Home » আহমদ শফীকে হত্যার অভিযোগে করা মামলা ‘রাজনৈতিক চক্রান্ত’

আহমদ শফীকে হত্যার অভিযোগে করা মামলা ‘রাজনৈতিক চক্রান্ত’

আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুকে ‘স্বাভাবিক’ উল্লেখ করে তাঁকে হত্যার অভিযোগে করা মামলাটিকে ‘রাজনৈতিক চক্রান্ত’ বলে দাবি করেছেন হেফাজত ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। তিনি আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।

হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ এবং চট্টগ্রামের দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার যৌথ উদ্যোগে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের প্রয়াত আমির আহমদ শফীকে হত্যার অভিযোগে হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে করা মামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলা হয়, এটি হাটহাজারী মাদ্রাসার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করা এবং হেফাজতের ইসলামের নেতাদের হয়রানি করার হীন চক্রান্ত ছাড়া আর কিছু নয়। অবিলম্বে মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি করা হয়।না হলে দেশের ওলামায়ে কেরামের সঙ্গে আলাপ করে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আহমদ শফী। তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হেফাজত ইসলামের আমির এবং হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, রাজনৈতিক নিজস্ব স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ও মন্ত্রীর কাছ থেকে ফায়দা লুটের জন্য মামলাটি করেছে। আহমদ শফী জীবিত থাকাবস্থায় তারা ফায়দা লুটেছে।

তারা কারা এমন প্রশ্নের জবাবে জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘তারা চিহ্নিত দালাল। তাদের কয়েকজনকে চিনি। তবে এখন তাদের নাম বলব না। দেশবাসী তাদের চেনে।’

মামলায় অভিযোগ করা হয়, হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য আহমদ শফীকে নেওয়ার আগে মাদ্রাসায় তাঁর অক্সিজেন খুলে ফেলা হয়েছে। এই অভিযোগ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, অক্সিজেন খোলা হয়নি।

ওই সময় মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা ওমর, মাওলানা আশরাফ আলী, মাওলানা ফোরকানসহ অনেক শিক্ষক ছিলেন। এমনকি আহমদ শফীর ব্যক্তিগত সহকারী (খাদেম) মাওলানা শফিউল আলমও ছিলেন।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মাওলানা শফিউল আলম বলেন, হুজুরের (আহমদ শফী) অক্সিজেন খোলা হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে করা অভিযোগ প্রসঙ্গে মামলার বাদী মোহাম্মদ মঈন উদ্দিনের মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। পরে আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী প্রথম আলোকে বলেন, আহমদ শফীকে হত্যা করা হয়েছে। তদন্তে তা উঠে আসবে। হুজুরের অক্সিজেন খুলে ফেলা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাদ্রাসার শিক্ষক ও হেফাজত ইসলামের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক নুরুল আবছার আযহারী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হেফাজত ইসলামের উপদেষ্টা মাওলানা মহিবুল্লাহ বাবুনগরী, নায়েবে আমির তাজুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, যুগ্ম সচিব নাছির উদ্দিন মুনির, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস, সহকারী অর্থ সম্পাদক আহসান উল্লাহ, প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান প্রমুখ।

হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষকদের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা ওমর, মাওলানা ফোরকান, মাওলানা শুয়াইব, মাওলানা আহমদ দিদার, মাওলানা আনোয়ার শাহ, মাওলানা আবদুর সবুর প্রমুখ।

১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের আদালতে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির মাওলানা শাহ আহমদ শফীকে হত্যার অভিযোগে নালিশি মামলা করেন তাঁর শ্যালক মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন।

মামলায় হেফাজতের ৩৬ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে আলোচনায় আসায় হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকও রয়েছেন।

শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর তিন মাস পর তাঁকে হত্যার অভিযোগে করা মামলাকে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ এবং ‘চাপে ফেলার কৌশল’ বলে দাবি করছেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা। তবে মামলার বাদীর দাবি, পারিবারিক কারণে মামলা করতে দেরি হয়।

শাহ আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক পদ থেকে অব্যাহতিসহ ছয় দফা দাবিতে ১৬ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ শুরু করেন ছাত্ররা।

দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে মাদ্রাসাটির মহাপরিচালকের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন আহমদ শফী। একই সঙ্গে তাঁর ছেলে আনাস মাদানীকে মাদ্রাসার শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয় শুরা কমিটি। সূত্র: প্রথম আলো

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *