Home » ছত্রাকজনিত চর্মরোগ ও তার চিকিৎসা

ছত্রাকজনিত চর্মরোগ ও তার চিকিৎসা

 অনলাইন ডেস্ক: ছত্রাকজনিত চর্মরোগ কি?

ত্বকে ছত্রাকের সংক্রমণের কারণে ছত্রাকজনিত চর্মরোগ হয়। কেরাটিন ( Keratin) নামক এক ধরণের আমিষ আমাদের ত্বক, চুল এবং নখের গঠনে সহায়তা করে। ছত্রাক এই কেরাটিন ধ্বংস করে ত্বকের ক্ষতি করে।

 ছত্রাকজনিত চর্মরোগ কিভাবে ছড়ায়?

  1. দাদ বা Ringworm জাতীয় সংক্রমণ মানুষের মাধ্যমে ছড়ায়
  2. ব্যবহৃত বিছানার ছাদর, তোয়ালে, চিরুনী এছাড়া অন্যান্য ব্যক্তিগত সামগ্রী অন্য কেউ ব্যবহার করলে
  3. ব্যায়মগার এবং সুইমিং পুলের মত স্থান থেকে এথলেটস ফুট (athlete’s foot) ছত্রাক সংক্রমণ ছড়ায়

ছত্রাকজনিত চর্মরোগ হয়েছে কি করে বুঝবেন?
শরীরের কোন অংশে কি ধরণের ছত্রাক সংক্রমণ করেছে তার উপর নির্ভর করে এর লক্ষণ ও উপসর্গগুলো।

ছত্রাকজনিত চর্মরোগ কয়েক ধরণের হয়ে থাকে। যে ধরণের চর্মরোগগুলো বেশি দেখা যায় তা হলো :

ডারমাটোফাইট ইনফেকশন : এক্ষেত্রে সাধারণত ত্বক, নখ এবং চুল আক্রান্ত হয়। এই ধরণের সংক্রমণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ধরণ হলো :

 এথলেটস ফুট : প্রতি ১০০ জনে ২৫ জন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির এই ধরণের চর্মরোগ হয়। ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়ার মিলিত সংক্রমণের ফলে ত্বক শুষ্ক, লালচে, খসখসে হয় এবং খোসপাঁচড়ার মত চুলকায়। মাঝে মাঝে ত্বকে ফুসকুড়িও দেখা যায়। হাতের তালুর ভাঁজে, আঙ্গুলের পাশে এবং পায়ের আঙ্গুলের মাঝে এই সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। আক্রান্ত স্থান থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে যেমন সুইমিং পুলে সাঁতার কাটার মাধ্যমে এই রোগ হতে পারে।

 নখের সংক্রমণনখের ছত্রাকজনিত চর্মরোগকে Onychomycosis বলে। এর মধ্যে সাধারণত Tinea Unguium রোগটিই বেশি হতে দেখা যায়। এতে নখ ভঙ্গুর, পুরু এবং নষ্ট হয়ে যায়। পায়ের নখ এবং হাতের নখ উভয়ই এতে আক্রান্ত হতে পারে।

শরীরে দাদ : শরীরের যে অংশগুলো অনাবৃত বা উন্মুক্ত থাকে যেমন : পেট এবং হাত-পা সেই অংশগুলো ছত্রাকের সংক্রমণের ফলে লালচে হয়ে যায় এবং রিং এর মতে গোলদাগ পড়ে। রিং এর কিনারগুলো অনেকটা আঁশের মত হয়ে যায় এবং মাঝের অংশটুকু পরিষ্কার থাকে। এগুলো শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে যেতে পারে। গৃহপালিত পশু থেকে সাধারণত এই রোগ ছড়ায়।

ইন্টারট্রিগো : ক্যানডিডা আ্যালবিকানস (Candida albicans) নামক ছত্রাকের সংক্রমণের মাধ্যমে এই রোগ হয়। এটি ত্বকে এবং পরিপাকতন্ত্রে বাস করে। ত্বকের সঙ্গে ত্বকের স্পর্শ লাগে এমন অংশে যেমন-বগলে, কুঁচকিতে, শরীরের মেদ/ভুড়িতে, স্তনের নিচে যেখানে উষ্ণ এবং স্যাঁতস্যাঁতে বা ভিজা থাকে সেসব অংশে এর সংক্রমণ হয়। এক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানে ফোড়া হয়, চুলকায়, দাগ পড়ে এবং আক্রান্ত স্থানে হলদেটে সাদা রঙের দাগ পড়ে (White-Yellow curd)।

ইকথায়োসিসঃ
শীত এলে বেশ কিছু চর্মরোগ দেখা যায়। এমন একটি রোগের নাম ইকথায়োসিস, যা শীত এলেই বাড়ে। এ রোগটি আবার অনেক ধরনের আছে। এটি একটি জন্মগত রোগ এবং রোগটি শিশুকাল থেকেই লক্ষ করা যায়। দেখা গেছে, প্রতি হাজারে একজন এ রোগে ভুগে থাকে। নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যে আক্রান্তের হারও সমান। এ রোগে যারা আক্রান্ত হয়, তাদের হাত ও পায়ের দিকে লক্ষ করলে দেখা যাবে, ত্বক ফাটা ফাটা এবং ছোট গুঁড়ি গুঁড়ি আঁশ পায়ের সামনের অংশ ও হাতের চামড়ায় দৃশ্যমান।

তবে হাত ও পায়ের ভাঁজযুক্ত স্থান থাকবে সম্পূর্ণই স্বাভাবিক। তাদের কাছে প্রশ্ন করলে তারা বলবে, রোগটি তার দেহে শৈশব থেকেই আছে এবং প্রতিবছর শীত এলেই এটা বেড়ে যায়। এদের হাত ও পায়ের তালুর দিকে তাকালে দেখা যাবে, হাতের রেখাগুলো খুবই স্পষ্ট, যা কিনা সাধারণ লোকের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় নয়। তাদের অ্যালার্জির বিষয়ে প্রশ্ন করলে বলবে, তাদের নাক দিয়ে প্রায়ই পানি পড়তে থাকে অর্থাৎ তাদের সর্দি অবস্থা থাকে। বাবা-মায়ের ব্যাপারে খবর নিলে আরও পরিষ্কারভাবে দেখা যাবে, তাদেরও কোনো না কোনো ধরনের অ্যালার্জিক সমস্যা ছিল বা এখনো আছে।এ রোগটি কখনই একেবারে ভালো হয় না। তবে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, যদি ত্বকের গায়ে তৈলাক্ত পদার্থ নিয়মিত মাখা যায়।

সে ক্ষেত্রে আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড খুবই কার্যকর। এটি পাওয়া না গেলে গ্লিসারিনের সঙ্গে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলেও খুবই ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে গ্লিসারিন ব্যবহারের সমস্যা হচ্ছে, ত্বক আঠালো হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে একটি টাওয়েল দিয়ে অতিরিক্ত গ্লিসারিনটুকু চেপে তুলে নিলে ত্বকের আঠালো বা চটচটে ভাব কেটে যায় এবং ত্বক খুবই ভালো রাখা সম্ভব।

অ্যাকজিমাঃ
আরেকটি শীতের রোগ হলো অ্যাকজিমা। এটিও শীত এলেই বাড়তে পারে। তাই অ্যাকজিমায় আক্রান্ত রোগীকে সব সময়েই বলে দিই, ভালো হওয়ার পরও যেন সেই স্থানটি শুষ্ক হতে দেওয়া না হয়। একটি বিশেষ ধরনের অ্যাকজিমা আছে, যেটির নাম হচ্ছে অ্যাকজিমা ক্রাকুয়েলেটাম। এটি সাধারণত চল্লিশোর্ধ্ব বয়সীদের হয়। এটি শীত এলেই বাড়ে। কারণ শীতে বাতাসের জলীয় পদার্থ কমে যায়। এ ক্ষেত্রে শুষ্ক ত্বকের গায়ে ফাটা ফাটা দাগ ও হালকা পরিমাণ আঁশ লক্ষ করা যায়। কখনো কখনো ত্বক পুরু হয়ে পড়তেও দেখা যায়। একটা কথা মনে রাখা খুব প্রয়োজন, ত্বক চুলকালে ত্বক পুরু হতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তা শক্ত ও অস্বাভাবিক আকার ধারণ করে থাকে।

কখন ডাক্তার দেখাবেন 
ছত্রাকজনিত চর্মরোগের লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়া মাত্র ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

কি ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে
১।শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা
২।ত্বক, নখ এবং চুলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা

কি ধরণের চিকিৎসা আছে ?
ডাক্তারের পরামর্শ ও নির্দেশনা অনুযায়ী রোগের ধরণ, মাত্রা এবং রুগীর বয়স অনুসারে চিকিৎসা করাতে হবে। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে-
১।আক্রান্ত স্থানে ছত্রাক প্রতিরোধক (Antifungal) ক্রিম, লোশন এবং পাউডার লাগানো
২।ছত্রাক নাশক ঔষধ সেবন

কোথায় চিকিৎসা করাবেন ?

  1. উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে­ক্স
  2. জেলা সদর হাসপাতাল
  3. বেসরকারী হাসপাতাল
  4. চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ

 কিভাবে ছত্রাকজনিত চর্মরোগ প্রতিরোধ করা যায়  

  1. গোসলের পর ভালোমত শরীর মুছতে হবে
  2. পোশাক এবং অর্ন্তবাস যথাসম্ভব ঢিলেঢালা পড়তে হবে
  3. সুতির মোজা এবং অর্ন্তবাস ব্যবহার করতে হবে
  4. কারো ব্যবহৃত তোয়ালে, চিরুনী ব্যবহার করা ঠিক না
  5. বিছানার তোষক, চাদর ও কাপড় কিছুদিন পর পর পরিষ্কার করতে হবে
  6. মাথার ত্বকে দাদ (Scalp Ringworm) এ আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত বালিশ, টুপি, চিরুনী, কাঁচি ফেলে দিতে হবে বা জীবাণুমুক্ত করতে হবে
  7. পা শুকনা রাখতে হবে
  8. ডায়াবেটিস যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *