Home » তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

দেশের তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে (আইটি) দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করে একবিংশ শতাব্দীর নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

রাষ্ট্রপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর মিরপুর সেনানিবাসে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এর ‘ষষ্ঠ সমাবর্তন-২০২৩’ অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে দক্ষতা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। প্রাথমিক থেকে উচ্চতর স্তরে সর্বত্রই বিজ্ঞান ও প্রায়োগিক শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সার্টিফিকেট-সর্বস্ব ও নোট মুখস্ত করার শিক্ষা নয়, বিশ্লেষণধর্মী ও প্রায়োগিক শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে’।

সমাবর্তনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সংসদ সদস্যবৃন্দ, বিইউপির উপাচার্য মেজর জেনারেল মো: মাহবুব-উল আলম, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি, কোষাধ্যক্ষ এবং রেজিস্ট্রারসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

একটি জাতি গঠনের প্রথম ধাপ হিসেবে গবেষণা কার্যক্রমসহ মানসম্পন্ন শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এটি (মানসম্মত শিক্ষা) শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়, বুদ্ধিবৃত্তিক বৃদ্ধি, অসাম্প্রদায়িক জীবনবোধ এবং সর্বোপরি গভীর দেশপ্রেম জাগরণের প্রধান মাধ্যম।

বর্তমানে চাহিদা ভিত্তিক ও কর্মমুখী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বিদ্যমান শ্রমবাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে শিক্ষা কারিকুলাম তৈরি করার তাগিদ দেন।

রাষ্ট্রপ্রধান বিইউপি কর্তৃপক্ষকে গবেষণা কার্যক্রমকে গুরুত্ব দিতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য শিক্ষকদের শিক্ষাদানে আন্তরিকতার সাথে আত্মনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, সবাইকে মনে রাখতে হবে – ‘আনন্দ ছাড়া শিক্ষা কোনো সুফল বয়ে আনতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে উদ্ভাবিত নতুন ধারণা এবং কৌশলগুলোকে আয়ত্ত্ব করে আমাদের নিজেদেরকে আপ-টু-ডেট রাখতে হবে।’

মানসম্মত উচ্চশিক্ষা প্রদানে বিইউপি কর্তৃপক্ষের নিরলস প্রচেষ্টার প্রশংসা করে চ্যান্সেলর বলেন, বিইউপি ভর্তি পরীক্ষা, অন্যান্য পরীক্ষা এবং এর ফলাফল প্রক্রিয়া ‘ইউনিভার্সিটি কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার সিস্টেমে’র মাধ্যমে করা হচ্ছে।

যুগের চাহিদা অনুযায়ী বিইউপি জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা প্রদানে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ডিগ্রি অর্জনের জন্য স্নাতকদের অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘শিক্ষা কেবল ডিগ্রি অর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, একজন স্নাতকের আসল সাফল্য নির্ভর করে কীভাবে একজন শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত, সামগ্রিক এবং পেশাগত জীবনে এর সুবিধা নিতে পারে তার ওপর। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে হামিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতি সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দেশকে বৈশ্বিক মন্দা থেকে বাঁচাতে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়াতে হবে। এলক্ষ্যে রপ্তানি এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে হবে।’

রাষ্ট্রপতি স্নাতকদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রস্তুত হওয়ার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার পরামর্শ দেন।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, আজকের স্নাতকরা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী, ধনী ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে জনগণের কল্যাণে কাজ করবেন।

২০০৮ সালে ৩১তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিমধ্যে ২৯, ৮৯২ স্নাতক সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে। ষষ্ঠ সমাবর্তনে, ৩৬ স্নাতক ডিগ্রিধারীকে ‘চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক’ এবং আরো ২৯ জনকে ‘ভাইস-চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক’ প্রদান করা হয়।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *