Home » কাল থেকে কঠোর লকডাউনে বাংলাদেশ

কাল থেকে কঠোর লকডাউনে বাংলাদেশ

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এ আট দিন সরকারি-বেসরকারি-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে গণপরিবহন ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তবে জরুরি সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান/সংস্থা খোলা থাকবে। খোলা থাকবে শিল্পকারখানা। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম গতকাল দুপুরে প্রজ্ঞাপন জারির পরপরই বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পৃথক সার্কুলার জারি করবে। পরে সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকিং লেনদেন সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা জানিয়ে সার্কুলার জারি করা হয়। শুধু আমদনি-রপ্তানি প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে বন্দরসংলগ্ন ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে লকডাউন চলাকালে ব্যাংক কর্মীদের কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এটিএম ও কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন চালু রাখার সুবিধার্থে এটিএম বুথগুলোয় পর্যাপ্ত নোট রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গতকাল এ কঠোর লকডাউনের খবরে অবশ্য ব্যাংকের শাখাগুলোয় গ্রাহকের অতিরিক্ত ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ব্যাংক বন্ধ থাকবে এমন খবরে গ্রাহকরা প্রয়োজনীয় টাকা তুলতে শাখাগুলোয় ভিড় করেন।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, লকডাউনের সময় জরুরি ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না। খোলা স্থানে কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনাবেচা করা যাবে ৬ ঘণ্টা। করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) পরিস্থিতি অবনতির কারণে আগের নির্দেশনার ধারাবাহিকতায় ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত ১৩টি বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।

যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে : সব সরকারি-আধাসরকারি-স্বায়ত্তশাসিত-বেসরকারি অফিস/আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ও সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। তবে বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল বন্দর এবং এ-সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। সকল প্রকার পরিবহন (সড়ক, নৌ, রেল, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না। শিল্পকারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে।

লকডাউনের আওতামুক্ত সেবা : আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তাব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞা আওতার বাইরে থাকবে। অতি জরুরি ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনা, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে। খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কেবল খাদ্য বিক্রি/সরবরাহ (সরাসরি/অনলাইন) করা যাবে। শপিং মলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ থাকবে। কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বোরো ধান কাটার প্রয়োজনে কৃষিশ্রমিক পরিবহনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন সমন্বয় করবে। সারা দেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন উল্লিখিত নির্দেশনা বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক তাঁর পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেবেন। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুমা ও তারাবি নামাজের জমায়েত বিষয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা জারি করবে। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ প্রয়োজনে সম্পূরক নির্দেশনা জারি করতে পারবে।

প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে : এদিকে গতকাল সরকার-ঘোষিত ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত আট দিনের বিধিনিষেধ পরিপালনে মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। গতকাল এক ভিডিওবার্তায় এ নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানান প্রতিমন্ত্রী। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আজকের (সোমবার) দেওয়া বিধিনিষেধগুলো যাতে সবাই যথাযথভাবে পালন করে সেজন্য মাঠ প্রশাসনকে বিশেষ করে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো। একই সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী নির্দেশনাগুলো তুলে ধরেন ভিডিওবার্তায়।

লকডাউনের খবরে ঢাকা ছাড়ার হিড়িক : আগামীকাল থেকে দ্বিতীয় দফায় আট দিনের ‘কঠোর লকডাউন’ ঘোষণায় রাজধানী ঢাকা ছাড়ার হিড়িক পড়ে যায় বিভিন্ন পরিবহনে। গতকাল সকাল থেকেই গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালীর বাস টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের চাপ দেখা গেছে। পায়ে হেঁটে, রিকশা/ভ্যান, সিএনজি, ট্রাক, কার, পিকআপ, মাইক্রোবাস যিনি যেভাবে পেরেছেন ঢাকা ছেড়েছেন।

দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ থাকায় এভাবে বিকল্প উপায়ে ছুটতে দেখা গেছে রাজধানীবাসীকে। আবার কাউকে মোটরসাইকেলে করেও যেতে দেখা গেছে। কেউ কেউ পিকআপ কিংবা ট্রাকে গাদাগাদি করে ছুটেছেন গন্তব্যে। তারা বলছেন, জীবন-জীবিকার তাগিদে ঢাকায় এলেও অনিশ্চয়তা নিয়ে আবার ফিরে যাচ্ছেন পরিবারের কাছে। টার্মিনাল ও বাস কাউন্টারগুলোর সামনে হাঁকডাক, জটলা দেখলে মনে হয়েছে ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরার তাড়া। শত শত মানুষের ভিড়। এদের কেউ দিনমজুর, কেউ রিকশাচালক, আবার কেউ নির্মাণশ্রমিক। প্রায় সবার গন্তব্য উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ তাই কারও কারও শেষ ভরসা পণ্যবাহী ট্রাক। তবে এতে পদে পদে পড়েন নানা ভোগান্তিতে। বয়স্ক ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে। ঢাকার অদূরে যারা যাবেন তারা পরিবহন না পেয়ে হেঁটেই যাত্রা করেন। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রোধে গতকাল থেকে এক সপ্তাহের জন্য সারা দেশে লকডাউনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন। এর পর থেকেই নগরজীবনে এক ধরনের চাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যায়। অনেকেই বাজার-সদাই করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। যাদের ঢাকার বাইরে যাওয়ার চিন্তা ছিল তারাও সে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। কেউ কেউ মনে করছেন, এক সপ্তাহের কথা বলা হলেও লকডাউনের সময় আরও দীর্ঘ হতে পারে।

স্বাস্থ্যবিধি না মানলে পোশাক কারখানা বন্ধ : আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউনের মধ্যেও শিল্প-কারখানা চলবে। তবে পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মানতে কারখানাগুলোকে বাধ্য করা হবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে এবার কারখানার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *