Home » আরও প্রায় ৪ হাজার রোহিঙ্গা নোয়াখালীর ভাসানচর যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে

আরও প্রায় ৪ হাজার রোহিঙ্গা নোয়াখালীর ভাসানচর যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে

অনলাইন ডেস্ক : চতুর্থ দফায় আরও প্রায় ৪ হাজার রোহিঙ্গা নোয়াখালীর ভাসানচর যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় ভাসানচরে যাওয়ার পনের দিনের মাথায় রবি ও সোমবার (১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি) চার ভাগে তাদের নিয়ে ক্যাম্প ছাড়ার প্রস্তুতি নিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। প্রথম ভাগে রবিবার দুপুরে এবং বিকেলে ট্রানজিট পয়েন্ট ছাড়ার উদ্যোগ নিয়ে রাখা হচ্ছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে মানবিক আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের। এমনটি জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

আগের মতো উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ এলাকা থেকে দিনে দু’ভাগে ভাগ করে বাসগুলো চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। উখিয়ার মূল ক্যাম্প ছাড়াও পুরো ৩৪ ক্যাম্প থেকেই যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গারা ট্রানজিট পয়েন্টে শনিবার আসতে শুরু করছে। বাকিরা রবিবার সকাল ও দুপুরে এসে পৌঁছানোর প্রস্তুতি রয়েছে।সোমবার যারা ভাসানচরের পথে বের হবেন তারা রবিবার সন্ধ্যা ও সোমবার সকাল-দুপুরে ট্রানজিট পয়েন্ট আসবে বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতারা। দু’দিনের যাত্রায় প্রায় ৭২টা বাস, একাধিক ট্রাক ও প্রয়োজনীয় অন্য যানবাহন প্রস্তুত রাখা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এবারও স্বেচ্ছায় যেতে রাজি হওয়া কমপক্ষে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পৌঁছে দেওয়া হবে। শনিবার বিকেল থেকে উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যেতে উখিয়া কলেজ মাঠে অস্থায়ী ট্রানজিট পয়েন্টে রাখা হবে। তবে, এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। কিন্তু রবিবার ও সোমবারের স্থানান্তর বিষয়ে শনিবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি সম্পর্কে মিটিং করেছে বলে জানিয়েছে অসমর্থিত সূত্র।

নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ক্যাম্পের মাঝিরা (রোহিঙ্গা নেতা) নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আগে ভাসানচরে যাওয়াদের জীবনচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে এখন অনেকে আগ্রহী হয়ে অপেক্ষা করছে। কিন্তু প্রথম যাত্রার আগে অনেক বুঝিয়েও জড়ো করা কষ্টকর ছিল। এখন চিত্র পাল্টেছে। রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে নিজেরাই এখন তালিকায় নাম লিখিয়েছে। ভাসানচরে ৪ ও ২৮ ডিসেম্বর এবং ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি যাদের আত্মীয়স্বজন গেছে, তাদের কাছে সুযোগ-সুবিধার খবর শুনেই অনেকেই সেখানে যেতে ইচ্ছুক।

তারা আরও জানায়, প্রথমবার জোর করে গোপনে বিভিন্ন অপপ্রচার থেকে লুকিয়ে তাদের ট্রানজিট ক্যাম্পে আনা হয়েছিল, এখন সেরকম নয়। আগেরদিন বিকেলে অনেকেই প্রথম ট্রিপের যাত্রী হতে ক্যাম্পে এসে পড়েছে।

জানা গেছে, উখিয়া ও টেকনাফের তালিকাভুক্ত (রেজিস্ট্রার) ক্যাম্প ছাড়াও বাকি সব ক্যাম্প থেকেই যাচ্ছেন রোহিঙ্গারা। উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি মো. ইউছুপ বলেন, ‘আমার ব্লক থেকে বেশ কয়েকটি পরিবার ভাসানচরে যাচ্ছে। তাদের কাউকে জোর করা হয়নি।

কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পের মাঝি আবদুর রহিম বলেন, ‘এ ক্যাম্প থেকেও ১৫টি পরিবার ভাসানচরে যাচ্ছে। প্রথম দফায় যারা গেছে, তাদের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধার খবর জেনেই নতুন করে অনেকেই যেতে আগ্রহী হয়েছে।

ভাসানচরে যেতে প্রস্তুতদের অনেকে বলেন, ‘বিশ্ব চাপে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরাতে আলোচনা করলেও নানা টালবাহানা শুরু করে। সম্প্রতি সেদেশে সেনা অভ্যুত্থান হওয়ার পর স্বল্প সময়ে নিজ দেশে ফেরার সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ হয়ে এসেছে। সুতরাং পাহাড়ি ঝুপড়ির চেয়ে দ্বীপের সুন্দর দালানে অবস্থান উন্নত জীবন দান করবে। ক্যাম্পে একটু জোরে বাতাস হলে চালা উড়ে যাওয়ার ভয়টা অন্তত থাকবে না। তাছাড়া, আশ্রিত জীবনে বাংলাদেশ সরকার যেখানেই রাখে তাতো একই রকম।

সূত্র মতে, নোয়াখালীর হাতিয়ায় সাগরের মাঝে ভেসে থাকা ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য সব ধরনের সুবিধা সংবলিত ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সুরক্ষায় রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থাও। বসবাসের যে ব্যবস্থা করা হয়েছে তা দেখতে গত সেপ্টেম্বরে দুই নারীসহ ৪০ রোহিঙ্গা নেতাকে সেখানে নিয়ে যায় সরকার। ভাসানচরের আবাসন ব্যবস্থা দেখে মুগ্ধ হয়ে তারা ক্যাম্পে ফিরে অন্যদের ভাসানচরে যেতে উদ্বুদ্ধ করে। দু’বছর আগে সরকার ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু তাদের অনিচ্ছার কারণে তা সম্ভব হচ্ছিলো না। অবশেষে এর যাত্রা শুরু হওয়ায় উখিয়া-টেকনাফের সাধারণ মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করছেন।

গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় এক হাজার ৬৪২ জন, ২৮ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় ৪২৮টি পরিবারের এক হাজার ৮০৫ রোহিঙ্গা এবং ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি আরও প্রায় ৪ হাজার রোহিঙ্গা ভাসানচরে স্থানান্তর হয়েছে। সেখানে এ পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার রোহিঙ্গা স্থানান্তরিত হয়েছেন। সেখানে মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে সমুদ্র উপকূলে আটক তিন শতাধিক রোহিঙ্গাও রয়েছে।

উল্লেখ করা যেতে পারে, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য যে আবাসন নির্মাণ হয়েছে, তা আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসমৃদ্ধ। সব মিলিয়ে কক্সবাজারের চেয়ে ১৮টি উন্নত সুবিধা রয়েছে ভাসানচরে।

ভাসানচরে যেতে আগ্রহী অনেকে জানান, ভাসানচরে অবস্থান রোহিঙ্গাদের মুখে সেখানকার বর্ণনা শুনে আমরাও সেখানে যেতে চাই। পাহাড়ের ঘিঞ্জি বস্তিতে বসবাসের চেয়ে ভাসানচর অনেক নিরাপদ হবে বলে মনে করছি আমরা। ভাসানচরে নির্মিত অবকাঠামো আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় ভরপুর বলে মনে করছে রোহিঙ্গারা।

কোনো বলপ্রয়োগ ছাড়াই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে যাওয়ার ইতিবাচক মনোভাব দেখে তাদের সেখানে পাঠানোর বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয় সরকার। পূর্বে যাওয়া দলগুলো নিরাপদে ভাসানচরে যেতে পারায় আরও অনেক পরিবার সেখানে যেতে আগ্রহী হচ্ছে বলে মনে করছেন প্রশাসনের এক দায়িত্বশীল সূত্র।

রোহিঙ্গাদের ভাসানচর যাত্রা নিয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভাসানচরের পথে চট্টগ্রাম থেকে চূড়ান্তভাবে জাহাজে না উঠা পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের যাত্রা নিয়ে সঠিক কথা বলা মুশকিল। সময়মতো গণমাধ্যমকে সবকিছু জানিয়ে দেওয়া হবে। দেশবাসী ও সারা বিশ্বকে না জানিয়ে রোহিঙ্গা স্থানান্তর হচ্ছে না, অতীতের অভিজ্ঞতা এমনটি বলছে।’

মিয়ানমারে হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে আসে আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ। তাদের মধ্য থেকে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচর নেওয়ার উদ্যোগ চলছে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *