Home » মরা পশুর মাংস কলকাতায় আতঙ্ক

মরা পশুর মাংস কলকাতায় আতঙ্ক

ডেস্ক নিউজ: ভাগাড়ের মরা পশুর মাংস হোটেল, রেস্তোরাঁর কাছে বিক্রি করে এমন একটি চক্রকে আটকের খবর প্রচার হওয়ার পর থেকে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য জুড়ে মানুষের ভেতর চরম মাংস-আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার পুলিশের এসপি কোটেশ্বর  দিন চারেক আগে কলকাতার কাছে বজবজ এলাকায় ঘটনাক্রমে চক্রটির সন্ধান পান তারা। বজবজে একটি বহু পুরনো ভাগাড় রয়েছে যেখানে গরু, মহিষ, ছাগল, কুকুরসহ সমস্ত মৃত পশুর দেহ এনে ফেলা হয়। ভোরের দিকে ঐ ভাগাড়ের কাছেই একটি রাস্তায় একটি গাড়ি কাদায় আটকে গেলে, স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা দেখতে পান ভার কমাতে গাড়ির পেছনে থেকে বেশ কিছু প্যাকেট নামানো হচ্ছে। মাংসের কটু গন্ধ পেয়ে মানুষজন গাড়ির লোকগুলোকে ধরে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর গাড়ির চালক এবং সঙ্গীরা এক পর্যায়ে স্বীকার করে তারা বজবজের ভাগাড় থেকে রাতের বেলা মৃত পশুর মাংস কেটে নিয়ে যেত। পুলিশ বলছে, এরপর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ এবং অনুসন্ধানের পর তারা এখন জানতে পারছে যে, একটি চক্র কয়েক বছর ধরে কলকাতার আশপাশে কয়েকটি ভাগাড় থেকে রাতের বেলায় এসব মরা পশুর মাংস সংগ্রহ করে আসছে। এইসব মৃত পশুর মাংস কেমিক্যাল দিয়ে দুর্গন্ধমুক্ত করে, তাজা মাংসের সাথে মিলিয়ে হিমায়িত করে দোকানে, রেস্তোরাঁয়, ফুটপাতের কাবাব রোলের দোকানগুনোতে সরবরাহ করতো। ভাগাড়ে নতুন পশু ফেলা হলে সংশ্লিষ্ট পৌর কর্মচারীদের ভেতর থেকে এসব মাংস ব্যবসায়ীদের কাছে খবর চলে যেত বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাওয়া খবরের সূত্র ধরে কলকাতার একটি কোল্ড-স্টোরেজ থেকে এরকম দুই মেট্রিক টন হিমায়িত মাংস উদ্ধার করেছে পুলিশ। এখন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জায়গা থেকে পুলিশ ১০ জনকে আটক করেছে। তাদের একজন নদীয়া জেলার কল্যাণী পৌর এলাকার সাবেক একজন কমিশনার। একজনকে পাশের রাজ্য বিহার থেকে আটক করা হয়েছে। এসপি কোটেশ্বর রাও বলেন, “বজবজে সেদিন গাড়ি কাদায় না আটকালে এ কেলেঙ্কারি হয়তো ধরাই পড়তো না।” এসব মাংস কিনতো কারা? এই প্রশ্নে মি রাও বলেন – “আমরা সন্দেহ করছি এমনকী বড় কিছু রেস্তোরা ব্রান্ডেও যেত এই মাংস। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নাম বলা যাবেনা”। ভাগাড়ের মরা পশুর মাংস বিক্রির কেলেঙ্কারির পাশাপাশি, পোল্ট্রি খামার থেকে মরা মুরগি কিনে সেই মাংস রেস্তোরায় বিক্রির একটি চক্রের ৮ জনকে পুলিশ শুক্রবার আটক করেছে। এর ফলে পুরো মাংস খাওয়া নিয়েই আতঙ্ক তৈরি হয়েছে কলকাতায় । কলকাতায় বিরিয়ানি, কাবারের নামীদামী বেশ কিছু রেস্তোরাঁর পাশাপাশি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাস্তার পাশে বহু ছোটো ছোটো ছাপড়া ধরনের বিরিয়ানি বিক্রির দোকান গজিয়েছে। ফুটপাতে রয়েছে শত শত কাবাব রোল এবং চিকেন নুডলসের দোকান। কলকাতায় আমাদের সংবাদদাতা অমিতাভ ভট্টশালী বলছেন, এসব দোকানে মানুষ এড়িয়ে চলতে শুরু করেছে। বেশ কটি চালু বিরিয়ানির দোকানও বন্ধ থাকতে দেখেছেন তিনি। কলকাতার বাসিন্দা অপর্না দাস বিবিসিকে বলেন – “শনিবার বন্ধুদের এক পুনর্মিলনীতে আমরা বলে দিয়েছিলাম কোনো চিকেন, মাটন রাখা চলবে না।” “আমার মাঝে মধ্যেই সন্দেহ হতো এত সস্তায় বিরিয়ানি দিচ্ছে কী করে? এখন তো দেখছি সন্দেহ সত্যে পরিণত হলো। কী যে খেয়েছি এতদিন”

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *