Home » চলমান লকডাউন আরও ৭ দিন, কাল প্রজ্ঞাপন

চলমান লকডাউন আরও ৭ দিন, কাল প্রজ্ঞাপন

সোমবার (১৭ মে) ভোর ৬টা থেকে চলমান বিধিনিষেধ আরও সাতদিনের জন্য বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলমান লকডাউন বা বিধিনিষেধ আগামী ২৩ মে রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত বলবৎ থাকছে। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন আগামীকাল রবিবার জারি করা হবে।

একই সঙ্গে জনসাধারণকে মাস্ক পরতে বাধ্য করতে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন -২০১৮ এর সংশোধনী এনে পুলিশকে ক্ষমতা দেওয়ারও কথা ভাবা হচ্ছে। এ বিষয়ে ডিজি হেলথের কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। ডিজি হেলথের পরামর্শ পেলে তা আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে কেবিনেটে উপস্থাপনের পর রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে। এ নিয়ে ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কারও ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ নেই।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, আমরা সবকিছু এভাবে বন্ধ করে রাখতে চাই না। সবকিছুই স্বাভাবিক নিয়মে চলার জন্য খুলে দিতে চাই। কিন্তু এর জন্য শতভাগ মানুষকে মাস্ক পরতে হবে। ইতোমধ্যেই দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছেন। কিন্তু বাকি ১০ শতাংশ মানুষকে মাস্ক ব্যবহার করানো যাচ্ছে না। এটি নিশ্চিত করতে মোবাইলকোর্টও পর্যাপ্ত নয়। ফলে নির্বাহী আদেশে পুলিশকে দিয়ে আমরা এ কাজটি করাতে চাই। কারণ পুলিশের পক্ষে অলিগলিতে যাওয়া সম্ভব।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি পুলিশ মাঠে নামলে দেশের সব মানুষই মাস্ক ব্যবহার করবে। কিন্তু বিদ্যমান আইনে পুলিশের কাছে সে ধরনের কোনও আইন বা আইনের ধারা নেই। বিদ্যমান আইনে ডিজি হেলথের নির্দেশে সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে জেলা প্রশাসক মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করতে পারে, এই ক্ষমতা দেওয়া আছে। কিন্তু একটি উপজেলায় বা জেলায় ১০টির বেশি মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাই শতভাগ মানুষকে মাস্ক ব্যবহার করতে এই ১০টি মোবাইলকোর্ট পর্যাপ্ত নয় বিধায় আমাদের পুলিশের কথা ভাবতে হচ্ছে। এজন্যই আইনের কোথাও না কোথাও পুলিশকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সেটি কীভাবে করা যায় তার উপায় খুঁজতে ডিজি হেলথকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারাদেশের বাজারঘাট-দোকানপাট খুলে দেওয়ার পরে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে প্রতিটি মানুষ যেন মাস্ক পরে। করোনা সংক্রমণ রোধে সিটি করপোরেশন, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে প্রতিটি মানুষ মাস্ক পরছেন সেটি আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। এটি নিশ্চিত করতে না পারলে আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না। শুধুমাত্র এই মাস্ক পরার বিষয়টি নিশ্চিত করতে আমরা পুলিশের হাতে কিছুটা ক্ষমতা দেওয়ার কথা ভাবছি। অন্য কোনও বিষয় তাদের আওতায় দেওয়া হবে না। এ নিয়ে বিভ্রান্তিরও কিছু নাই বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

ফরহাদ হোসেন আরও বলেন, বিদ্যমান আইনে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পারি। এক্ষেত্রে পুলিশের হাতে ক্ষমতা দেওয়া হলে তারা মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে সাবলীলভাবে কাজ করতে পারবে। সাধারণ মানুষ যেভাবে বাজারে গেছে, মাস্ক না পরে গ্রামের বাড়িতে গেছে এবং ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ইতোমধ্যে দেশে চলে এসেছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে আমরা আশঙ্কা করছি করোনা পরিস্থিতি আগামী ২১ মের পর থেকে আরও খারাপ হতে পারে। সে জন্যই ২৩ মে পর্যন্ত বিধিনিষেধ বাড়ানো হচ্ছে।

তিনি জানান, এমনিতেই ঈদের ৮/১০ দিন পর ছাড়া মানুষজন রাজধানীতে আসে না। তাই আপাতত ঈদের পর চলমান বিধিনিষেধ মেনে চলার মেয়াদ আরও সাতদিন বাড়ানো হবে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, মানুষ যেভাবে বাড়ি গেছে, যেভাবে মার্কেট করেছে তাতে সংক্রমণ বাড়বে, এ নিয়ে সন্দেহের কোনও কারণ নেই। তবে আবশ্যিকভাবে শতভাগ জনগোষ্ঠীকে মাস্ক পরানোর বিকল্প নেই। এটি বাস্তবায়নের জন্যই বিদ্যমান আইনে পুলিশকে সম্পৃক্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে। বর্তমান আইনে কোথাও পুলিশ সম্পৃক্ত নেই বলেও জানান তিনি।

সূত্র জানিয়েছে, দেশে করোনা সংক্রমণ ও করোনায় মৃত্যুহার কিছুটা নিম্নগামী হলেও ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় রয়েছে সরকার। এ কারণেই চলমান ‘লকডাউন’ ঈদের পরেও অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এদিকে চলতি বছর করোনা সংক্রমণ বাড়ায় গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ঢিলেঢালা লকডাউন পালন হলেও সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ায় ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর লকডাউন’ ঘোষণা করে সরকার। কয়েক ধাপে বাড়িয়ে চলমান সেই লকডাউনের মেয়াদ ১৬ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বলবৎ রয়েছে। এসময় আন্তঃজেলা বাস সার্ভিস, ট্রেন ও লঞ্চ বন্ধ রাখা হয়েছে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *