিপাটি রাখতে হবে। নির্দেশনা না মানলে ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে কঠোর অভিযানে নামবে ট্রাফিক পুলিশ। রঙ চিহ্নিত করা মেট্রোর গাড়িগুলো মহানগরে এবং বাইরেরগুলো বাইরেই চলাচল করতে হবে। বিশেষ কারণ ছাড়া মেট্রো এলাকার বাইরের অটোরিকশাগুলো মেট্রো এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো আমরা।
তিনি বলেন- পুলিশের বিরুদ্ধে উঠা টুকেন বা স্টিকার-বাণিজ্যের বিষয়টি গুরত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হবে। আমার সময়ে এমন কেউ করলে সেই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মোট কথা- বৈধ কাগজপত্র ও সঠিক নিয়ম ছাড়া সড়কে কোনো অটোরিকশা চলবে না।
এদিকে, গতকাল সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বেশিরভাগ অটোরিকশাই রংবিহীন অবস্থায় দেখা গেছে। এছাড়া মেট্রো এলাকার বাইরের কিছু অটো-শ্রমিক আজ দক্ষিণ সুরমার চন্ডিপুলে পুলিশের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সভা করবে বলে গতকাল মহানগরে মাইকিং করা হয়েছে। তবে পুলিশের সিদ্ধান্তের বিষয়ে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে সিলেট জেলা সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাকারিয়া আহমদের। তিনি মঙ্গলবার সকালে বলেন- বাইরের অটোরিকশাগুলো মেট্রোতে আসলে যানজট বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবেই। তাই পুলিশের এ সিদ্ধান্ত সঠিক। এ নির্দেশনা মানতে আমরাও প্রচারণা চালিয়েছি এবং আমাদের শ্রমিকদেরকে আহ্বান জানিয়েছি। তবে কে বা করা আজকে সভা ডেকেছে আমরা জানি না, এতে আমাদের কোনো সমর্থন নেই।