Home » সিলেট-সুনামগঞ্জে পানিতে ভাসছে গ্রাম-জনপদ

সিলেট-সুনামগঞ্জে পানিতে ভাসছে গ্রাম-জনপদ

অব্যাহত বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। গতকাল রোববার বৃষ্টিপাত কম হলেও নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গোয়াইনঘাটে পানি আবারো বাড়তে শুরু করেছে। এদিকে, বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা কবলিত এলাকার গ্রামের পর গ্রাম এখনো পানিতে ভাসছে। অনেক স্থানে এখনো বাড়িঘরে পানি থাকায় মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছে। তাছাড়া পানিবন্দি হওয়ায় খাদ্য ও খাবার পানির সংকটের কথা জানিয়েছেন বানভাসী মানুষ। অপরদিকে, বীজতলা তলিয়ে যাওয়া এবং গো খাদ্য নিয়েও দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। কানাইঘাটে বন্যার পানিতে বোবার হাওরের বেড়িবাঁধে বড় ধরণের ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আশপাশের এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। গোয়াইনঘাটে গতকাল সকালে পানি কিছু কমলেও বিকাল থেকে আবারো বাড়তে শুরু করেছে। গোয়াইনঘাট-জাফলং সড়কে যানচলাচল এখনো বন্ধ আছে বলে জানিয়েছেন আমাদের গোয়াইঘাট সংবাদদাতা। এদিকে, সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতির আশংকার কথা জানানো হয়েছে। উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হওয়ায় সুনামগঞ্জে বন্যার পানি আরো বাড়তে পারে বলে আশংকার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া সিলেটের বিশ্বনাথ, সুনামগঞ্জের ছাতক, দোয়ারাবাজার, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ জগন্নাথপুরসহ প্রতিটি উপজেলায় নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে মনিটরিং সেল স্থাপন করে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আমাদের সংবাদদাতারা। এদিকে, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, সুরমা নদীর পানি কানইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার, সিলেট পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার, সুনামগঞ্জ পয়েন্টে ৩৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিদপসীমার ৩২ সেন্টিমিটার এবং সারি নদী সারিঘাট পয়েন্টে বিদসীমার ৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বিশ্বনাথ ঃ বিশ্বনাথ (সিলেট) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, বিশ্বনাথ উপজেলার সবকটি নদী-নালা, খাল-বিল ও হাওরের পানি বেড়েছে। তলিয়ে গেছে উপজেলার লামাকাজী, খাজাঞ্চী, অলংকারী, দৌলতপুর, রামপাশা ইউনিয়নের বিভিন্ন রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, গুচ্ছগ্রামসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও মৎস্য খামার। সদ্য বপন করা আমন ধানের বীজতলাসহ শাক-সবজির বাগান বন্যা কবলিত হওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। কয়েকটি গ্রামের ঘরে পানি প্রবেশ করায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন মানুষ। এতে হতদরিদ্র পরিবারের মানুষজন খাদ্য সঙ্কটে ভুগছেন বলে জানিয়েছেন।

গোয়াইনঘাট ঃ গোয়াইনঘাট(সিলেট) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, গোয়াইনঘাটে গতকাল রোববার সকালে বন্যার পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও বিকেল থেকে আবারো বাড়তে শুরু করেছে। এখনো রাস্তাঘাট পানি তলিয়ে থাকায় বিভিন্ন এলাকার উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দি রয়েছেন। গত তিনদিনের পাহাড়ি ঢলে ভারি বর্ষনে সারী ও পিয়াইন নদী দিয়ে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার সবকটি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে সহ¯্রাধিক ফিসারীর মাছ পানিতে পুনরায় ভেসে গেছে, অনেক ঘরবাড়িতে পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া সারী-গোয়াইনঘাট সড়ক ও গোয়াইনঘাট জাফলং সড়কে, গোয়াইনঘাট-সালুটিকর সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি উঠেছে। এতে উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সরজমিন গিয়ে এবং বিভিন্ন সুত্রে জানাগেছে, পুর্ব জাফলং ইউনিয়নের জাফলং চা বাগান, বাউরবাগ হাইর, আসামপাড়া হাওর, পুর্ব আলীরগাঁও ইউনিয়নের নাইন্দা, তীতকুল্লি, বুধিগাঁও, খাষ, দাড়াইল, বাংলাইন ও লাতু হাওর, পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়নের সাতাইন, পাঁচপাড়া, পুকাশহাওর, ততোয়াকুল ইউনিয়নের ঘোড়ামারা হাওর, জাঙ্গাইল, বীরকুলি হাওর সহ উপজেলার বিভিন্ন হাওর ও গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গ্রামীন ছোট বড় ও নীচু কাঁচা এবং পাকা সকল রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়েগেছে। শুক্রবার ভোর থেকে সারী ও পিয়াইন নদীতে বিপদসীমার উপরে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ইউএনও গোয়াইনঘাট নাজমুস সাকিব জানান, উপজেলার সিংহভাগ এলাকা প্লাবিত রয়েছে, সারী ও পিয়াইন নদী দিয়ে বিপদসীমার উপরে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি জানান, প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন, ২০টা আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তত রয়েছে, রুস্তমপু ইউনিয়নে একটি আশ্রয় কেন্দ্রে কিছু লোকজন আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া ৩০ টন চাউল ও ২৫০ পেকেট শুকন খাবার ত্রানের জন্য পেয়েছেন বলে জানান তিনি।

কানাইঘাটঃ কানাইঘাট(সিলেট) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, টানা ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকা সহ উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারনে কানাইঘাটে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিস্তৃর্ণ এলাকা এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। এতে করে অনেক মৎস্য খামার, কয়েকশত হেক্টর আমন ধানের বীজতলা পুরোপুরি ভাবে তলিয়ে গেছে। বন্যার পানিতে নি¤œাঞ্চলের অনেক গ্রামীন রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি শত শত মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, অনেকের বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বাহী কর্মকর্তা বারিউল করিম খান বন্যা পরিস্থিতি প্রতিদিন মনিটরিং করছেন বলে জানা গেছে।

সুনামগঞ্জ ঃ সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি জানান, অব্যাহত পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টিপাতে সুনামগঞ্জে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। সুরমা নদীর পানি গত ২৪ ঘন্টায় গতকাল রোববার বিকেল ৩ টায় ১০ সেন্টিমিটার কমলেও হাওর এলাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে জনবসতিতে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল সকাল ৯ টায় গত ২৪ ঘন্টায় সুনামগঞ্জে গড় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৫০ মিলিমিটার। দুপুর ১২ টায় সুরমা নদীর পানি ৮ দশমিক ১৯ সেন্টিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিপদ সীমার ৩৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে শনিবার সুরমা নদীর পানি ৮ দশমিক ২৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত ২৪ ঘন্টায় সুরমা নদীর পানি কমলেও হাওর এলাকালয় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পওর-১ মো. সবিবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ভরতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘন্টায় রোববার সকাল ৯ টায় ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘন্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত আারও বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী । এতে সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে, উপজেলা তাহিরপুর, বিশ^ম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক ও জামালগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে জেলা শহরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়াও বন্যার পানিতে ছাতক-সিলেট সড়কে সকাল থেকে যান চলাচল বন্ধ হয়েগেছে। বিশ^ম্ভরপুর উপজেলা সদরের সবক’টি রাস্তা ডুবে গিয়ে উপজেলা সদরে বাসাবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। একই অবস্থা তাহিরপুর উপজেলায়ও। সূত্র জানায়, বন্যায় জেলার ৮১টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানাযায়, জেলার ৭০ হাজার ৩২০টি পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার ১১টি উপজেলা ও ৪ টি পৌরসভায় ২৬৯টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩৭৯টি বন্যার্ত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়াও জেলায় ৩৩৬ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২০ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

জগন্নাথপুর ঃ জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, জগন্নাথপুর উপজেলার নি¤œাঞ্চলের মানুষ ফের বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন। গত দুই দিনের অব্যাহত ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের ভুরাখালি, দাসনোয়াগাঁও হরিণাকান্দি, বেতাউকা, বেরী, পৌর এলাকার যাত্রাপাশা, শেরপুর, পশ্চিম ভবানীপুর, কলকলিয়া ইউনিয়নের শ্রীধরপাশা, জগদ্বীশপুর, কামারখাল, গলাখাল, নোয়াগাঁও, কান্দারগাঁও, পাড়ারগাঁও, নাদামপুর, হিজলা, মজিদপুর, রানীগঞ্জ ইউনিয়নের রানীনগর, বাগময়না রৌয়াইল,পাইলগাঁও ইউনিয়নের আলাগদি,আশারকান্দি ইউনিয়নের দিঘলবাক,দাওরাই গ্রামসহ কমপক্ষে ৪০টি গ্রামের লোকজন বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন। এরমধ্যে বন্যায় গৃহহীন হয়ে পড়া শতাধিক পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে এবং আত্মীয় স্বজনদের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যায় তলিয়ে গেছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট। গতকাল রোববার কলকলিয়া ইউনিয়নের বন্যাদুর্গত দুইশতাধিক পরিবারের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে চাল বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলকলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাসিম। চেয়ারম্যান আব্দুল হাসিম জানান, সম্প্রতিকালে বন্যায় ইউনিয়নের ১২শত পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে দুর্ভোগ পড়েছিলেন। গত কয়েকদিনের পরিস্থিতি উন্নতি হলেও দ্বিতীয় দফায় বন্যায় ৮শত পরিবারের ঘরে বন্যার পানিতে প্রবেশ করেছে। এরমধ্যে ৩৫টি পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। গতকাল দুই শতাধিক দুর্গত পরিবারের মধ্যে চাল বিতরণ করেছি আমরা। রানীগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জানান, বন্যায় ইউনিয়নের চার গ্রামের ৬ শতাধিক পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন। এরমধ্যে চার শতাধিক বসতঘরে পানি ওঠেছে। জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজুল আলম জানান, বন্যা পরিস্থিতি সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। দুর্গতের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা শুরু হয়েছে।

