ডেস্ক নিউজ : আজ রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারান্তরীণ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দ্রুত রাজধানীর বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির জন্য আবারও দাবি জানিয়েছে বিএনপি।”
“আজ রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই দাবি জানান। এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা না দিলে তাঁর বড় ধরনের ক্ষতি হলে এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।”
গতকাল শনিবার বিকেলে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর চারজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক সোয়া ঘণ্টা কারাগারে অবস্থান ও খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার করেন। পরে কারাগারের বাইরে এসে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এফ এম সিদ্দীকি বলেন, ‘জুনের ৫ তারিখে উনি ‘খালেদা জিয়া’ হঠাৎ করে দাঁড়ানো অবস্থা থেকে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। দুপুরবেলা ১টার সময়। প্রায় ৫/৭ মিনিট উনি আনকনসাস ছিলেন। উনি মনেই করতে পারছেন না যে, কী ঘটেছিল। মাইল্ড ফর্মে একটা স্ট্রোকের মতো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। যদি টিআইএ ’ট্রানজিয়েন্ট এস্কেমিক অ্যাটাক’ কারো হয়, তাহলে সেটা ইন্ডিকেট করে সামনে তাঁর একটা স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি থাকে।”
এর ঘণ্টা দুয়েক পর কারা অধিদপ্তরের ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়ে বেরিয়ে এলে সাংবাদিকরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চান। তখন তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মাথা ঘুরে পরে যাওয়ার বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ অবগত নয়। তারপরও চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী খালেদা জিয়ার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। রিপোর্ট পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
“আজকের সংবাদ সম্মেলনে এ প্রসঙ্গে রুহুল কবির রিজভী বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও অসুস্থতা নিয়ে কতটা অবহেলা করা হচ্ছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে সেটা পরিষ্কা হয়ে গেল। কারা কর্তৃপক্ষ সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে বলেই বন্দি খালেদা জিয়ার গুরুতর শারীরিক অসুস্থার বিষয়ে ভ্রুক্ষেপহীন থেকেছে, সেটিই প্রমাণিত হলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। দেশনেত্রী কারাগারে অজ্ঞান হয়ে ৫-৭ মিনিট পড়েছিলেন, অথচ সেটি কারা কর্তৃপক্ষ জানে না, তার মানে এটাই প্রমাণিত হয়, খালেদা জিয়া কারা কর্তৃপক্ষের কতখানি অবহেলার শিকার।”
‘ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিক খালেদা জিয়ার চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা না করে বিষয়টি নিয়ে এখনো সরকার বা কারা র্কতৃপক্ষ অবগত নয় বলে যে কথা বলা হয়েছে, সেটি দেশনেত্রীর অসুস্থতাকে আরো গুরুতর করে তাঁকে রাজনৈতিক ময়দান থেকে সরিয়ে দেওয়ার সুগভীর চক্রান্ত কি না, তা নিয়ে মানুষের মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গতকালের বক্তব্য দেশনেত্রীর চিকিৎসা নিয়ে টালবাহানারই নামান্তর।
রুহুল কবির রিজভী দাবি করেন, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুপারিশ করেছেন, সেগুলো পিজিতে সম্ভব নয়। আধুনিক যন্ত্রপাতির সব ব্যবস্থা ইউনাটেড হাসপাতালে রয়েছে। অতীতেও আওয়ামী লীগের সভানেত্রীসহ অনেক নেতাকে কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তাহলে খালেদা জিয়াকে তাঁর পছন্দমতো চিকিৎসা করতে না দেওয়া একজন বন্দির প্রতি চরম মানবধিকার লঙ্ঘন নয় কী?
“রিজভী আরো অভিযোগ করেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা যেসব সুপারিশ করছেন, এমনকি আগেও সরকারি মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা যেসব পরামর্শ দিয়েছিলেন সেগুলোও বাস্তবায়ন করা হয়নি।”
“ অবিলম্বে দেশনেত্রীকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা না দিলে তাঁর বড় ধরনের ক্ষতি হলে এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি জানাচ্ছি, অতিদ্রুত ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করে দেশনেত্রীকে চিকিৎসার সুযোগ দিন। ঈদের আগেই তাঁকে মুক্তি দিন।”ছবি : এনটিভি