Home » প্রাথমিকে ৩৭ হাজার মেধাবী প্রার্থীকে প্যানেল গঠনের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হোকঃ বাবুল মুন্সী

প্রাথমিকে ৩৭ হাজার মেধাবী প্রার্থীকে প্যানেল গঠনের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হোকঃ বাবুল মুন্সী

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি প্রধান অংশ হল প্রাথমিক শিক্ষা। আর প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা যদি বিপর্যস্ত হয় তাহলে মান সম্মত ও যোগ্য শিক্ষার্থী গড়ে তোলা অনেকটাই অসম্ভব। দেশ সেবার দক্ষ কারিগর গড়ে তোলার জন্য মৌলিক শিক্ষা একান্ত অপরিহার্য। আর এই মৌলিক শিক্ষাই হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। এ স্তরের শিক্ষার গুরুত্ব এমন পর্যায়ে যে গুণগত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারলে দেশের নানা খাতে দ্রুত কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনা সম্ভব। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা প্রয়োজনানুযায়ী পর্যাপ্ত গুরুত্ব পাচ্ছে কি? প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলমান শিক্ষক সংকট ও শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশার মাধ্যমে আমরা তার বাস্তব চিত্র দেখতে পাই।
২০১৮ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় রেকর্ড সংখ্যক ২৪ লক্ষ পরীক্ষার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় আমরা ৫৫,২৯৫ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হই যা ছিল মোট পরীক্ষার্থীর শতকরা ২.৩ ভাগ। কিন্তু চূড়ান্ত ভাবে সুপারিশ করা হয় মাত্র ১৮,১৪৭ জন পরীক্ষার্থীকে আর নিয়োগ বঞ্চিত হই আমরা ৩৭ হাজার পরীক্ষার্থী। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও কেন আমরা নিয়োগ বঞ্চিত তার উত্তর আমাদের জানা নেই। নানা রকম রীট জটিলতার কারণে দীর্ঘ ৬ বছরে একটি মাত্র নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়ায় অনেক পরীক্ষার্থীর চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষ হয়ে গেছে এবং অনেকেরই এটি ছিল শেষ চাকরির পরীক্ষা । তাছাড়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ৮ নং এ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, শূন্যপদ পূরণের ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে চূড়ান্ত নিয়োগে সম্পূর্ণ শূন্যপদ পূরণ না করেই পদায়ন কার্যক্রম সম্পূর্ণ করা হয় যেটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির নিয়মের সাথে সাংঘর্ষিক ।চূড়ান্ত ভাবে সুপারিশ প্রাপ্ত না হওয়া আমরা ৩৭ হাজার মেধাবী পরীক্ষার্থী এখন চরম হতাশা ও বেকারত্বের বোঝা নিয়ে দিন পার করছি।

তাই আমরা ৩৭ হাজার মেধাবী শিক্ষার্থী শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন পূরণে আমাদের যৌক্তিক অধিকার প্যানেলের মাধ্যমে নিয়োগের দাবিতে ও বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ২০১৮ প্যানেল প্রত্যাশী কমিটি গঠন করি। ইতিমধ্যে এই কমিটির দাবি আদায়ের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দাবি আদায়ে কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গত ২৩ শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন, ২৪ শে ফেব্রুয়ারি সারাদেশে মানব বন্ধন ও ডিসি মহোদয়ের নিকট স্মারকলিপি প্রদান এবং ৩-৮ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করি।
মানবতার মা জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে করোনা পরিস্থিতিতে হত দরিদ্র কৃষকদের ধান কাটার জন্য পর্যাপ্ত শ্রমিক পাওয়া না যাওয়ায় প্যানেল প্রত্যাশী কমিটির পক্ষ থেকে কিশোরগঞ্জ, লালমনিরহাট, রংপুর, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় ধান কাটা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করি। এছাড়াও করোনা কালীন সময়ে বিভিন্ন দূর্গত এলাকায় অসহায় ও সুবিধা বঞ্চিতদের মাঝে ত্রাণ বিতরন কার্যক্রম পরিচালনা করি।

২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় প্যানেল প্রবর্তনের দাবি সংসদে উত্থাপনের জন্য রবিবার (৭ জুন) নড়াইল-১ এর মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব কবিরুল হক (মুক্তি) কে আমাদের প্যানেল প্রত্যাশী কমিটির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়। এছাড়াও সোমবার (৮ জুন) ঠাকুরগাঁও-২ এর মাননীয় সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আলহাজ্ব মো: দবিরুল ইসলাম এম. পি, মঙ্গলবার ( ৯ জুন) নীলফামারী-৩ ও ঝিনাইদহ-৩ এর মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব রানা মোহাম্মদ সোহেল ও এ্যাড. শফিকুল আজম খান এম. পি, বরগুনা-২ এর মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব শওকত হাচানুর রহমান ও বৃহস্পতিবার (১১ জুন) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও টাঙ্গাইল-৮ এর ( বাসাইল-সখীপুর) মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব এ্যাড. জোয়াহেরুল ইসলাম এম. পি কে প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ২০১৮ প্যানেল প্রত্যাশী কমিটির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়। মাননীয় সংসদ সদস্যগন প্রাথমিকে প্যানেলে মাধ্যমে নিয়োগের নিয়ম প্রবর্তন করার জন্য প্যানেল প্রত্যাশী কমিটির সাথে একাত্বতা পোষণ করেন।
এছাড়াও প্রাথমিকে প্যানেলে নিয়োগের ব্যাপারে সমর্থন দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক জনাব আনিসুর রহমান, শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এন আই খান স্যার ও অন্যান্য শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ।
প্রাথমিকে প্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগে দাবি আদায়ের কার্যক্রম বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং জন সমর্থন অর্জন করেছে। প্রাথমিকে চলমান চরম শিক্ষক সংকট ও প্রচুর পরিমাণে শূন্যপদ থাকায় এ সংকট মোকাবেলায় প্রাথমিকে প্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ এখন সময়ের দাবি।
আমরা বিশ্বাস করি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চয়ই মুজিব বর্ষে প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ২০১৮ প্যানেল প্রত্যাশী ৩৭ হাজার মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিবেন এবং মুক্তি দিবেন বেকারত্বের অভিশাপ থেকে।

বাবুল মুন্সী
গোপালগঞ্জ
সহ-সভাপতি
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ২০১৮ প্যানেল প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় কমিটি।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *