Main Menu

ভারতবর্ষে এ বড় কঠিন সময় অতিবাহিত হচ্ছে

১৬ই মার্চ, ২০২০। মিশিগানে বাড়িতে থেকে কাজ করার নির্দেশ বেরোল। বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া আমরা ক’জন মিলে করোনার পরিসংখ্যানতত্ত্ব নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। ছাত্রছাত্রী, অধ্যাপক সবাই মিলে একটা কাজ, নিজেদের মনের দুশ্চিন্তা কাটানোর জন্যে, কিছু একটা অর্থপূর্ণ করছি এই ভ্রান্তিবিলাস।

সেই কাজ করে চলেছি আমরা এক বছরের ওপর। আমরা একটা করোনা ট্র্যাকার বানাই যেটা রোজ ভারতবর্ষ ও তার প্রতিটি রাজ্যের দৈনিক সংখ্যাভিত্তিক একটি মূল্যায়ন করে এবং ভবিষ্যতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা কোথায় যেতে পারে তার একটা পূর্বাভাস দেয়।

২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ভারতবর্ষের করোনা কার্ভ তার পিক বা তুঙ্গে পৌঁছয় তারপর তার অবরোহণ ২০২১ ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত।

ভারত ও বিশ্বের সব বিশেষজ্ঞরা এই অভূতপূর্ব ঘটনার ব্যাখ্যা খুঁজতে ব্যস্ত, দেশের লোকজন নিশ্চিন্তে হাফ ছাড়ছে করোনার কবল থেকে মুক্তি পেয়ে, ভরে উঠছে আবার ট্রেন, বাস, রেস্তোরাঁ। জমে উঠছে বিয়েবাড়ি, পালাপার্বণ, হর কি পউরিতে সমবেত পবিত্র স্নান। সঙ্গে অগ্নিময় রাজনীতি, বিরাট নির্বাচনী জমায়েত।

তারই মধ্যে ভাইরাস অন্তরালে তার কাজ করে চলেছে, দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলতে নামার আগে, সে নিজেকে আরো সতেজ ও সবল করে তুলছে, অতর্কিতে ছোবল মারবে, যখন আমরা আমাদের মাস্ক নামিয়ে দিয়েছি, দিক দিগন্তের অবগুণ্ঠন আবার তার আক্রমণের আহবানে খোলা।

মহামারির ইতিহাস পড়লে দেখা যায় যে দ্বিতীয় ঢেউ অনেক সময়েই হয়ে ওঠে জলোচ্ছ্বাস, কারণ ঠিক এই ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি ঘটে বারংবার, মনুষ্যচরিত্রে আসে বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করার স্বভাবগত প্রবৃত্তি ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী ধূর্ত ভাইরাসের ঘটে দ্রুত বিবর্তন। ভারতেও এই দুটি প্রক্রিয়ার সমাপাতন ঘটেছে। নূতন সব রূপ ধারণ করেছে ভাইরাস, তার জিনোমটাকে বদলে নিয়ে।

আর এক বছর সতর্কীকরণের বাধা নিষেধ মেনে ক্লান্ত আমরা বেরিয়ে পড়েছি সেই শক্তিমান ভাইরাসের সহজ শিকার হয়ে। নিঃশব্দে পা টিপে এসে ভাইরাস আজ আমাদের এই বিস্ফোরক মৃত্যু-সংখ্যায় নিয়ে গেছে। প্রতি তিনদিনে দশ হাজার মৃত্যু ঘটছে সরকারি সংখ্যা অনুযায়ী। আসল মৃত্যু-সংখ্যা এর থেকে অনেক বেশি বলেই মনে করেন বহু বিশেষজ্ঞ। অধুনাপ্রাপ্ত কিছু নথি তার অপ্রত্যক্ষ প্রমাণ।
ফেব্রুয়ারির গোড়া থেকে বোঝা গেছিল বাড়ছে আবার সংক্রমণ সংখ্যা। তখনই সমস্ত সভা সমাবেশ, সমবেত অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিলে, এ রাজ্য থেকে ও রাজ্যে যাতায়াত নিয়ন্ত্রিত করলে, মাস্ক পরে থাকলে, ব্যাপক টিকা অভিযানে সামিল হলে আজ আমাদের এ অবস্থা হত না।

কিন্তু আমরা ও দেশের নেতৃত্ব প্রবল বিক্রমে অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দিয়ে গেছি। আজ আমরা বুঝতে পারছি গত বছরের দেশ জোড়া ‘লকডাউন’ ভাইরাস কার্ভকে প্রশমিত করতে, সময়ের ওপর বিস্তৃত করতে বা ‘ফ্ল্যাটেন’ করতে কতটা সাহায্য করেছিল।

কিন্তু গণ-হাহুতাশ করে লাভ নেই। অতীতের একটি কণাও বদলানো যাবে না। আমাদের মডেল অনুযায়ী পিক আসছে মে মাসের প্রথম দুই সপ্তাহের মধ্যে, তারপর সেটা নামতে নামতে জুনের শেষ, জুলাই। কিন্তু মনে রাখবেন এটা শেষ ঢেউ নয়। এবার যে ভুল করেছি আমরা আর যেন না হয়। টিকা নিন। এটাই আমাদের এই যুদ্ধ থেকে বেরোনোর বিজয়-টীকা। তার পরেও বাইরে বেরোলে মাস্ক পরে থাকুন। রাষ্ট্র যেখানে অনুপস্থিত, ব্যক্তিকেই তার সামাজিক কর্তব্য করতে হবে। দেখছেন না হাসপাতালের বেড, অক্সিজেনের সিলিন্ডার এসব খুঁজে দিচ্ছে কারা, টুইটারে আর ফেসবুকে?

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.