ছাতক ঃ ছাতক থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ছাতক উপজেলার সবকটি ইউনিয়ন এখনো বন্যা কবলিত রয়েছে। ছাতকে সুরমা নদী বিপদ সীমার ১৭২ সেঃমিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া উপজেলার পিয়াইন, চেলা,বটের খাল,বোকা,ডাউকি নদীসহ সবকটি নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সড়কে পানি ওঠায় সিলেট , সুনামগঞ্জসহ সারা দেশের সাথে ছাতকের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ২য় দিনের মতো বিচ্ছিন্ন রয়েছে । উপজেলার ছোট বড় অধিকাংশ রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অন্তত দেড় লক্ষ মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। সহস্রাধিক খামারের মাছ বানের পানিতে ভেসে গেছে। তলিয়ে গেছে রোপা আমনের বীজতলা। ইউএনও মো গোলাম কবির জানান, ছাতক শহরে ৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ সব আশ্রয় কেন্দ্রে বিতরণ করা হচ্ছে শুকনো ও রান্না করা খাবার। এ ছাড়া পৌরসভা ও প্রতিটি ইউনিয়নে সরকারী চাল বিতরন শুরু হয়েছে।
দোয়ারাবাজার ঃ দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, দোয়ারাবাজারে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তীত রয়েছে। তবে দুর্ভোগে দোয়ারাবাজার সদর, সুরমা, বগুলা, লক্ষীপুর, বাংলাবাজার, নরসিংপুর, দোহালিয়া, পান্ডারগাঁও ও মান্নারগাঁও ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের লাখো মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। দোয়ারাবাজার সদর, সুরমা, বগুলা ও নরসিংপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের অধিকাংশ মাছের ঘের ও পুকুরে আবারও অবমুক্ত করা মাছের পোনা দ্বিতীয় দফা বন্যায় ভেসে গেছে। অধিকাংশ বাড়িঘরে হাঁটু পানি, কোমর পানি লেগে থাকায় অনেক পরিবারের উঁনুনে হাড়িই বসছে না। এদিকে দু’দফা বন্যায় মাঠ ও গোচারণ ভূমির ঘাস মরে যাওয়ায় গবাদি পশু নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সদ্য বপন করা আমনের বীজতলা আবারও বিনষ্ট হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। রাস্তাঘাটসহ অধিকাংশ হাটবাজার আবারও তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়িসহ খেটে খাওয়া সব শ্রেনির মানুষজন পড়েছেন চরম বিপাকে। প্রথম দফা বন্যায় ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট দ্বিতীয় দফা বন্যার ঢলের তোড়ে বিভিন্ন ব্রিজের অ্যাপ্রোচ ধস, ফাঁটল ও ভাঙনের ফলে উপজেলা সদরের সাথে ৯টি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ একেবারেই বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সুরমাসহ সকল নদ-নদী, হাওর, খাল-বিলের পানি হ্রাস না পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি আবারো অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা জানান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুর রহিম, ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কমৃকর্তারা উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শন করছেন। দূর্যোগ মোকাবেলায় মনিটরিং ছাড়াও কন্ট্রোলরুম খোলা রেখে উপজেলা প্রশাসন সারাক্ষণ প্রস্তুত রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা তৈরি করতে সকল ইউপি চেয়ারম্যানকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ঃ দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে পানি। দ্বিতীয় দফা বন্যায় ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মানুষ। বন্যার আরও বিস্তৃত হওয়ায় গ্রামের পর গ্রাম পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। গতকাল রোববার দুপুরের মধ্যেই দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। রাস্তঘাট ডুবে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। খামারের মাছ ভেসে যাওয়া, ধান গবাদী পশু নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন বলে জানিয়েছেন বন্যা কবলিত মানুষ। আস্তমা গ্রামের তকলিস ও ইসলাম উদ্দিন বলেন, আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই। এই বন্যায় আমরা কিভাবে বেচে আছি কেউ খবর নেয়না। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় মারাত্মক ভোগান্তিতে দিন কাটাচ্ছি আমরা। নুর মিয়া নামের আরেকজন বলেন, পানিতে ঘরবাড়ি ডুবে গেছে গরু-ছাগল নিয়া বিপদে আছি৷ কয়েকদিন হয় এই রাস্তার মধ্যে গরু রাখছি। বন্যায় আমাদের সব তছনছ করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেবুন নাহার শাম্মী বলেন, বন্যা পরিস্থিতির খবর জানতে কন্ট্রোল রুম খোলার পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে সবাইকে আহবান করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই কিছু খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *