Home » তোকে শেষ করতে চেয়েছিলাম, তুই আমাকে শেষ করে দিলি

তোকে শেষ করতে চেয়েছিলাম, তুই আমাকে শেষ করে দিলি

রাজধানীর গোপীবাগে পরকীয়া প্রেমিককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে পাঁচ খণ্ড করার আগে প্রেমিক সজীব হাসানের শেষ কথা ছিল ‘আমি তোকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তুই আমাকে শেষ করে দিলি’। আদালতে দেওয়া পরকীয়া প্রেমিকা শাহনাজ পারভীনের জবানবন্দিতে এই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। শুক্রবার শাহনাজ পারভীন আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি হত্যাকাণ্ডের আদ্যোপান্ত তুলে ধরেন। এ জবানবন্দির একটি কপি  হাতে এসেছে।

শাহনাজ পারভীন বলেন, ৯ ফেব্রুয়ারি ফজরের নামাজের পর সজীব আমার বাসায় আসে। স্বামীর বাসা থেকে নগদ টাকা এবং গহনা নিয়ে আমি তার সঙ্গে গোপীবাগের কেএম দাস লেনের ওই বাসায় চলে যাই। ওইদিন সেখানেই থাকি। পরদিন সজীব আমার কাছে টাকা ও গহনাগুলো চায়। গহনা বিক্রি করে সিএনজি কিনবে বলে জানায়। আমি বলি মাত্র এসেছি, মাথা ঠাণ্ডা করি, পরে কী করা যায় দেখব। তখন সে রাগ করে। আমাকে গালিগালাজ করে। সজীবের আরও দশটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। তাদের সে এটা সেটা কিনে দিত। সজীব শ্যামলী কাউন্টারে কাজ করতো। সেখানে ওই মেয়েরা যেত, গল্প করতো। তারা রেস্টুরেন্টে যেত। এসব কারণে তার প্রতি আমার রাগ ছিল। তাই আমি তাকে টাকা দিতে চাইনি। ১০ ফেব্রুয়ারি কাজ শেষে সজীব বাসায় ফিরলে আমরা একসঙ্গে ঘুমাই। ১১ ফেব্রুয়ারি আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পরি ইনসুলিন নিই। ভাত তরকারি রান্না করি। সজীব ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে। আমার শরীরটা খারাপ থাকায় বিছানায় শুয়ে থাকি। সজীব আমাকে নাস্তা করতে বললে আমি বলি, ইনসুলিন নিয়েছি। পরে নাস্তা করব।

সজীব বলে, আখেরি খাবার খেয়ে নে। এছাড়া সজীব বিড়বিড় করে আরও কিছু বলছিল। আমার তন্দ্রা এসেছিল। ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে শুয়েছিলাম। হঠাৎ সজীব কী যেন দিয়ে আমার মাথায় বাড়ি মারে। এরপর বাম হাতের আঙ্গুলগুলো উল্টিয়ে ধরে হাতটা পায়ের নিচে চেপে ধরে। আমার বুকের উপর বসে পড়ে। হঠাৎ তার হাতে একটি ছুরি দেখি। সে ছুরিটা আমার বুকে মারতে চায়। তখন আমি ছুরিটা তার হাত থেকে কেড়ে নিই। তাতে আমার হাতের তালু কেটে যায়। ছুরিটাকে নিয়ে আমি তার বুকে আঘাত করি। ছুরিটা তার বুক থেকে টেনে বের করতেই রক্ত আর নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে আসে। এরপর আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে খাট থেকে ফেলে দিই। এরপর তার পিঠে পা রেখে দাঁড়াই। তার চোখ নাক মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরি দিয়ে আঘাত করি। এতে সে নিস্তেজ হয়ে যায়। সে বলে- আমি তোকে শেষ করতে চাইলাম, আর তুই আমাকে শেষ করে দিলি। এরপর সে মারা গেলে আমি পরপর দুই হাত দুই পা শরীর থেকে ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে আলাদা করি। রক্তেভেজা আমার কাপড় ও বিছানার চাদর বালতির পানিতে ভিজিয়ে রাখি। এরপর আমি আমার স্বামীকে ফোন দিই। পুলিশ আসার আগ পর্যন্ত আমি ৫ খণ্ড লাশের পাশে বসে থাকি। আমার স্বামীর কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ওই বাড়িতে এসে আমাকে গ্রেফতার করে।

পুলিশ জানায়, শাহনাজের বয়স পঞ্চাশের বেশি। প্রায় ১৮ বছরের ছোট সজীবের সঙ্গেই তার দীর্ঘদিন পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কেএম দাস লেনের ৬তলা ভবনের চতুর্থ তলায় ৫/৬ বছর ধরে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় বাস করে আসছিলেন শাহনাজ ও সজীব। সজীব পেশায় একজন টিকিট কাউন্টারম্যান ছিলেন।

৯ ফেব্রুয়ারি স্বামীর বাসা থেকে চলে আসার পর ১০ ফেব্রুয়ারি শাহনাজের আসল স্বামী স্ত্রী হারিয়ে গেছেন মর্মে ওয়ারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সজীবকে হত্যার পরপরই শাহনাজ তার আসল স্বামীকে ফোন করে আসতে বলেন। পরে শাহনাজের স্বামী পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ওই বাসায় এসে সজীবের খণ্ডিত লাশ দেখতে পান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার শাহ ইফতেখার আহমেদ  বলেন, নিজে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থেকেই শাহনাজ তার পরকীয়া প্রেমিক সজীবকে হত্যা করেছেন। আর দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকেই হত্যাকাণ্ডের পর লাশ দ্বিখণ্ড করেছে। খুনের পর তার কোনো অনুশোচনা নেই। তার ভাষায় সে একজন অপরাধীকে হত্যা করেছে। আইন অনুযায়ী যে শাস্তি হবে তা মেনে নিতে তিনি রাজি। উপকমিশনার বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর ইচ্ছে করলেই শাহনাজ পালিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে তার স্বামীকে ফোন করেছেন।

 

সূত্র: যুগান্তর

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *