Home » আগস্টে আরেক ধাক্কা

আগস্টে আরেক ধাক্কা

করোনার ভয়াবহতার মধ্যেই ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিধিনিষেধ শিথিল করেছিল সরকার। ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ফের কঠোর বিধিনিষেধও দেওয়া হয়েছে। তবে বিধিনিষেধ শিথিলে কোরবানির পশুর হাট, শপিং মল, মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধি মোটেও মানা হয়নি। অনেকেই ঢাকা থেকে বাস, ট্রাক, লঞ্চে গাদাগাদি করে ঈদ করতে গেছেন গ্রামে। ঈদ শেষে ২৩ জুলাই ঢাকায় ফিরেছেনও তারা। এমনকি কঠোর বিধিনিষেধের তৃতীয় দিন রবিবারও (২৫ জুলাই) ঢাকায় ফিরেছে অনেকে। ফেরি, বাসে ছিল না স্বাস্থ্যবিধির বালাই। গণমাধ্যমের খবর বলছে, শিমুলিয়া-বাংলাবাজারের নৌরুটে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে এখনও পদ্মা পার হচ্ছে মানুষ।

বিআইডব্লিউটিসির এজিএম সফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। রবিবার সকাল থেকে ছয়টি ফেরিতে মানুষ গাদাগাদি করে ঢাকা যাচ্ছেন।

সবমিলিয়ে ঈদের পর এবার করোনা সংক্রমণ কোথায় ঠেকবে এবং সে পরিস্থিতি দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা কতটুকু সামাল দিতে পারবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।

এদিকে, দেশের আট বিভাগের মধ্যে সাত বিভাগেই করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির নমুনা থেকে জিনোম সিকোয়েন্সে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটার (জিআইএসএআইডি) তথ্য অনুযায়ী, দেশের সাতটি বিভাগে এখন পর্যন্ত ১৫০টি নমুনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট বি-১৬১৭ পাওয়া গেছে।

এই ভ্যারিয়েন্টের সামাজিক সংক্রমণে জর্জরিত পুরো দেশ। গত আটদিনে মারা গেছেন ১ হাজার ২৮৯ জন। শনাক্ত হয়েছেন ৭৫ হাজার ৯৬১ জন। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, বর্তমান সংক্রমণে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টই বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, আগামী মাস অর্থাৎ আগস্টে বড় একটা ধাক্কা আসবে। তিনি বলেন, হাসপাতালের সক্ষমতা কমে আসছে দ্রুত। নির্ধারিত বেডের চেয়ে রোগী বেশি হলে সামলানো যাবে না।

স্বাস্থ্য অধিদফতর ঈদুল আজহার আগে কোরবানির পশুর হাট না বসানোর সুপারিশ করে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম গত ৫ জুলাই বলেছিলেন, গতবছর কোরবানির পশুর হাট ফিজিক্যাল হওয়ার কারণে সংক্রমণ বেড়ে যায় মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘সেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে অনেক সময় লেগেছিল। যে কারণে এবার পশুর হাট ফিজিক্যাল না করে অনলাইনে করার সুপারিশ করা হয়েছিল।’

কিন্তু সে সুপারিশ উপেক্ষা করে কেবল ঢাকাতেই বসেছিল ১৯টি হাট। পুরো দেশে যেসব হাট বসেছিল সেখানেও স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না। অধিদফতরও বলেছিল পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে। এটা বেশ উদ্বেগজনক।

করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বগতি সামাল দেওয়া যাবে কিনা সে সংশয় জানিয়ে অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

আগের বিধিনিষেধ খুব একটা কাজে আসেনি জানিয়ে অধ্যাপক খুরশিদ আলম বলেন, ‘সীমান্তবর্তী জেলায় সংক্রমণ কিছুটা কমেছে। তবে আরও কিছুদিন পর বিধিনিষেধের প্রভাব বোঝা যাবে।’

আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘মানুষের ভিড় থেকেই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। সংক্রমণের উৎস অরক্ষিত রেখে কাউকে স্বাস্থ্যবিধি মানানোর জন্য মাস্ক পরতে বলাও ঠিক নয়।’

ঈদের আগে কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করায় গভীর উদ্বেগ জানায় কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটি। কমিটি বিধিনিষেধ শিথিল করার পরিবর্তে আগের বিধিনিষেধ আরও ১৪ দিন বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সেটাও আমলে নেওয়া হয়নি।

এতে করে ‘অবস্থা খুবই ভয়াবহ হবে’ মন্তব্য করেছেন কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান। ‘এই শিথিল লকডাউনের ফল দেখা যাবে পরের সপ্তাহে কিংবা তার পরের সপ্তাহে।’ বলেন তিনি।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *