Home » ব্রডব্যান্ডে কাঙ্ক্ষিত গতি থাকবে তো

ব্রডব্যান্ডে কাঙ্ক্ষিত গতি থাকবে তো

সরকার ঢাকাসহ প্রান্তিক পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের প্যাকেজ (গতি ও মূল্য) নির্ধারণ করে দিলেও গ্রাহক তার কাঙ্ক্ষিত গতি পাবেন কিনা তা নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এটা শেয়ারড ব্যান্ডউইথ, একই সময়ে সর্বোচ্চ আট জন ব্যবহার করতে পারবেন। ফলে কাঙ্ক্ষিত গতি গ্রাহক পাবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রসঙ্গত, বেঁধে দেওয়া সীমায় এখন থেকে সারাদেশে এক রেটে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পাবেন গ্রাহকরা। ৫ এমবিপিএস ৫০০, ১০ এমবিপিএস ৮০০ ও ২০ এমবিপিএস এক হাজার ২০০ টাকায় কিনতে হবে।

শেয়ারড ব্যান্ডউইথের বিষয়ে জানতে চাইলে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম জানান, বিটিআরসি ১:৮ নির্ধারণ করে দিয়েছে। ৫, ১০ ও ২০ এমবিপিএস (মেগাবিটস পার সেকেন্ড) এই অনুপাতে শেয়ার হবে। ১০ ও ২০ স্লটে গ্রাহকরা কিছুটা গতি পেলেও ৫ এমবিপিএস ৮ জন শেয়ার করলে একজন ৬৪০ কেবিপিএস করে পাবে। তিনি বলেন, এই উদ্যোগের ফলে শুরুর আইএসপিগুলোর লোকসান হবে। এনটিটিএন’র (ভূগর্ভস্থ ব্যান্ডউইথ পরিবহন সেবা) ট্রান্সমিশন চার্জ ও আইআইজির চার্জ কমানো হলে ব্যবসায়িক ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা যাবে। তিনি মনে করেন, বড় বড় আইএসপি তাদের সেবা চালিয়ে যতে পারলেও ছোটদের জন্য বিষয়টা কঠিন হয়ে যাবে। তারপরও আমরা আশাবাদী, এনটিটিএন’র ট্রান্সমিশন চার্জ কমানো এবং তা বেঁধে দেওয়া হলে আইএসপিগুলো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া

সরকার ‘এক দেশ এক রেট’ ঘোষণার আগে বিটিআরসি ইন্টারনেট সেবার মূল্য নির্ধারণের প্রথমে তিনটি স্লট নির্ধারণ করে। স্লট এ-তে সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি বা আইটিসির (ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল) ব্যান্ডউইথের দাম নির্ধারণ করা হয়।
স্লট বি-তে এনটিটিএন ট্রান্সমিশন চার্জ, ব্যবসায়িক খরচ ও মুনাফা যোগ করে আইআইজির মূল্য (ব্যান্ডউইথের) নির্ধারণ করা হয়।
আর স্লট সি-তে এনটিটিএন’র চার্জ, ব্যবসায়িক খরচ ও মুনাফা যোগ করে আইএসপি’র মূল্য নির্ধারণ করা হয়, যা হলো গ্রাহক পর্যায়ের ইন্টারনেট মূল্য। তারপর ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ প্যাকেজ (শেয়ারড ১:৮) ৫, ১০ ও ২০ এমবিপিএস ঘোষণা করে। এর ট্যারিফ নির্ধারিত হয় যথাক্রমে সর্বোচ্চ ৫০০, ৮০০ ও এক হাজার ২০০ টাকা।

এনটিটিএন-এ বিনিয়োগ বেশি, ঝুঁকিও বেশি

এনটিটিএন প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাট হোম-এর হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার আব্বাস ফারুক বলেন, সরকার এনটিটিএন’র জন্য রেট ঠিক করছে। ‘এক দেশ এক রেট’ ঘোষণা দেওয়ার আগে এটা ঠিক করা হলে ভালো হতো। তবুও যে এটা হতে যাচ্ছে সেটা বড় ব্যাপার। তিনি জানান, এনটিটিএন’র রেট ও প্রাইস নির্ধারিত হলে ১২ বছরের একটা পেন্ডিং এজেন্ডা বাস্তবায়ন হবে। এই ঘোষণায় এনটিটিএনগুলো লাভবান হবে নাকি ক্ষতির মুখে পড়বে জানতে চাইলে আব্বাস ফারুক বলেন, এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ বেশি, ফলে ঝুঁকিও বেশি। রেট ও প্রাইস ঠিক হলে ঝুঁকি কমে আসবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, আমরা একটায় লস করলেও হয়তো অন্যটা দিয়ে পুষিয়ে নিতে পারবো। তবে তিনিও সন্দিহান, এই শেয়ারড ব্যান্ডউইথ নিয়ে গ্রাহকরা কী করবে। মেইল চেক করা ছাড়াতো আর কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) অপটিম্যাক্স কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের পরিচালক ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ইমদাদুল হক বলেন, সরকার যদি এনটিটিএন’র ট্রান্সমিশন খরচ কমিয়ে একটা দাম বেঁধে দেয় তা হলে আইএসপির কাছে আমরা আরও কম দামে ব্যান্ডউইথ বিক্রি করতে পারবো। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম কমবে নিশ্চিতভাবে। এতে কোনও স্টেকহোল্ডারের লোকসান হবে না। ট্রান্সমিশন খরচ কমলে গতির ব্যাপারটায় জরুরিভিত্তিতে নজর দিতে হবে বলেও তিনি মনে করেন। কারণ ৫ এমবিপিএস নিয়ে গ্রাহক কখনও ১ এমবিপিএস, কখনও আরও কম গতি পবেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৫ এমবিপিএস ব্যান্ডউইথের ক্রয়মূল্য ২ হাজার টাকা, সেই সঙ্গে ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। ঢাকায় প্রতি এমপিবিএস ব্যান্ডউইথের ট্রান্সমিশন খরচ ২০০ টাকা। ঢাকার বাইরে ৩০০ টাকা। এনটিটিএন’র এই ট্রান্সমিশন খরচ কমিয়ে মূল্য বেঁধে দিলে (সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা) খরচটা কমে আসবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। উল্লেখ্য, দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গ্রাহক সংখ্যা এখন ৯৮ লাখ ৮১ হাজার। এই সংখ্যা দেশের মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ১৭ শতাংশ। কিন্তু ব্রডব্যান্ডের গ্রাহকরা দেশের মোট ব্যবহৃত ব্যান্ডউইথের (২,৪০৯ জিবিপিএস) ৫৮ শতাংশ ব্যবহার করে। বাকি ৪২ শতাংশ ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হয় মোবাইল ইন্টারনেটে। মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দেশে ১০ কোটি ৫৬ লাখ ২০ হাজার।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *