Home » সিসিক নির্বাচনঃ আ’লীগে বিভক্তি, নিষ্ক্রিয় বিএনপি

সিসিক নির্বাচনঃ আ’লীগে বিভক্তি, নিষ্ক্রিয় বিএনপি

দরজায় কড়া নাড়ছে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন। আগামী মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুনের মধ্যে যে পাঁচটি সিটি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন, সেগুলোর একটি সিলেট। নির্বাচন সামনে রেখে পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ডে প্রচারে নামা ব্যক্তিদের দুজন জাতীয় পার্টির, বাকিরা আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

মেয়র পদে আওয়ামী লীগে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ভিড় থাকলেও এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে রয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী দুটি দলের। দলীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বললেও নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বর্তমান মেয়র বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী ও জামায়াতের নেতা এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।

আসন্ন সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মরহুম বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের স্থলাভিষিক্ত কে হচ্ছেন, তা নিয়ে চলছে ব্যাপক জল্পনাকল্পনা। এ নিয়ে দলে বিভেদ-কোন্দল আরও বেড়েছে। নগর আওয়ামী লীগে বিভেদের বিষয়টি প্রথম সামনে আসে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে কামরানের পরাজয়ের পর। এর আগেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে নতুন প্রার্থী কে হবেন, তা নিয়ে কোন্দল আরও বেড়েছে। কোন্দল মেটাতে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের তৎপরতাও তেমন চোখে পড়ছে না।

মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশার কথা জানান দিয়ে পোস্টার-ব্যানার-বিলবোর্ড লাগিয়েছেন দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ টি এম হাসান জেবুল, সিসিকের চারবারের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদসহ কয়েকজন। মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ ও সাবেক মেয়র কামরানের ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলুও মনোনয়ন প্রত্যাশী। এদিকে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে নৌকার প্রার্থী করতে দলের হাইকমান্ড ‘সবুজ সংকেত’ দিয়েছেন দাবি করে প্রচার শুরু করেছেন তাঁর অনুসারীরা। অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বলছেন, এর সত্যতা নেই। এ বিষয়ে তাঁরা কেন্দ্রের কোনো নির্দেশনা পাননি।

এদিকে সূত্র জানায়, সিসিক নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে সিলেট আওয়ামী লীগে বিভক্তির বিষয়টি উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা একে অপরকে মেনে নেবেন না। ফলে আবারও পরাজয়ের শঙ্কা থাকছে। এ পরিস্থিতিতে দলের হাইকমান্ড বিকল্প এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীর খোঁজ করছিল। দলের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক দলীয় সভাপতির সঙ্গে দেখা করতে গেলে আনোয়ারুজ্জামানের কথা বিবেচনা করতে বলা হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছিল, তাঁকে প্রার্থী করলে সব বলয় মেনে নেবে এবং একযোগে কাজ করবে। কিন্তু ঘটছে উল্টো। তিনি মাঠে নামায় মাথাচাড়া দিচ্ছে কোন্দল, বিভক্তি ও ক্ষোভ। বর্তমানে সিলেট আওয়ামী লীগ দুটি বলয়ে বিভক্ত। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আনোয়ারুজ্জামানের বিরুদ্ধে হলেও ছাত্রলীগ ও যুবলীগ তাঁর পক্ষে।

জানতে চাইলে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন সিলেটে এসে কাজ করার জন্য। বিভাজন সৃষ্টি হওয়ার কিছু নেই। তাঁরা আগে থেকেই দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং যোগ্য। দল যাঁকে মনোনয়ন দেবে, আমরা সবাই তাঁর সঙ্গে নৌকার জন্য কাজ করব।’

নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আনোয়ারুজ্জামান বলেছেন, নেত্রী তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন। নেত্রী তো সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে এ রকম কিছু বলেননি। বর্তমানে সবুজসংকেত আর গ্রিন সিগন্যাল বলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। তাতে নেতায় নেতায় বিভাজন তৈরি হচ্ছে। ফলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দলের সভাপতি যাঁকে মনোনয়ন দেবেন, আমরা তাঁর জন্য কাজ করব।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান বলেন, ‘দল যাঁকে মনোনয়ন দেবে, আমরা তাঁর সঙ্গে নৌকার জন্য কাজ করব। আলাদাভাবে কারও সঙ্গে আগে থেকেই থাকতে পারব না।’

এদিক থেকে ভালো অবস্থানে আছেন গত দুবার বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হওয়া আরিফুল হক চৌধুরী। টানা দুই মেয়াদে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে তাঁর জনপ্রিয়তাও বেড়েছে। তবে বিএনপি-জামায়াত এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারা সরকার পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। এই অবস্থায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কি না, তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা।

এ ব্যাপারে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পর দল এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। এ ব্যাপারে দলীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। বিএনপি নির্বাচন নিয়ে ভাবছে না। আমরা এখন সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছি।

সিলেট মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক শিল্পপতি নজরুল ইসলাম বাবুল ও কেন্দ্রীয় সদস্য মাহবুবুর রহমান চৌধুরী মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাঁদের পোস্টার, বিলবোর্ডও শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে।

২০০২ সালে প্রতিষ্ঠার পর সিসিকে এ পর্যন্ত চারবার নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কামরান এবং পরের দুই নির্বাচনে বর্তমান মেয়র আরিফুল নির্বাচিত হন।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *