Main Menu

সিলেটে হাসপাতাল ও রোগী বহনে ছুটে চলেছে অ্যাম্বুলেন্স

বুধবার রাত ৯ টার দিকে টার দিকে নগরীর পায়রা এলাকা থেকে অ্যাম্বুলেন্স চেয়ে এক ব্যক্তি কল দেন। তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। আমি ১০ মিনিটের মধ্যে তার বাসায় সামনে অ্যাম্বুলেন্স প্রেরণ করি। তবে অ্যাম্বুলেন্স যাওয়ার একটু আগেই তিনি মারা যান’ কথাগুলো বলছিলেন সিলেট অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে অ্যাম্বুলেন্স চেয়ে ১০টা ফোন আসলে তারমধ্যে ৭ থেকে ৮ টাই করোনায় আক্রান্ত রোগীদের বহনের জন্য ডাকা হয়। এছাড়া সম্প্রতি অ্যাম্বুলেন্সে চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুন। আমাদের ১০০ এর উপরে অ্যাম্বুলেন্সের বেশিরভাগই ২৪ ঘণ্টা সেবা দিচ্ছে।’

এসব কথার সত্যতা মিলে সরেজমিনে ঘুরেও। বুধবার রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সামনে সড়কে দাঁড়িয়েছিন এ প্রতিবেদক। এই একঘণ্টার মধ্যে মদিনা মার্কেট থেকে রিকাবীবাজারে দিকে ১৭টি অ্যাম্বুলেন্স যায়। আর রিকাবীবাজারের দিক থেকে মদিনা মার্কেট সড়কে ৭টি অ্যাম্বুলেন্স ফেরত আসে। এরমধ্যে একটি অ্যাম্বুলেন্স সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ছিল।

এছাড়া সিলেটের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে প্রতিনিয়ত রোগী, মরদেহ নিয়ে সিলেট প্রবেশ এবং বের হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কঠোর লকডাউন আর বৃষ্টির ফলে ফাঁকা সড়কগুলোতে দ্রুত গতিতে ছুটছে অ্যাম্বুলেন্স। করোনার আতঙ্কের নগরে বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা আর রাতে এসব অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। যখনই অ্যাম্বুলেন্স যাওয়া-আসা করছে তখনই মানুষ থমকে দাঁড়াচ্ছেন। পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করছেন। অ্যাম্বুলেন্স চলে যাওয়ার পর কয়েকমিনিট পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনাও চলছে। জটলা বেঁধে আলোচনার উঠে আসছে সিলেটের করোনা পরিস্থিতি। আলোচনা হচ্ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়েও। তবে এসব আলোচনার দুয়েকমিনিট পর স্থমিত হয়ে পড়ে। ভয়, আতঙ্ক দূরে সরে যায়। সামাজিক দূরত্ব, স্বাস্থ্যবিধি দৌড়ে পালায়। মাস্ক গলায়, থুতনিতে ঝুলে পড়ে।

কঠোর লকডাউনে ঘরে থাকার পরিবর্তে মানুষ অযথা আড্ডা দিচ্ছে। পুলিশের সাথে খেলছে চোর-পুলিশ খেলা। এ খেলায় চোর জিতে, জিতে করোনাও। তাই তো কঠোর লকডাউনের মধ্যেও সিলেট বিভাগে করোনায় সংক্রমণের রেকর্ড গড়ে। গড়ে মৃত্যুর রেকর্ডও। গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট রেকর্ড ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর শনাক্ত কয়েকদিন ধরেই ২৫০ থেকে সাড়ে ৩শ’র কোটায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

এমন অবস্থায় সংকট বাড়ছে হাসপাতালগুলোতেও। সিলেটের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালের করোনা ইউনিটগুলো রোগীতে পরিপূর্ণ। কোথাও স্বস্থির খবর নেই। এরমধ্যে অস্বস্তি বাড়াচ্ছে অক্সিজেন সংকটের শঙ্কা। ইতোমধ্যে সিলেটে সরবরাহ কমেছে অক্সিজেনের। অথচ এই সময় সিলেটে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে বহুগুন বেড়েছে।

সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটিতে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ১০০ শয্যা থাকলেও সেখানের ৯৯ শয্যাতেই রোগী ভর্তি রয়েছেন। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) শয্যা ১৬টি রয়েছে যার মধ্যে ১৫টিতে রোগী রয়েছেন। ১৬ শয্যার মধ্যে দুটি আইসিইউ বরাদ্দ রয়েছে ডায়ালাইসিস রোগীদের জন্য।

তবে, শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি শতভাগ রোগীদের অক্সিজেনের প্রয়োজন হলেও পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১০ হাজার লিটার সেন্ট্রাল লাইন অক্সিজেন রয়েছে হাসপাতালটিতে। প্রতিবার তিন হাজার লিটার অক্সিজেন কমে এলেই অক্সিজেন সরবরাহ কোম্পানী স্প্রেকটা সেটি পরিপূর্ণ করে দেন। এটি সফটওয়ারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই করা হচ্ছে।

সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, বর্তমানে ভর্তি হওয়া শতভাগ রোগীদেরই অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে। হাসপাতালটিতে অক্সিজেনের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। তবে আগে যেখানে রোগীদের ৫ থেকে ৮ লিটার অক্সিজেনের প্রয়োজন হত সেখানে এখন ১৫ থেকে ২০ লিটার প্রয়োজন হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ওয়ার্ডে ভর্তি অনেক রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন হলেও সঙ্কটের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ এখানে মাত্র ১৬টি আইসিইউ রয়েছে। তারমধ্যে ১৫টিতেই রোগী ভর্তি রয়েছেন।

আর জহিরুল ইসলাম বলেন, অ্যাম্বুলেন্সগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ প্রচুর কমেছে। শতকরা হিসেবে যদি বলি তাহলে ৬০ শতাংশের মতো সরবরাহ কমেছে।

এদিকে, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানান, শামসুদ্দিনে ১০ হাজার লিটার ও ওসমানীতে ৩০ হাজার লিটারের নিজস্ব প্লান্ট থাকলেও নিয়মিত অক্সিজেনের যোগান মিলছে না। দেশের অন্যান্য জায়গায় অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নির্ধারিত দুটি কোম্পানি নিজস্ব পরিবহনের স্বল্পতা দেখিয়ে নিয়মিত অক্সিজেন সরবরাহ করছে না। এ নিয়ে বড় অক্সিজেন সংকটের আশংকা রয়েছে।

অক্সিজেন সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার চিঠি দিয়েছেন জানিয়ে তিনি জানান, ক্রিটিক্যাল করোনা রোগী বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেন খরছ হচ্ছে বেশি। আবার অনেক সময় বেশি খরছ হওয়ার কারণে প্ল্যান্টগুলো প্রেশার নিতে পারছে না। সব মিলিয়ে হয়তো বড় অক্সিজেন সংকটে পড়তে যাচ্ছে সিলেট।

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.