Home » দেশে আসছেন না জোবাইদা রহমান

দেশে আসছেন না জোবাইদা রহমান

শুদ্ধবার্তাটোয়েন্টিফোর: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে। রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে। বিএনপির রাজনীতিতে জিয়া পরিবারের এই দুই সদস্যই কেবল সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত। বিএনপি ক্ষমতায় না এলে তারেক রহমান যে দেশে ফিরবেন না, তা দলটির সব পর্যায়ের নেতাদেরই জানা ছিল। কিন্তু দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবাস দীর্ঘ হবে—এমনটা ধারণাতে ছিল না বিএনপি নেতাদের।
খালেদা জিয়ার জামিন না হওয়ায় তাই হঠাৎ দলটির মধ্যে তারেকের স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে নিয়ে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়। কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের অবনতি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে বিএনপি নেতাদের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে এমন খবরও প্রকাশ পায়, জোবাইদা দেশে ফিরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করবেন। তাঁরই পরামর্শে পরবর্তী চিকিৎসা কী হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
চিকিৎসক হিসেবে খালেদা জিয়াকে দেখতে আসছেন—সাম্প্রতিক সময়ে এমন আলোচনা হলেও জোবাইদাকে নিয়ে বিএনপির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা আছে। তারেকের অনুপস্থিতি এবং খালেদা জিয়াকে সহায়তা করতে তিনি দেশে এসে রাজনীতিতে ঢুকবেন—এমন আলোচনা বহু বছর ধরেই চলছে। কিন্তু তারেকের পাসপোর্ট বিতর্কের মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের একটি চিঠি বিএনপির সেই ভাবনাকে ফিকে করে তুলেছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী তারেক রহমানের পাশাপাশি জোবাইদা রহমান ও তাঁদের একমাত্র মেয়েও যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরে পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন, যা এখন ব্রিটেনে বাংলাদেশ দূতাবাসে জমা আছে।
রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ায় তারেকের পাশাপাশি জোবাইদা রহমানও পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন। ফলে তারেকের মতো তাঁরও আপাতত দেশে আসার ইচ্ছে নেই বলেই তাঁরা মনে করছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ বলেন, যেকোনো দেশে যে–কেউ রাজনৈতিক আশ্রয় নিলে সে দেশের সরকারের কাছে পাসপোর্ট দিতে হয়। ব্রিটেনে তারেক রহমান, তাঁর পরিবার রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন—এটি সবাই জানেন। তিনি বলেন, ‘যদি জোবাইদা রহমান ইচ্ছা করেন, যদি তিনি অ্যাপ্লাই (আবেদন) করেন হোম মিনিস্ট্রিতে যে আমার যাওয়ার ব্যাপারে কোনো ভয়ের সম্ভাবনা নেই বা আমি দেশে গেলে নিপীড়নের শিকার হব না কিংবা নিরাপদ বোধ করছি, তৎক্ষণাৎ তাঁকে পাসপোর্ট ফেরত দিয়ে দেবে।’ জোবাইদা রহমান দেশে ফিরে আসবেন কি না এবং রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন কি না, এ বিষয়ে তাঁর ধারণা নেই বলে জানান মোশাররফ হোসেন।
চিকিৎসক জোবাইদা রহমান লন্ডনে যাওয়ার আগে দেশে সরকারি চাকরি করতেন। দেশে থাকতে তিনি কখনো সরাসরি রাজনীতি করেননি। এসব কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির ভেতরে–বাইরে তাঁকে নিয়ে আলোচনা ছিল। তাঁর বিষয়ে দলের ভেতরেও ইতিবাচক ধারণা রয়েছে। এসব কারণে অনেকে মনে করেন, জোবাইদা রহমান দেশে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখবেন। তা ছাড়া আইনের দৃষ্টিতে তারেক রহমান পলাতক আসামি হলেও জোবাইদা রহমানের তেমন কোনো সমস্যা নেই। যদিও ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে ঢাকার কাফরুল থানায় একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই মামলায় তাঁর মা ইকবাল মান্দ বানুকেও আসামি করা হয়।
তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিষয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, তিনি দেশে ফিরে রাজনীতিতে যোগ দিতে চাইলে তাঁরা তাঁকে দল স্বাগত জানাবেন। কিন্তু তিনি না এলে যে বিএনপি অনেক বেশি সমস্যায় পড়বে, এটা ভাবা ঠিক না। এখন যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাতে দলের পরীক্ষিত নেতারা সমন্বয় করে দল চালাচ্ছেন। তাঁদের মত, জোবাইদা দেশে আসতে চাইলে খুব বেশি সমস্যা হবে না। তিনি চাইলেই দেশে ফিরতে পারবেন। তবে দলটির অনেক নেতাই মনে করেন, জোবাইদা রহমান কখনো রাজনীতি করেননি। এ কারণে তাঁকে নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। দলের কাছেও তিনি জনপ্রিয়। তিনি দেশে এসে রাজনীতিতে সক্রিয় হলে বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতা–কর্মীরা ‘ভরসা’ পেতেন। খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘ হলে আগামী নির্বাচনের আগে জোবাইদা নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা ছিল। তাঁর রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার খবরে দলের মধ্যে, অনেক নেতা–কর্মীর মধ্যে কিছুটা হতাশা এসেছে। কেননা, জোবাইদা থাকলে জিয়া পরিবারের কেউ একজনকে সরাসরি পেতেন নেতা–কর্মীরা।
জোবাইদা রহমানের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া এবং রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমি মনে করি, পরিবারের মধ্যে রাজনীতি থাকতে হবে এটা পুরোনো চিন্তাভাবনা, এটি প্রাচীন যুগের কথা। একটি গণতান্ত্রিক এবং প্রগ্রেসিভ সোসাইটিতে বা ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিতে এগুলো থাকে না। আমি মনে করি না জোবাইদা রহমান ফিরতে না পারলে সমস্যা হবে। এ নিয়ে পার্টির মধ্যে কোনো চিন্তা করাও ভুল। কারণ, তাহলে একটি দেউলিয়াপনা চলে আসে।’

 

 

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *