Home » বিকট শব্দ আর বেপোরোয়া গতির মোটরবাইকে অতিষ্ঠ নগরবাসী

বিকট শব্দ আর বেপোরোয়া গতির মোটরবাইকে অতিষ্ঠ নগরবাসী

শুদ্ধবার্তাটোয়েন্টিফোর: নগরীর জিন্দাবাজার এলাকা। প্রচন্ড জ্যামের মধ্যেই  বিকট শব্দ করে বেপোরোয়া গতিতে একসাথে ছুটে চলছে ৭/৮টি মোটারবাইক। এই দৃশ্য কেবল নগরীর একটি এলাকা বা একটি দিনের নয়। মোটরবাইকের এই যন্ত্রণা প্রতিদিনই পোহাতে হয় নগরবাসীকে। হাড্রোলিক হর্ণ আর সরু পথেও মাত্রাতিরিক্ত গতির কারণে নগরীতে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে মোটরবাইক। বেপোরায়া গতির কারণে অনেকসময় দুর্ঘটনাও ঘটছে। আবার এসব মোটরবাইকে করে ছিনতনাইয়েরও ঘটনা ঘটছে। সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক. কান. গলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এন. কে. সিনহা বলেন,  শব্দের পরিমাণ যখন ডেসিবেল ৬০ হয় তখন মানুষ বিরক্ত হয়। আর শব্দের পরিমাণ যখন ডেসিবেল ৯০ হয় তখন মানুষের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এতে মানুষের উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হয়। কানের সাথে মস্তিষ্ক সংযোগস্থলে আঘাত আসে। যার ফলে মানুষের স্মৃতিশক্তিতে সমস্যা, শারীরিক নানাবিধ সমস্যা সহ বধির হওয়ার শঙ্কা থাকে। তিনি বলেন, বর্তমানে তরুণরা শখের বশে মোটরবাইকে যে বিকট শব্দের সাইলেন্সর এবং হাইড্রলিক হর্ণ ব্যবহার করে তা সাধারণত ৯০ ডেসিবলের উপরে হওয়ায় এটা মারাত্মক ক্ষতির কারণ। ভুক্তভুগি কয়েকজন পথচারী জানান, রাস্তাঘাটে বের হলেই আতঙ্কে থাকতে হয় সর্বদা। হঠাৎ করেই বিকট বিকট আওয়াজ তুলে এক সাথে কিংবা কখনো কখনো তীব্র হর্ন বাজিয়ে ছুটে আসতে দেখা যায় মোটরবাইক চালকদের। জিন্দাবাজার এলাকার এক ব্যবসায়ী জানান, মোটরবাইকের হর্ণ আর সাইলেন্সারের বিকট শব্দে কানের অবস্থা ঝালাপালা। বেশিরভাগ সময়েই উড়তি বয়সের ছেলেরাই মোটরবাইক চালিয়ে থাকে। রাস্তা ফাঁকা থাকলেও দেখা যায় তারা বিকট হর্ণ বাজিয়ে তীব্র বেগে ছুটে চলছে। তিনি আরো বলেন, কিছু কিছু সময় মনে হয় এই বুঝি এলাকায় গুলাগুলি শুরু হয়ে গেছে। পরে দেখা যায় মোটরসাইকেল ছুটে চলছে। অভিযোগ রয়েছে, হাইড্রলিক হর্ণ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন পদক্ষেপ নিলেও বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। ফলে বন্ধ হচ্ছে না হাইড্রোলিক হর্ণের ব্যবহার। নগরীর জিন্দাবাজার এলাকায় সড়কের পাশেই বেসরকারি হাসপাতাল ইউনাইটেড ক্লিনিক। মোটরবাইকের বিকট শব্দের কারণে এই হাসপাতালের রোগীদের বিপাকে পড়তে হয়। এই হাসপাতালে চিকিৎসারত কয়েকজন রোগীর আত্মীয় অভিযোগ করে বলেন, এসব মোটরসাইকেলের কারণে হার্টের রোগী ও শিশুদের সবচেয়ে সমস্যায় পড়েন। জিন্দাবাজার এলাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা পুলিশ পরিদর্শক (ট্রাফিক) সৌকত হোসেন জানান, এসব মোটরসাইকেল আরোহীদের থামাতে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। যদি কখনো হাড্রোলিক হর্ন যুক্ত গাড়ি নজরে আসে তবে সাথে সাথে এব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এসব মোটরবাইকের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে রমজানের মধ্যে তীব্র যানজট ও কেনাকাটা করতে আসা যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে ঐ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ঈদকে সামনে রেখে বর্তমানে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, অনেক সময় আমরা সেই সব চালকদের থামিয়ে হাইড্রোলিক হর্ণ খুলে রাখি। সেই সাথে শব্দ দূষণের দায়ে ১৩৯ ধারায় মামলাও করা হয়। এ বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের সহকারী উপ কমিশনার (ট্রাফিক) নিকুলিন  বলেন, হাইড্রোলিক হর্ণ বন্ধের অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া। যখনই বিভিন্ন যানবাহনে এই হর্ণ দেখা যায় তখনই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তিনি বলেন, আমরা তাৎক্ষনিক সেই হর্ণ খুলে রেখে দেই। মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ১৩৯ এবং ১৪০নং ধারায় নিষিদ্ধ হর্ণ ব্যবহার ও আদেশ অমান্য করার শাস্তি হিসেবে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। তবে সেখানে জরিমানার অঙ্কটা খুবই কম। হর্ণ জব্দের পর অনেকেই আবার নতুন করে হাইড্রোলিক হর্ণ লাগিয়ে নেন।

 

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *