Home » হাওরে ওয়াইফাই হটস্পট, দ্বীপ-চরাঞ্চলে উচ্চগতির ইন্টারনেট

হাওরে ওয়াইফাই হটস্পট, দ্বীপ-চরাঞ্চলে উচ্চগতির ইন্টারনেট

দেশের ৭৩টি দ্বীপ বা জনবসতি আছে এমন চরে দেওয়া হচ্ছে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ। এরই মধ্যে ৩৩টি দ্বীপ ও চরাঞ্চলে এই সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আরও ৪০টিতে দেওয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে এসব জায়গায় দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছানো সম্ভব না হওয়ায় বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তা পৌঁছানো হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এজন্য ‘স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দ্বীপ এলাকায় নেটওয়ার্ক স্থাপন প্রকল্প’ হাতে নেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে পটুয়াখালীর চর কাজল, চর বিশ্বাস, বাহের চর, চর বোরহান ও চন্দ্রদ্বীপে সংযোগ পৌঁছেছে। চাঁদপুরে আটটি, পিরোজপুর, বরিশাল নোয়াখালীর একটি করে ও ভোলার ১১টি দ্বীপে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

সন্দ্বীপ, হাতিয়া, শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্ট মার্টিনকেও এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ৩৩টা দ্বীপ ও চর এলাকায় এই প্রকল্পের কারণে আমরা উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছাতে পেরেছি। এখন অবশিষ্ট ৪০টির জন্য অনুরোধ এসেছে। এগুলোতেও আমরা করে দেবো। তিনি বলেন, দ্বীপ বলতে আমরা কোনও কোনও ক্ষেত্রে জনবসতিপূর্ণ চর এলাকাকেও বুঝিয়েছি। অনেক চর আছে যেগুলো দুর্গম কিন্তু জনবসতি আছে সেখানে আমরা ইন্টারনেট পৌঁছানোর উদ্যোগ নিয়েছি। কেউ কানেক্টিভিটির বাইরে থাকবে না- এমনটাই আমাদের চাওয়া। আর এসবই করা হচ্ছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের (এসওএফ) অর্থ থেকে।

তিনি উল্লেখ করেন, এর আগে দেশের ২ হাজার ৬০০ ইউনিয়নে উচ্চগতির (ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে) ইন্টারনেট পৌঁছানোর উদ্যোগ নেওয়া হয় তার মধ্যে ৬১৬টি ছিল দুর্গম, পাহাড়ি এলাকায়। এরমধ্যে ছিল কয়েকটি ছিটমহলও। সেসব জায়গায় ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছানো ছিল বেশ কঠিন। সেই কঠিন জায়গাগুলোতে এই সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের অর্থ দিয়ে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছানো হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, দেশে হাওর আছে ৬টি জেলায়- ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে। হাওর এলাকায় একটি গ্রামের সঙ্গে অন্য গ্রামের দূরত্ব ১০-১২ কিলোমিটার। এসব এলাকায় প্রথম পর্যায়ে টেলিটকের জন্য ৪০০ বিটিএস (টাওয়ার) বসানো হয়। পরবর্তীতে আরও ৪০০ টাওয়ার বসানো হয়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক ও মোবাইল ইন্টারনেট হাওরে পৌঁছানো গেছে। শুধু তাই নয়, বিটিসিএল (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেড) -এর সহযোগিতায় এসব এলাকায় ১২ হাজার ওয়াইফাই হটস্পট তৈরি হরা হয়েছে। দুই বছর পর্যন্ত এসব হটস্পট দিয়ে এলাকার লোকজন ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবে।

সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল কী?

দেশের মোবাইল ফোন অপারেটররা রাজস্ব আয়ের এক শতাংশ অর্থ সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলে (এসওএফ) জমা রাখে। এ নামে তহবিল গঠন হলেও তা থেকে অর্থ খরচের কোনও নিয়ম বা গাইডলাইন ছিল না। পরবর্তীতে বিভিন্ন বৈঠকের মাধ্যমে এই তহবিল থেকে অর্থ খরচের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল (এসওএফ) থেকে বরাদ্দ অর্থ দুর্গম, প্রত্যন্ত এলাকা, দ্বীপাঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা ও কানেক্টিভিটি তৈরিতে ব্যয়ের পরিকল্পনা করা হয়। ওই তহবিলে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জমা হওয়া ১ হাজার ৪১১ কোটি ৯০ লাখ টাকা থেকে অর্থ নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা করা হয়।

জানা যায়, দেশের দুই শতাধিক হাওর, বিল, প্রত্যন্ত এলাকা ও দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের প্রায় ৭৭২টি ইউনিয়ন উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত ছিল। এরমধ্যে ২২৬টি ইউনিয়ন একেবারেই দুর্গম এলাকায়। রয়েছে ১১১টি ছিটমহলও। প্রকল্পের মাধ্যমে এমন সব এলাকায় ইন্টারনেট পৌঁছানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এসব এলাকায় ইন্টারনেট পৌঁছে দিয়ে প্রযুক্তি বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ সফল হবে। অনলাইন শিক্ষা, টেলিমেডিসিন ইত্যাদি সেবা সম্প্রসারিত হবে।

৫টি খাতে তহবিলের অর্থ ব্যয়ের সিদ্ধান্ত

এর আগে ২০১৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর সচিবালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই টাকা ব্যয়ের পথ খুঁজে বের করা হয়। তখন ওই তহবিলে ছিল ৭৭০ কোটি টাকা । বৈঠকে ৫টি খাতে তহবিলের টাকা খরচের সিদ্ধান্ত হয়।

১. বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি সুবিধা বঞ্চিত এলাকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি সুবিধা বিস্তৃতকরণের লক্ষ্যে ফাইবার অপটিক সংযোগ সুবিধা স্থাপনের পাশাপাশি দ্বীপাঞ্চল, পাহাড়ি, হাওর ও চর এলাকায় ওয়্যারলেস টেলিযোগাযোগসহ ই-ব্যবস্থা স্থাপনের ক্ষেত্রে সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল ব্যবহার করা হবে।

২. সাইবার ক্রাইমকে সামাজিক দুর্যোগ বিবেচনায় এনে সাইবার সিকিউরিটি ব্যবস্থা জোরদার করার প্রয়োজনে সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ করা যাবে। বর্তমানে এই তহবিলে গচ্ছিত অর্থের ১৫ ভাগ সাইবার সিকিউরিটির ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করা হবে। এছাড়া ভবিষ্যতে সাইবার সিকিউরিটির জন্য কী পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণ করা হবে সে বিষয়ে কমিটি পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবে।

৩. প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনী পদ্ধতি বা সিস্টেম ক্রয়ের জন্য সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ করা হবে।

৪. পাবলিক বাস বিশেষ করে যেসব বাসে শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে সেসব বাসে ওয়াইফাই ইন্টারনেট সুবিধা দিতে সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ করা যাবে।

৫. সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবহারের নিমিত্তে বিদ্যমান বিধি-বিধান অনুসরণ করে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে এবং অর্থ বরাদ্দের জন্য কমিটির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *