Main Menu

এবার রিটার্ন জমা না দিলেই বিপদ

আগামী অর্থবছরের (২০২১-২২) বাজেট বাস্তবায়নে করজাল বিস্তৃত করার পাশাপাশি রিটার্ন জমার সংখ্যা বাড়ানোর উপর জোর দিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআর। নতুন করে করহার না বাড়িয়ে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য পূরণে করজাল বাড়ানোর ছক আঁকা হচ্ছে। এ জন্য নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নতুন অর্থবছরে বেশ কিছু কাজে টিআইএন (করদাতা সনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এরই মধ্যে করদাতা টিআইএন ও করযোগ্য আয় রয়েছে, অথচ রিটার্ন জমা দেন না- এমন ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার কমসূচি হাতে নিয়েছে এনবিআর।

এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, বিগত দিনগুলোতেও রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল, তবে এ ব্যাপারে কড়াকড়ি ছিল না। এবার রিটার্ন জমা পদ্ধতি আরও সহজ করা হবে, রিটার্ন জমা না দিলে অনেকেই বিপদে পড়বেন। বিশেষ করে যাদের রিটার্ন জমা দেওয়ার সামর্থ্য বা বাধ্যবাধকতা আছে তারা যদি রিটার্ন জমা না দেয়, তাহলে কর অফিসগুলো স্বপ্রণোদিত হয়ে তাদের কর নির্ধারণ করে কর নথি চালু করে দেবে।

মূলত করজাল ও রিটার্ন জমার সংখ্যা বাড়াতে এই উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ইতোমধ্যেই দেশের সব কর অঞ্চলে এ ব্যাপারে কার্যক্রম শুরু করতে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, যারা রিটার্ন জমা দেন না- এমন ব্যক্তিদের আয়করের ভাষায় ‘নন-ফাইলার’ বলা হয়। এনবিআরের তথ্যমতে এখন টিআইএনের তুলনায় নন-ফাইলারদের সংখ্যাই বেশি। বর্তমানে ৬১ লাখ ৫১ হাজার ৮৬৬ ই-টিআইএনধারী রয়েছেন। এর মধ্যে ৫০ লাখ টিআইএনধারীরই রিটার্ন জমা দেওয়ার সামর্থ্য বা বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু রিটার্ন জমা দিয়েছেন মাত্র ২৫ লাখ ৫৪ হাজার ৪৩ জন। অর্থাৎ ৪৯ শতাংশ করযোগ্য টিআইএনধারী রিটার্ন জমা দিচ্ছেন না।

আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সব টিআইএনধারীর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক এবং নিয়মমাফিক রিটার্ন জমা না দিলে আর্থিক জরিমানার বিধান রয়েছে। যদি কোনও ব্যক্তি করযোগ্য আয় থাকা সত্ত্বেও রিটার্ন জমা না দেন তাহলে সংশ্লিষ্ট কর কর্মকর্তা আয়কর অধ্যাদেশের ৮৪ ধারা অনুযায়ী কর নির্ধারণ করে কর নথি চালু করতে পারেন।

আয়কর অফিস থেকে মানুষের কর নির্ধারণ করে কর নথি চালু করলে রাজস্ব বাড়াতে সহায়ক হলেও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্স ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে কর নির্ধারণ করলে সমস্যা নেই। এতে রিটার্ন জমা বাড়ার পাশাপাশি কর কমপ্লায়েন্স বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু আংশিক বা অসত্য বা হয়রানিমূলক তথ্যের ভিত্তিতে কর নির্ধারণ করা যৌক্তিক হবে না।

জানা গেছে, গত বছর থেকে চট্টগ্রামের কর অঞ্চল-২ স্বপ্রণোদিত হয়ে নন-ফাইলারদের কর নথি চালু করে। এতে বেশ সুফলও পাওয়া যায়। গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এ কর অঞ্চলে টিআইএনধারীর সংখ্যা ছিল ৯৫ হাজার ৫৮৩ জন। সেখান থেকে রিটার্ন জমা দেন ৩২ হাজার ২৩৯ জন। এরপর আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী কর অফিস নন-ফাইলারদের তথ্য সংগ্রহ করতে সার্কেলগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ হাজার ৬৪২ জনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সেখান থেকে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪ হাজার ৬৪৪ জন রিটার্ন জমা দেন। অর্থাৎ নন-ফাইলারদের মধ্যে প্রায় ১৬ শতাংশ রিটার্ন জমা দিয়েছেন।

এনবিআর মনে করছে, এই পদক্ষেপ করজাল ও রিটার্ন জমার সংখ্যা বাড়াতে বেশ কার্যকর। সব কর অঞ্চল নন-ফাইলারদের রিটার্ন জমায় এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ নতুন আরও অন্তত ৫ লাখ রিটার্ন পাওয়া যাবে।

এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, করযোগ্য আয় থাকা সত্ত্বেও রিটার্ন জমা না দিলে আয়কর আইন অনুযায়ী জরিমানা, সরল সুদ ও বিলম্ব সুদ আরোপের বিধান রয়েছে। সূত্রগুলো বলছে, আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী বর্তমানে ৩৬ ধরনের কাজে টিআইএন বাধ্যতামূলক আছে। এর সঙ্গে আগামী বাজেটে সঞ্চয়পত্র ক্রয়, ডাকঘর সঞ্চয় স্কিম, বাড়ির নকশা অনুমোদন এবং সমবায় সমিতির রেজিস্ট্রেশন করতে টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।

এদিকে বর্তমানে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর তাদের নীতিমালা অনুযায়ী সঞ্চয়পত্র বিক্রির সময় গ্রাহকদের টিআইএনের তথ্য নিচ্ছে। তাই আয়কর অধ্যাদেশকে সঞ্চয় অধিদপ্তরের নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করতে সঞ্চয়পত্র কেনায় টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.