Home » ব্রিটেনে দুর্দশার মুখে হাজারো বাংলাদেশি শিক্ষার্থী

ব্রিটেনে দুর্দশার মুখে হাজারো বাংলাদেশি শিক্ষার্থী

শুদ্ধবার্তাটোয়েন্টিফোর:  স্বপ্নের দেশ ব্রিটেনে স্বপ্নভঙ্গের যাতনা নিয়ে এখন কঠিন সময় পার করছেন বাংলাদেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা। ব্রিটেনের স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে একসময় বাংলাদেশে প্রচলিত ছিল ‘আইলোরে লন্ডনের গাড়ি, পাসপোর্ট করো তাড়াতাড়ি।’ কিন্তু এখনকার বাস্তবতা এখন একেবারেই ভিন্ন। স্টুডেন্ট ভিসায় ব্রিটেনে আসা শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই এখন দেশটিতে বসবাসের বৈধতা হারিয়েছেন। কাজের অনুমতি না থাকায় পাচ্ছেন না চাকরি। জীবন কাটছে অনিশ্চয়তায়। লেখাপড়ার জন্য এদেশে এলেও মাঝপথে ভিসা জটিলতায় বন্ধ হয়ে যায় অনেকের লেখাপড়া। আর একদিকে যেমন কাজ করবার অনুমতি নেই, অন্যদিকে আদালতে মামলা চালাতে গিয়ে অনেকে হয়েছেন সর্বস্বান্ত। জানা গেছে, ব্রিটেনের হোম অফিস ইংলিশ টেস্টে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে সাত হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীকে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। এদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীও রয়েছেন। হোম অফিসের এমন সিদ্বান্তের কারণে ভিসা হারিয়ে চাকরিচ্যুত অবস্থায় মানবেতর ও অনিশ্চিত দিন কাটাচ্ছেন এসব বিদেশি শিক্ষার্থীরা। এ সপ্তাহে ফিনান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র দফতরের আনা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইংরেজিতে অদক্ষ হাজারো বিদেশি শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সাত হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থীকে তাৎক্ষণিকভাবে দেশ ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে অভিযুক্ত ছাত্রছাত্রীদের আপিলের সুযোগই দেওয়া হয় নি। বাংলাদেশি শিক্ষার্থী শেখ আমিন (৩৩) জানান, তারা ব্রিটেনের অভিবাসন ট্রাইব্যুনালের নেওয়া সিদ্ধান্তটিকে সম্পূর্ণ অন্যায্য হিসাবে দেখছেন । আমিন জানান, ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা গত বছর তাকে গ্রেফতার করেন। এরপর তাকে তিন দিন গেটউইক এয়ারপোর্টের কাছে ব্রুকহাউস রিমুভাল সেন্টারে রাখা হয়। পরে আমিন জামিনে মুক্তি পান।  তখন থেকে আমি আমার ওপর আনা অভিযোগের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে লড়ে যাচ্ছি। এদেশে আমার এখন কাজ বা ব্যবসার অনুমতি নেই। ঘর ভাড়াও পাচ্ছি না এদেশে বসবাসের বৈধতা না থাকার কারণে। পরিচয়পত্র হিসেবে ব্যবহৃত ড্রাইভিং লাইসেন্সও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আরেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নাফিস করিম ও তার স্ত্রী ইরফানা করিম জানান, হোম অফিস নাফিসের ভিসা বাতিল করার পর তিনি ভিসা না থাকার কারনে চাকরি হারিয়েছেন। ইরফানা চাকরি হারিয়েছেন আরও একবছর আগে। এ দম্পতি এখন তাদের দুই শিশুপুত্র ইফরাজ ও ইহফামকে নিয়ে দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন। নাফিস জানান, ২০১৫ সালে ভিসা কেড়ে নেওয়া হয়। আগামী মাসে (জুনে) তার বসবাসের ফ্ল্যাটটি থেকেও তাকে উচ্ছেদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি ওই ঘোষণায় বলা হয়েছে, অধিকাংশ  শিক্ষার্থী তাদের পরিবর্তে অন্যদের পরীক্ষায় পাঠান।  জালিয়াতির মাধ্যমে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। যদিও প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে অনেক নির্দোষ শিক্ষার্থীরাও প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্পাত্র জানান, সরকারিভাবে পুরো ব্যাপারটি খতিয়ে দেখা হবে। এদিকে স্বরাষ্ট্র দফতর থেকেও এক রিপোর্টে জানানো হয়, পরীক্ষার্থীদের আবারো পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের মাধ্যমে মূল বিষয়টির সত্যতা যাচাই করা হবে। সিলেট থেকে আসা শিক্ষার্থী ওয়াহিদুর রহমান জানান, সরকারের উল্লিখিত নিয়মের কারণে তার মতো হাজারো অভিবাসীদের দেশে ফিরে যেতে হচ্ছে খালি হাতে। এখানে ব্রিটেনে অবস্থানরত অভিবাসী শিক্ষার্থীরা খণ্ডকালীন চাকরি থেকে শুরু করে সবকিছুতে সমস্যায় পতিত হচ্ছেন। ওয়াহিদ আরও  জানান, ভিসা বাতিল হবার পর বেঁচে থাকার জন্য এখন তাকে এখানে থাকা আত্মীয়-স্বজনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তার পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।  অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবী মি. লুইস এই ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, সরকারের নেওয়া সমগ্র ব্যাপারটি তার কাছে অদ্ভুত মনে হয়েছে, যা অভিবাসীদের জীবনযাত্রায় দারুণ অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।লন্ডনের ইস্ট হাম থেকে নির্বাচিত এমপি স্টিফেন টিমস বলেছেন, অনেক শিক্ষার্থীই এখানে সম্পূর্ণ নির্দোষ। কিন্তু তাদের সঙ্গে দুঃখজনক আচরণ করা হচ্ছে। এ ইস্যুতে আদালতে যাওয়া বাংলাদেশি একজন শিক্ষার্থীর মামলার রায়ে ইমিগ্রেশন ট্রাইবুনালের একজন বিচারক  বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি হোম অফিসের আচরণ ক্ষমতার অপব্যাবহার এবং প্রক্রিয়াগতভাবে অসচ্ছ। হ্যামলেটস সলিসিটরস এর অন্যতম কর্ণধার সলিসিটর বিপ্লব কুমার পোদ্দার  বলেন, ‘হোম অফিসের এমন অন্যায় আচরণের শিকার শিক্ষার্থীরা এখানে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। অনেককে আটক করে রিমুভ্যাল সেন্টারের মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অনেকে জামিনে রয়েছেন।’

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *