Home » অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় হাত

অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় হাত

ব্যাংক আমানতের সুদের হার এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। কয়েকদিন আগে অধিকাংশ ব্যাংকের মেয়াদি আমানতে মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে কম হারে সুদ দেওয়া হচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে অনেকেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে থাকেন। এদিকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দিতে গিয়ে সরকারের সুদ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছিল। অর্থনীতিতে তৈরি হচ্ছিল ভারসাম্যহীনতা। এমন বাস্তবতায় অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় সরকার সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় হাত দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এর আগে এনবিআর চেয়ারম্যান ও আইআরডি সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম সম্প্রতি একটি সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে। এতে বলা হয়েছে, সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দিতে গিয়ে সরকারের সুদ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এতে অর্থনীতিতে তৈরি হচ্ছে ভারসাম্যহীনতা। সঞ্চয় কর্মসূচিতে অতিমাত্রায় বিনিয়োগ এবং বিনিয়োগের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি রোধ করা প্রয়োজন। আরও বলা হয়েছে, পাঁচ বছরে সরকারের সুদ ব্যয় দ্বিগুণ হয়ে গেলেও সঞ্চয় কর্মসূচির বিপরীতে এ ব্যয় হয়ে গেছে তিন গুণ। ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সঞ্চয়পত্র থেকে বিদায়ী অর্থবছরে (২০২০-২১) সরকার আগের অর্থবছরের চেয়ে তিন গুণ বেশি ঋণ নিয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে নিট প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যা আগের অর্থবছরে ছিল ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর আগে কোনও বছরে এত বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়নি।
অথচ ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদহার তলানিতে নেমেছে। কোনও কোনও ব্যাংক তার গ্রাহকদের মূল্যস্ফীতির হারের চেয়েও কম সুদ দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গত আগস্ট মাসে আমানতের সর্বনিম্ন সুদহার বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ব্যাংকের তিন মাস ও তার বেশি মেয়াদি আমানতের সুদ হার কোনোভাবেই মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম হবে না।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সঞ্চয়পত্র বেশি বিক্রি হওয়ার কারণে সরকারের ওপর দায় বাড়ছে। এজন্য সরকার গত কয়েক বছর ধরেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমানোর জন্য নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ব্যাংক খাতে সুদের হার এখন কম। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত ঠিক আছে। এছাড়া সঞ্চয়পত্রের বিক্রি যেভাবে বাড়ছিল, তাতে সরকারের ওপর ক্রমান্বয়ে চাপ সৃষ্টি হচ্ছিল।

এর আগে, সুদ ব্যয় বেশি হয়ে যাচ্ছে—এমন যুক্তি দিয়ে মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) সঞ্চয়পত্র ও বন্ডের মুনাফা কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। পাঁচটি সঞ্চয় কর্মসূচি ও একটি বন্ডে মুনাফার হার কমিয়ে দিয়েছে সরকার। প্রথমবারের মতো সরকার মুনাফার হারের আলাদা স্তরও করেছে। সঞ্চয় কর্মসূচির স্তর করেছে তিনটি, আর বন্ডের চারটি। সে অনুযায়ী কম টাকা বিনিয়োগকারীর মুনাফার হার বেশি, আর বেশি টাকা বিনিয়োগকারীর মুনাফার হার কম। মুনাফার হার নিয়ে এর আগে প্রজ্ঞাপনটি জারি হয়েছিল ছয় বছর আগে অর্থাৎ ২০১৫ সালের ২৩ মে।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক রকম হার, আর ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আলাদা রকম হার এবং ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরেক রকম হার করা হয়েছে। তবে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার আগের মতোই আছে।

নতুন সিদ্ধান্তে মধ্যবিত্ত বিশেষ করে অবসরভোগীদের আয় তো কমে গেলেও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, দেশের সুষ্ঠু অর্থনীতি বজায় রাখার স্বার্থে সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে। সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানো হলেও প্রান্তিক বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।

সুদের হার কমানোর ফলে সরকারের সাশ্রয় কত হবে এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বার্থ দেখেছি। মুনাফায় হার বাড়ানো, কমানো একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটা কখনো বাড়বে, কখনো কমবে। প্রয়োজনে বাড়তেও পারে আবার কমতেও পারে।

তিনি বলেন, মুনাফার হার কমানো হয়েছে, তবে প্রান্তিক পর্যায়ের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে হাত দেওয়া হয়নি।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *