Home » বৈধ কর্তৃপক্ষ নেই, দেশে তাই বিটকয়েন অবৈধ

বৈধ কর্তৃপক্ষ নেই, দেশে তাই বিটকয়েন অবৈধ

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের প্রায় সবাই বিটকয়েন নামটির সঙ্গে পরিচিত। তবে অনেকেরই এ সম্পর্কে নেই সঠিক ধারণা। বিটকয়েনকে একশব্দে বলা যায় ক্রিপ্টোকারেন্সি তথা ভার্চুয়াল অর্থ।ইন্টারনেটভিত্তিক লেনদেনে এটি এখন বিশ্বের অনেক দেশে জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। ইন্টারনেটের স্বাধীনতায় বিশ্বাসীদের মাধ্যমেই আলোর মুখ দেখেছিল বিটকয়েন। আর তাই এই কয়েনের নেই কোনও কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ। যারা আদান-প্রদান করে তাদের হাতেই থাকে এর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা। তারা কাউকে কোনও কমিশন না দিয়েই আদান-প্রদান করতে পারে এই ভার্চুয়াল কারেন্সি। এটি আদান-প্রদানে কোনও কাগুজে বা ধাতব মুদ্রারও প্রয়োজন হয় না। তবে চাহিদা থাকায় আবার যে কেউ চাইলে এটাকে ডলার বা অন্য কোনও কারেন্সিতে রূপান্তর করতে পারবে।
পণ্য বা সেবা ক্রয়ে এখন আমেরিকাসহ ইউরোপের অনেক দেশে বিটকয়েন বিকল্প মাধ্যম। এমনকি মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠানও এখন বিটকয়েন নিচ্ছে।
প্রতিটি বিটকয়েন মূলত একটি কম্পিউটার ফাইল যা কোনও স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের ‘ডিজিটাল ওয়ালেট’ অ্যাপে সংরক্ষিত থাকে। যে কেউ আপনার ডিজিটাল ওয়ালেটে বিটকয়েন পাঠাতে পারবে এবং আপনিও তাদের ওয়ালেটে পাঠাতে পারবেন।
বিটকয়েনের প্রতিটি আদান-প্রদান পাবলিক লিস্টে রেকর্ডেড থাকে যেটিকে বলা হয় ব্লকচেইন। এই ব্লকচেইনের মাধ্যমে বিটকয়েনের ওপর নজরদারি রাখা যায়। বিশেষ করে মালিক না হয়ে কেউ যেন বিটকয়েন খরচ করতে না পারে এবং বিটকয়েনকে যেন নকল করা না যায় সেজন্যই এই ব্লকচেইন। আর এতেই এটি হুট করে জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়।
তিনটি উপায়ে বিটকয়েনের মালিক হওয়া যায়। নগদ অর্থের বিনিময়ে বিটকয়েন কেনা যায়। আপনি বিটকয়েনের পরিবর্তে কোনও কিছু বিক্রি করতে পারেন। আবার চাইলে কম্পিউটারের প্রসেসিং ক্ষমতা ব্যবহার করে বিটকয়েনের মালিক হওয়া যায়।
শক্তিশালী কম্পিউটারের সাহায্যে বিভিন্ন জটিল কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে বিটকয়েন তৈরি করা সম্ভব। বিটকয়েন তৈরির পদ্ধতিকে বলা হয় মাইনিং। বিটকয়েন তৈরির প্রক্রিয়া দিন দিন আরও জটিল হচ্ছে যেন বিটকয়েন তৈরির পরিমাণ কমানো যায়। বর্তমানে বিটকয়েন তৈরির কাজ শুরু করলে একটি কয়েনের মালিক হতে কয়েক বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।
বিটকয়েনের জনপ্রিয়তার বড় একটি কারণ হলো—বিটকয়েনে বিনিয়োগ করলে কয়েকগুণ লাভ হবে, এমন ধারণা। বিটকয়েন আলোচনায় উঠেও এসেছে এ কারণেই। গত এক মাসেই ভার্চুয়াল মুদ্রাটির দাম হু হু করে বেড়েছে। ফলে অনেকেই এই বিটকয়েন কেনার দিকে ঝুঁকছেন।
বিটকয়েনের ওপর সরকার বা ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেই। এ কারণেও অনেকের কাছে এটি পছন্দের বিনিময় মাধ্যম। নিজের পরিচয় গোপন রেখে এটি ব্যবহার করা যায়। আদান-প্রদানের সবকিছু সংরক্ষিত থাকলেও কোনটি কার বিটকয়েন, সে সম্পর্কে কোনও তথ্য থাকে না।
তবে বিবিসি জানিয়েছে, ক্রিপ্টোকারেন্সি বর্তমানে একটি উপযুক্ত পেমেন্ট মেথড হিসেবে গড়ে উঠেছে। পেপাল জানায়, তারা আশা করছে— গ্রাহকদের মাঝে ক্রিপ্টোকারেন্সির ধারণাকে আরও পরিষ্কার করে তুলতে পারবে।
অবশ্য প্রযুক্তি যত এগোচ্ছে ততই সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে বিটকয়েন। এরই মধ্যে পেপাল ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে প্রবেশ করেছে। যার অর্থ হলো—পেপাল ব্যবহারকারীরা বিটকয়েনসহ অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন। পেপালের দেওয়া সুবিধার কারণে বিটকয়েনের মাধ্যমে ২ কোটি ৬০ লাখ বিক্রেতার কাছ থেকে বিভিন্ন পণ্য কেনা যাবে।
ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পেপাল ব্যবহারকারী বিটকয়েনের সাহায্যে বিভিন্ন পণ্য ও সেবা ক্রয় করতে পারছেন। জানা গেছে, আগামী বছরের শুরু থেকে সব গ্রাহককেই এ সুবিধা দেবে পেপাল কর্তৃপক্ষ।
বিটকয়েন বাংলাদেশে স্বীকৃত নয়, এক কথায় নিষিদ্ধ। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক দেশে এই মুদ্রার ব্যবহার বৈধ করেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে এই মুদ্রার লেনদেনে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সম্পর্কিত আইনের লঙ্ঘন হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের জনগণকে বিটকয়েনের বিষয়ে সতর্ক করে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে। তাতে বলা হয়, বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে দেশে বিটকয়েনের লেনদেন হচ্ছে, যা কোনও নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত নয়। এসব ভার্চুয়াল মুদ্রার ব্যবহার বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৪৭, সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর দ্বারা সমর্থিত হয় না। ফলে মানুষের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
বিটকয়েনের দেখাদেখি অবশ্য আন্তর্জাতিক বাজারে এখন অনলাইনভিত্তিক আরও কিছু ভার্চুয়াল মুদ্রাও এসেছে। এর মধ্যে ইথারিয়াম, রিপ্পেল ও লিটকয়েন বিভিন্ন বিনিময় প্ল্যাটফর্মে লেনদেন হচ্ছে। এসব ভার্চুয়াল মুদ্রা কোনও দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ইস্যু করা বৈধ মুদ্রা নয়। ফলে এর বিপরীতে কোনও আর্থিক দাবির স্বীকৃতিও নেই।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, নামবিহীন বা ছদ্মনামে অনলাইনে ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেনের দ্বারা মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সম্পর্কিত আইনের লঙ্ঘন হতে পারে। এছাড়া, অনলাইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেনকারী গ্রাহকরা ভার্চুয়াল মুদ্রার সম্ভাব্য আর্থিক ও আইনগত ঝুঁকিসহ বিভিন্ন ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারেন। সম্ভাব্য আর্থিক ও আইনগত ঝুঁকি এড়াতে বিটকয়েনের মতো ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেন বা এসব লেনদেনের প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।এ বিষয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রেনিউর ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী আরিফ নিজামী বলেন, পৃথিবীতে যে জিনিস যত সীমিত তার প্রতি মানুষের আগ্রহও বেশি। বিটকয়েনও এখন তেমন। বিশ্বে এখন বিটকয়েন আছে ২ কোটি ১০ লাখ। এর বেশি এটা বাড়ানো যাবে না। এজন্য এর দামও এখন চড়া। সোমবার (৯ নভেম্বর) রাতে একটি বিটকয়েনের সর্বশেষ মূল্য ছিল ১৫,২৫১ ডলার (শেয়ারের মতো এর দামও ওঠানামা করে)।
আরিফ আরও জানান, বিটকয়েনের মতো ইথারিয়ামও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, কারণ এর কোনও সীমা নেই।
আরিফ নিজামী বলেন, অনলাইনে অনেক বেটিং (জুয়ার) সাইট আছে। সেগুলোতে ব্যবহার হয় এসব মুদ্রা। দেশের সরকার অনেক বেটিং সাইট বন্ধ করলেও নতুন নতুন সাইট দেশে প্রবেশ করছে। সেসবে খেলা হচ্ছে। ব্যবহার হচ্ছে বিটকয়েন। তিনি জানান, অনেকে এসব সাইটে গিয়ে টাকা পয়সা জমায়, কিনে রাখে। আবার সুবিধা মতো বিক্রি করে দেয়। তিনি এটাকে এক ধরনের ভার্চুয়াল শেয়ারবাজার হিসেবে অভিহিত করে বলেন, শুধু বৈধ কর্তৃপক্ষ না থাকায় এটি বৈধ নয়।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *