Main Menu

তৃতীয় ক্যাবলের অপেক্ষায় দেশ

সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হওয়াকে স্বাধীনতার ৫০ বছরে অন্যতম সেরা অর্জন বলে অভিহিত করেছেন প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা। এ সংযুক্তির ফলে রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়ন, ২০৩১ ও ২০৪১–এ পদার্পণ করা সহজ হবে। সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হওয়ার ফলে আমদানিকারকের দেশ থেকে বাংলাদেশ এখন ব্যান্ডউইথ রফতানিকারকের দেশ।

১৯৯১ ও ১৯৯৪ সালে বিনাখরচে সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তখনকার সরকার বুঝতেই পারেনি এর গুরুত্ব কতখানি। দেশের ‘তথ্য পাচার’ হয়ে যাবে এই আশঙ্কায় প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরপর দুবার তথ্যপ্রযুক্তির মহাসড়কে যুক্ত হওয়ার সুযোগ মিস করলেও ২০০৬ সালে সেই ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি হয়নি। ওই বছরের ২১ মে বাংলাদেশ যুক্ত হয়েছিল সি-মি-উই-ফোর সাবমেরিন ক্যাবলে। যদিও এর জন্য বাংলাদেশকে গুনতে হয়েছিল ৭৫০ কোটি টাকা। এরপর বাংলাদেশ দ্বিতীয় ক্যাবলেও যুক্ত হয়েছে। অপেক্ষা এখন তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের।

জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হওয়াটা আমাদের বড় অর্জনের একটি। প্রথমবার সুযোগ মিস করেছি। পরে সেটা হাতছাড়া হয়নি। সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত না হলে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারতাম না। নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে উদ্বৃত্ত ব্যান্ডউইথের কিছু অংশ রফতানিও করছি।

তিনি যোগ করেন, তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হতে পারলে বাংলাদেশ আরেকটি মাইলফলক অতিক্রম করবে।

বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান বলেন,‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির আগেই আমরা দুটি সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছি। শিগগিরই তৃতীয় ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হবো।’

তবে যে সময়টা আমরা সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হয়েছিলাম, সেটা যদি আরও ৫-১০ বছর আগে হতো তবে আইসিটি খাত দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে যেত বলে তিনি মনে করেন।

বাংলাদেশ থেকে ভারতে ব্যান্ডউইথ আমদানি বন্ধ আছে। আবার চালু হবে কিনা জানতে চাইলে বিএসসিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের চুক্তি ছিল ৩ বছরের। তারা ১০ জিবিপিএস করে ব্যান্ডউউথ নিতো। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওই চুক্তি শেষ হয়। তাদের অনুরোধে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা হয়। তারপর থেকে রফতানি বন্ধ আছে।

তিনি জানান, ভারত আবারও ব্যান্ডউইথ চাইছে। বাংলাদেশ বলেছিল, আগে বকেয়া পরিশোধ করতে। সেই মোতাবেক ভারত বকেয়ার প্রায় ৮০ শতাংশ পরিশোধ করেছে। দেশটির সরকারি টেলিকম অপারেটর বিএসএনএল জানিয়েছে, তাদের ত্রিপুরা রাজ্যে ব্যান্ডউইথের মান খারাপ হয়ে গেছে। এবার তাদের চাহিদা ২০ জিবিপিএস।

মশিউর রহমান জানালেন, সৌদি আরব বাংলাদেশের কাছ থেকে ৬০০ জিবিপিএস ব্যান্ডইউথ চেয়েছে। সৌদি আরব বাংলাদেশকে চুক্তিপত্র পাঠিয়েছিল। বাংলাদেশ ওই চুক্তিপত্রে কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে ফেরত পাঠিয়েছে। ওরা নতুন করে চুক্তিপত্র পাঠালে তাতে দুই দেশ স্বাক্ষর করবে বলে তিনি জানান।

বিএসসিসিএল জানায়, বাংলাদেশের সাবমেরিন ক্যাবলের পূর্ব প্রান্তে চাহিদা বেশি। সবাই সিঙ্গাপুর পর্যন্ত চায়। বেশিরভাগ দেশ বা প্রতিষ্ঠানের ডাটা সেন্টার সিঙ্গাপুরভিত্তিক হওয়ায় চাহিদাও বেশি। কোম্পানিটি চায় পশ্চিম প্রান্তের অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ বিক্রি করতে।

কোম্পানিটি আরও জানায়, চীনের সিএমআই, মালয়েশিয়ার টেলিকম মালয়েশিয়া ও ইতালির একটি টেলিকম প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের ব্যান্ডউইথ নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। বিএসসিসিএল কর্তৃপক্ষের ভাষ্যে, শ্রীলংকা থেকে সাবমেরিন ক্যাবলের পশ্চিম প্রান্তের যে ব্যান্ডউইথ অব্যবহৃত আছে তা বিক্রি করবে বাংলাদেশ। কারণ হিসেবে বলা হয়, সাবমেরিন ক্যাবলের পশ্চিম প্রান্তের ব্যান্ডউইথ খুব একটা ব্যবহার করা হয় না।

জানা গেলো, ২০০৬ সালের ২১ মে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হয়। যার নাম সি-মি-উই-ফোর। যার মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালে। যদিও এটা ইকনোমিক মেয়াদ। ২০৩০ সাল পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। এর ল্যান্ডিং স্টেশন কক্সবাজারের ঝিলংঝায়। দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের মেয়াদ ২৫ বছর। যাতে বাংলাদেশ যুক্ত হয় ২০১৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। এটির ল্যান্ডিং স্টেশন কুয়াকাটায়। তৃতীয় ক্যাবল সি-মি-উই-সিক্সে (দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য-পশ্চিম ইউরোপ-৬) বাংলাদেশ শিগগিরই যোগ দেবে। আগামী জুনে এই কনসোর্টিয়ামে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করবে। প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল থেকে বাংলাদেশ ৫০০ জিবিপিএস, দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল থেকে ২৩০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ পাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হতে বাংলাদেশের খরচ হয় প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় ক্যাবলে যুক্ত হতে খরচ হয় ৬১০ কোটি টাকা।

সাবমেরিন ক্যাবল-৩

সাবমেরিন ক্যাবল ৩-এর বিষয়ে সরকার এরই মধ্যে সায় দিয়েছে। সি-মি-উই-৬-এর জন্য খরচ হবে ৬৫ থেকে ৭২ মিলিয়ন ডলার। তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল থেকে বাংলাদেশ ১২ টেরাবাইট ব্যান্ডউইথ পাবে। যার মধ্যে ৬ টেরাবাইট পাওয়া যাবে পূর্ব এবং ৬ টেরাবাইট পাওয়া যাবে পশ্চিম প্রান্ত থেকে।

এই কনসোর্টিয়ামে যুক্ত রয়েছে ১৯টি দেশ- বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, ইউএই, ইয়েমেন, জিবুতি, মিসর, তুরস্ক, ইতালি ও ফ্রান্স। এটি মূলত সিঙ্গাপুর থেকে ফ্রান্স পর্যন্ত কাজ করবে।

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.