শুদ্ধবার্তাটোয়েন্টিফোর: মহান মে দিবসে রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের সবেতনে ছুটির দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। কিন্তু, মিছিল, সমাবেশ এমনকি স্মারকলিপি দিয়েও এতদিন এর কোনও সুরাহা হয়নি। অবশেষে মালিক এবং শ্রমিকপক্ষ একটি সিদ্ধান্তে এসেছেন। মে দিবসে সকাল ছয়টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখার ব্যাপারে একমত প্রকাশ করেছেন তিনি জানান, আমরা শ্রমিকদের সংগঠনের সঙ্গে বসেছি, বসে একমত হয়েছি যে আমরা তাদের দাবিকে পূর্ণ সমর্থন জানাই। মে দিবসে আমরা ছয় ঘণ্টা রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখবো। ১টার দিকে রেস্টুরেন্ট চালু করবো। তখন যদি কেউ কাজ করতে চায় করবে। বাকি বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মে দিবস পেয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। তাই এই দিনে সর্বস্তরের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক কর্মচারীরা ছুটি ভোগ করেন। কিন্তু এই সুবিধা থেকে বরাবর বঞ্চিত ছিল হোটেল রেস্তোরাঁর শ্রমিকরা। মে দিবসে যখন সব শ্রমিক একটি কর্মবিহীন দিনে বিশ্রামের প্রস্তুতি নেয় তখন হোটেল রেস্তোরাঁর শ্রমিকরা কাক ডাকা ভোরে তাদের কর্মস্থল পরিষ্কার-পরিছন্ন করে চালু করার প্রস্তুতি নেয়। তাই মে দিবসে দাবি ছিল রেস্তোরাঁ খাতের শ্রমিকদের সবেতনে সর্বাত্মক ছুটি। হোটেলে কর্মরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সপ্তাহে সাতদিন খোলা থাকে প্রতিটি রেস্তোরাঁ। ঘুমানোর সময় বাদে দিনের বাকি সময়টা তাদের চলে যায় রেস্তোরাঁয় শ্রমের পেছনে। তাই তাদের দরকার নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা। তাদের এই শ্রম ভোর থেকে শুরু হয়ে চলে গভীর রাত পর্যন্ত। ভোরে উঠতে দেরি হলে কেউ কেউ মারধরের শিকারও হন। দিনেও একটু এদিক-সেদিক হলে মালিকদের বকাবাজির ঘটনা ঘটে প্রায় রেস্তোরাঁয়। এরপরও এই হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের জন্য নির্ধারিত হয়নি তাদের নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা। তার ওপর আবার নেই ন্যায্য মজুরি। সাধারণ রেস্তোরাঁগুলোতে সারাদিন হোটেলে কেউ কাজ করে তিন বেলা খাবারের বিনিময়ে, আবার কেউ কেউ তিন বেলা খাবারের পাশাপাশি ৫০-১০০ টাকা করে পান রোজ। তাও সেই টাকাটা প্রতিদিন মেলে না বলেও অভিযোগ করেন অনেকেই। আর একটু ভালোমানের রেস্তোরাঁয় কিছু শ্রমিকের বেতন থাকলেও তা নিয়মিত না দেওয়ার অভিযোগও আছে রেস্তোরাঁ শ্রমিকদের।
শ্রমিকদের অভিযোগ, এই খাতে নেই অতিরিক্ত কাজের মজুরি, শ্রম আইন অনুযায়ী দেওয়া হয় না পরিচয়পত্র, সার্ভিস বুক, হাজিরা খাতা, উৎসব বোনাস, সাপ্তাহিক ছুটি, নৈমিত্তিক ছুটি, অর্জিত ছুটি, মেডিক্যাল ছুটিসহ সব ধরনের আইনি অধিকার। ছুটির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, মামলা করেও লাভ হয় না। আদালতের নির্দেশও মালিক মানতে চায় না। যার ফলে সেই আগের অবস্থায় থেকেই যায়। রেস্তোরাঁ মালিকরা এসব আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন না বলেই শ্রমিকরা ন্যায্য অধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হন। মে দিবসে ছুটির দাবিতে আন্দোলনরত রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের মধ্যে একজন হলেন সোহেল। রেস্তোরাঁ খাতে তিনি কাজ করছেন দীর্ঘ ৭ বছর। এই দীর্ঘ সময়ে নানা রকম মালিকের রেস্তোরাঁয় কাজ করেছেন। বেশিরভাগ রেস্তোরাঁ মালিকই তার কাছে এক রকম মনে হয়। ছুটির কথা মালিকের কাছে বললেই চাকরি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেয়। কাজ ছেড়ে চলে এলে পাওনা টাকা আর দেয় না। তখন বাধ্য হয়ে অন্য এলাকায় গিয়ে চাকরির সন্ধান করতে হয়। যেই এলাকার হোটেলের কাজ ছাড়তে হয় ওই এলাকার অন্য হোটেলে আর কেউ চাকরি দেয় না। মালিক অন্য মালিকদের বইলা দেয় যে স্বভাব খারাপ। তখন ওই এলাকার অন্য হোটেলের মালিক আর কাজ দেয় না। তাই বাধ্য হয়ে অন্য এলাকায় গিয়ে কাজ করতে হয়। এর সঙ্গে আরও ঝামেলা বাড়ে। কারণ, এলাকা পাল্টাইলে আবার ঘরও পাল্টাইতে হয়। ঘর ভাড়াও কম বেশি এদিক-ওইদিক হয়। তারপরও কিছু করার থাকে না। এক এলাকায় থাইকা আরেক এলাকায় কাজ করা ঝামেলা ।’ বেকারিতে কাজ করা লিটন জানান, বেকারি শুধুমাত্র ছুটি দেয় ঈদের সময়। তাছাড়া সারা বছর কাজ চলে। প্রতিদিনই খাবারের চাহিদা থাকায় বেকারি বন্ধ করে না মালিক। আমাদের জরুরি প্রয়োজনে ছুটি লাগলে সেই ছুটির টাকা কেটে রাখা হয়। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকএক রেস্টুরেন্ট মালিক জানিয়েছেন, ‘হোটেল চালাতে হয় কাস্টমারের (ক্রেতা) জন্য। একদিন বন্ধ রাখলে ক্ষতি হয়ে যায় বেশি। কারণ, আমি একা বন্ধ করলে তো হবে না। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু আমি বন্ধ করে বসে থাকলে অন্য রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করবে। তখন আমি আমার রেগুলার কাস্টমার (নিয়মিত ক্রেতা) হারাতে পারি। সবাই যদি মিলে সিদ্ধান্ত নেয় বন্ধ রাখার তখন সব ঠিক থাকবে, কারও আর লাভ-লোকশান চিন্তা করার সুযোগ থাকবে না ।
বার্তা বিভাগ প্রধান