Home » ওমিক্রনের সংক্রমণ ও ভয়াবহতা নিয়ে যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

ওমিক্রনের সংক্রমণ ও ভয়াবহতা নিয়ে যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

অতীতের যে কোনও সময়ের তুলনায় দক্ষিণ আফ্রিকায় এখন দ্রুত ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাস, সোমবার দেশটির প্রেসিডেন্ট এমন মন্তব্য করেছেন। নতুন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট যে এখন সেখানে মহামারির মূল কারণ তার ইঙ্গিত পাওয়া যায় এই বক্তব্যে। কিন্তু প্রাথমিক পর্যালোচনায় ধারণা করা হচ্ছে, ওমিক্রনে হয়ত অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় কম গুরুতর রোগ দেখা দিচ্ছে।

প্রিটোরিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল ভবনের গবেষকরা জানান, তাদের কাছে আসা করোনাভাইরাসের আগের রোগীদের তুলনায় নতুন আক্রান্তরা কম অসুস্থ। অন্যান্য হাসপাতালেও একই প্রবণতা। এমনকি তারা বলছেন, বেশিরভাগ নতুন আক্রান্তদের কোভিড উপসর্গ নেই, অন্য কারণে তাদের ভর্তি করা হয়েছে।

অবশ্য বিজ্ঞানীরা কম গুরুতর হওয়ার বিষয়টি সম্ভাব্য সুসংবাদ হিসেবে ধরে নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলছেন। ওমিক্রন ইমিউনিটি এড়াতে পারে– এমন দুঃসংবাদের ক্ষেত্রেও তাদের অবস্থান একই। এটি মাত্র গত মাসে শনাক্ত হয়েছে। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বিষয়টি বলতে পারার জন্য বিশেষজ্ঞদের আরও বেশি গবেষণা প্রয়োজন।

ওমিক্রন কম প্রাণঘাতীর বিষয়ে জন্স হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের এপিডেমিওলজিস্ট ড. এমিলি এস. গার্লি বলেন, এমনটি সত্য হলে অবাক হওয়ার মতো না। কিন্তু আমরা এখনই এই উপসংহারে পৌঁছাতে পারি বলে আমি নিশ্চিত না।

পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে বিভিন্ন দেশের সরকার ওমিক্রন শনাক্তের ঘটনায় আন্তর্জাতিক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ও কড়াকাড়ি এবং টিকা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তায় গুরুত্বারোপ করেছে। মহামারির শুরুতে বিলম্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার সমালোচনায় থাকা বিশ্বনেতারা পদক্ষেপ নেওয়াতে উদগ্রীব। অবশ্য অনেক বিশেষজ্ঞ প্রশ্ন তুলছেন, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া কিনা।

ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে খুব দ্রুত এবং এখন পর্যন্ত ছয়টি মহাদেশের ৩০টির বেশি দেশে শনাক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও গবেষকরা বলছেন, এটি করোনার সবচেয়ে সংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট হতে পারে এবং গত বছর শনাক্ত হওয়া ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপট শিগগিরই ছাপিয়ে যেতে পারে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওমিক্রন এখন দেশটিতে দাপট ছড়াচ্ছে। এক মাস আগেও সেখানে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৩০০ জনের কম। শুক্রবার ও শনিবার দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

দেশবাসীর উদ্দেশে লেখা একটি উন্মুক্ত চিঠিতে প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসা বলেছেন, কোভিড সংক্রমণের চতুর্থ ঢেউয়ে প্রবেশ করছে। আমরা এমন হারে সংক্রমণ দেখছি যা মহামারির শুরুর পর দেখা যায়নি। এখন পরীক্ষা প্রায় এক-চতুর্থাংশ পজিটিভ আসছে। দুই সপ্তাহ আগেও এই হার ছিল প্রায় ২ শতাংশ।

এখন পর্যন্ত প্রিটোরিয়ার স্টিভ বিকো অ্যাকাডেমিক অ্যান্ড স্বওয়ানে ডিস্ট্রিক্ট হসপিটাল কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের একটি প্রতিবেদন ওমিক্রন নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পক্ষে সবচেয়ে দৃঢ় সমর্থন হাজির করেছে। যদিও প্রতিবেদনটির গবেষক ড. ফারিদ আব্দুল্লাহ এমন উপসংহারে না পৌঁছানোর পক্ষেও উদ্বেগজনক কারণ তুলে ধরেছেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের এইচআইভি/এইডস ও টিউবারকিউলোসিস রিসার্চ কার্যালয়ের পরিচালক ড. আব্দুল্লাহ গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৪২ জন রোগীকে পর্যালোচনা করেছেন। তিনি দেখতে পেয়েছেন, এদের মধ্যে ২৯ জন (৭০ শতাংশ) স্বাভাবিকভাবে নিশ্বাস নিচ্ছেন। ১৩ জন অক্সিজেন নিচ্ছেন এবং চারজন কোভিড সংশ্লিষ্ট নয় এমন রোগে ভর্তি হয়েছেন। ৪২ জনের মধ্যে মাত্র একজন ইনটেনসিভ কেয়ারে ভর্তি ছিলেন।

দেশটির জাতীয় সংক্রামক রোগ ইন্সটিটিউটের পরিসংখ্যানও একই ধরনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই সপ্তাহ ধরে সংক্রমণ বাড়ার পরও ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি রোগীর সংখ্যা মাত্র ১০৬। বেশিরভাগের রোগ পরীক্ষায় দেখা গেছে কোভিড সংশ্লিষ্ট নয় এমন রোগে তারা ভর্তি হয়েছেন।

জন্স হপকিন্সের ড. গার্লি উল্লেখ করেছেন, রোগের ভয়াবহতা শুধু ভ্যারিয়েন্টের ওপর নির্ভর করে না, কে আক্রান্ত হচ্ছে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। মহামারির দুই বছরে অনেক বেশি মানুষের টিকা, স্বাভাবিক সংক্রমণ বা উভয়ের মাধ্যমে কিছু মাত্রায় ইমিউনিটি অর্জন করেছেন এবং এর ফলে রোগের ভয়াবহতা মৃদু হতে পারে।

তিনি বলেন, ভ্যারিয়েন্টটি ঠিক কেমন প্রভাব ফেলবে তা আমরা জানি না। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমরা প্রতিনিয়ত তথ্য পাচ্ছি। দেশটির নির্দিষ্ট জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশের ইমিউনিটি রয়েছে।

ওমিক্রন বিশ্বের অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়লেও এটিকে এখনও বড় ধরনের ঝুঁকি দেখছেন না মার্কিন শীর্ষ সংক্রামক ও রোগ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউচি। তার মতে ওমিক্রনের তীব্রতা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অধিক তথ্যের প্রয়োজন বিজ্ঞানীদের।

ফাউচি বলেছেন, এই ভ্যারিয়েন্টের তীব্রতার যে প্রাথমিক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে তা বেশ আশাব্যঞ্জক। কিন্তু আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এখন পর্যন্ত ওমিক্রন দেখে যা মনে হচ্ছে এটি অতি সংক্রামক। তবে ঝুঁকি কম। তবে ডেল্টার তুলনায় এটির ক্ষতির মাত্রা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টেকনিক্যাল লিড ড. মারিয়া ডি. ভ্যান কারখোভ রবিবার সিবিএস নিউজকে বলেছেন, ওমিক্রনে আক্রান্ত গুরুতর রোগীর হার কম হলেও অনেক বেশি সংক্রমণে তাতে ভারসাম্য চলে আসবে। যার অর্থ হলো আরও বেশি হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যু।

সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস, সিএনএন

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *