Home » অবশেষে হৃৎপিণ্ডে

অবশেষে হৃৎপিণ্ডে

আচ্ছা, তুমি সব সময় আমাকে এতোটা পাগল পাগলকরে রাখো কেন? তুমি এমনভাবে হুলুস্থু আমার বুকেরভেতর ঢুকে গেলে কেন? আমার খুব অস্থির াগেতোমাকেসব সময় ভীষণ মিস করিতোমার সাথে কথা না বললেআমার কিচ্ছু ভাল্লাগেনা কিচ্ছু নাকেমন যেনো অশান্তিলাগে, মন আনচান করেচা বানাতে গিয়ে চায়ে চিনি দিতেভুলেযাই খাওয়া, ঘুমানো, পড়াশোনা, গল্প করা, আড্ডাদেয়া, মুভি দেখা কিছুই আমার ভাল্লাগেনাকিছুই না…….স্নান শেষে সাজগোজ করতে ভাল্লাগেনামাঝে মাঝেসাজগোজ করলেও কপালে টিঁপ পরতে ভুলে যাইনিজেকেকেমন যেনো অসম্পূর্ণ অসম্পূর্ণ লাগেনিজেকে নিঃস্ব নিঃস্বলাগে শহরে এতো মানুষ আছে তবু কি যেন নেই কি যেননেই মনে হয় কাউকে ভালোবাসলে বুকের ভেতর কী এরকমহয়? আগে জানতাম না

কোথাও বেড়াতে গেলে নিজেকে একলা একলা লাগেতবুআমি কোথাও যাওয়ার জন্য বের হলে আমার সাজগোজদেখে মানুষজন এমনভাবে তাকায় যেন আমি তোমার সাথেদেখা করতে যাচ্ছিআমার খুব কষ্ট হয় অনিমেষ, খুবমনেহয় যেনো প্রশান্তের বুকে সুনামী হচ্ছেসবাই বুঝে, সবাই জানেআমি তোমাকে খুব করে চাইছিকিন্তু তুমি বুঝলেও পাত্তাদাও না আবার আমার জ্বালাতন সহ্য করোওতো রোবটমন নিয়ে তুমি থাকো কীভাবে? নাকি অন্য কাউকেভালোবাসো? সেটা অবশ্য নাতোমার সবগুলো লেখায়, কবিতায়, গল্পে অনেক মেয়ের নাম থাকে, সেটা অবশ্য গল্পেরস্বার্থেতবু আমার কেমন যেনো ঈর্ষা লাগেমনে হয় গল্পেরনায়িকারা আমাকে তোমার কাছে যেতে দিচ্ছে না তারাতোমার চারপাশে থেকে তোমাকে প্রটেকশন দিচ্ছে

তোমার দুই-একটি কথা আমার ভীষণ ভালো লাগেঅনিমেষ, যেগুলো তোমার আগের কবিতায় লিখেছো। ১.নারীরা সবকিছু সহ্য করলেও-প্রিয় মানুষের, ভালোবাসারমানুষে কিংবা প্রেমিকের ভাগ কাউকে দেয় না/ কিন্তু প্রিয়মানুষের কিংবা প্রেমিকের ভালোবাসা যখন ভাগ হয়ে যায়তখন মরা নদীর মতো মরে যায় নারী। ২. বৃষ্টি এলে কিনেনেবো, সবক’টা সুখ তোমার জন্যে/ এক পৃথিবী একটাআকাশ-হবে তোমার নীল শাড়িতেিশ্বাস করো অনিমেষ-তোমার কবিতাগুলো পড়লে কেমন যেনো নির্ভরতা পাইতোমাকে আরো আপন করে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে তোমারহাত ধরলে ভরসায় বুক ভরে যায়, নির্ভরশীলতা পাই মনেহয় খুব নিরাপদ আশ্রয়ে আছি

সেদিন তোমার অফিসে গিয়েছিলাম একটা কাজেরবাহানায়আসলে তোমাকে দেখার খুব ইচ্ছা করছিলোআমার হ্যান্ড ব্যাগে কাগজ কলম ঠিকই ছিলোকিন্তু ইচ্ছেকরেই তোমার কাছে কলম চেয়েছিমূলত কলমের বাহানায়তোমার হাতটা একটু স্পর্শ করেছিলামআরেকটা বিষয় তুমিখেয়াল করোনিতোমার টেবিলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্কএবং এক জোড়া হ্যান্ড গ্লাবস রেখে এসেছি পৃথিবীর এইক্রান্তিকালে কোভিড-১৯ অনেকের অনেক প্রিয় মানুষদেরকেকেড়ে নিচ্ছেআমি তোমাকে হারাতে চাই না অনিমেষআমার হৃৎপিন্ড জুড়ে তুমি আছো তোমার নিরাপত্তাই আমারসমগ্র জীবনের চাওয়াতোমার ভালো থাকাই আমার সকলপ্রার্থনা

এই যে তুমি এতো নিখুঁতভাবে আমাকে অবহেলা করো, আমি কিন্তু একটুও মন খারাপ করি নাবরং তোমার প্রতিআমার ভালোবাসা আরো বহুগুণে বেড়ে যায়শুনেছিভালোবাসার মানুষের সবকিছুই ভালো লাগে শুধুমাত্রঅবহেলা ছাড়াকিন্তু তোমার অবহেলা আামাকে আরোভালোবাসার কাঙ্গা বানিয়ে দিচ্ছেতোমার অবহেলাকেইআমার কাছে ভালোবাসা মনে হয়একটা কথা তুমি তোজানোই, ভালোবাসা পেলে আমি তোমার বুকে ভেতরগুটিয়ে-সুটিয়ে বসে থাকি যেন আকাশ ছেড়ে তোমার আকাশজুড়েনিজেকে তখন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হয়সেদিন তুমি লেছিলে-“এই ক্রান্তিকালে আমি যেন খুবনিরাপদে থাকি”। তোমার এই একটি কথা আমাকে খুবআন্দোলিত করেছে অনিমেষ এই একটি কথাই আমার বুকেরপুকুরের সকল ক্ষত কমিয়ে দিয়েছে এই একটি কথাকেই আমিখুব যত্ন করে বুকের বাঁ পাশে লালন করে রেখেছিআমারপ্রার্থনাজুড়ে কেবল তুমিই থাকোজানো অনিমেষ? তোমারজন্য আমি সবসময় নিজের ভেতর অপেক্ষা সাজিয়ে রাখিসকালে ঘুম ভাঙলে তোমার ফোন কলের অপেক্ষায় থাকি, দুপুরে স্নানশেষে ভেজা চুলের ছবি তুলে অপেক্ষায় থাকি কখনতুমি বলবে ছবি পাঠানো জন্যবিকেলে ছাদে গেলে আকাশদেখি, পাখি দেখিপাশের বাসার নব দম্পতিদের দেখিতখননিজের মাঝেও স্বপ্ন জাগে খুউবআমরা দু’জন ঘর বাঁধবো, সংসার করবো, দু’টি দেহের মাঝে থাকবে-অভিন্ন একটিহৃদয় সংসারে একটু আধটু অভাব অনটন থাকবেসেটাতুমি ভালোবাসা দিয়ে পুষিয়ে দিবে

হ্যাঁএকটা কথা তোমাকে বলা হয় নিগত সপ্তাহেআমার বান্ধবী নবনীর বাসায় গিয়েছিলামতার মা মারাযাওয়ায় সে খুব ডিপ্রেস্ড ফিল করছিলোইচ্ছে না থাকলেওযেতে হয়েছেএর কয়দিন পর থেকে আমি কেমন যেন জ্বরজ্বর আর শ্বাসকষ্ট বোধ করছিপ্রাথমিক রিপোর্ট ভালোতুমিটেনশন নিও না তুমি টেনশন নিলে তোমার তো আবারহার্টবিট বেড়ে যায়

খুঁজে পাবার একটাই পথহারিয়ে ফেলা।  মনে রাখারএকটাই পথভুলে যাওয়াআর অবহেলা পাবার একটাইপথ ভালোবেসে যাওয়াযদিযাত্রায় আমরা বেঁচে যাইতাহলে তোমায় আমি আরো প্রাণভরে ভালোবাসবোআমিমাস্টার্স শেষ করবো আর অন্যদিকে তোমার প্রমোশন হবেতারপর আমরা বিয়েটা সেরে ফেলবোতুমি আমার সিঁথিতেসিঁদূর লাগিয়ে দিবেকি চমৎকারভাবতেই ভালো লাগছেএই দিনটা একটা মেয়ের জন্য কত স্বপ্নের দিনসেটা জানোইতোবাসর রাতে আমার এতোদিনের সকল গল্প তোমাকেশোনাবোকোথায় গিয়েছি, কোথায় ঘুরেছি, কী দেখেছি, কারসাথে কী কথা বলেছি? যা যা দেখেছি, দেখে দেখে চোখেরপুকুরকে শুকিয়ে ফেলেছিসব তোমাকে দেখাবো, সব তোমাকেবলবোতোমাকে না বললে আর কাকে বলবো বলো?নিজেকে উজাড় করে সবকিছু তোমার কাছে বলার মতো এতোস্নিগ্ধ সুন্দর আর কিছুই নেই পৃথিবীতেআমরা পাহাড়, ঝর্ণা, সমুদ্রে যাবো ঘুরবো-ফিরবো, একটু আধটু মান-অভিমান করবো মেয়েদেরকে একটু অভিমানীই হতে হয়, তানা হলে মেয়ে মেয়ে লাগে নাআর পুরুষদেরকে একটু রাগীহতে হয়তা না হলে পুরুষ পুরুষ লাগে নাোমার আরোএকটা কবিতার লাইনের কথা মনে হচ্ছে অনিমেষবলেছিলাম-ঝরণায় নাকি সমুদ্রে যাবে? তুমি দু’চোখে সবটুকুস্বপ্ন সাজিয়ে বলেছিলে-পাহাড়ের চূড়ায় যাবো/যেখানে উঠতেগেলে হাত ধরা যায় বেশি”। সত্যিই আমরা পাহাড়ের চূড়ায়যাবো

জানো অনিমে ? আমার খুব ইচ্ছে-তোমার সকলপ্রার্থনায়, সকল চাওয়া পাওয়ায়, সুখকষ্টে, বিরহদহনে, হৃৎপিণ্ডফুসফুসজুড়ে যেন আমি থাকিতোমার সকলমৌনতাজুড়ে আমি আছি সেটা সত্যি কিন্তু মুখে তো একবারবলতে পারো যে, আমায় ভালোবাসোকিন্তু ইনিয়ে বিনিয়ে, কথা বার্তায়, কেয়ারিংটিকই তো বুঝিয়ে দাও তোমারভালোবাসার গভীরতাআরজন্যইতো আমাকে বিয়েওকরতে রাজি হচ্ছোযা হোক, ইদানিং শরীরটা ভালো যাচ্ছেনাগত পরশুদিন আবার ডাক্তার দেখিয়েছিশরীরেরঅবস্থা ভালো না থাকায় ডাক্তার হাসপাতালে এডমিশনদিয়েছে মনে হচ্ছে নবনীদের বাসায় যাওয়ার সময় কোনগন্ডগোল বাঁধিয়েছি ডাক্তাররা কেবল টেস্ট, মেডিসিন, সার্জারি আর বোর্ড মিটিং নিয়ে ব্যস্ত ভীষণঅথচ আমিজানি-তুমি আমার শ্বাসকষ্টের ইনহেলার আর বেঁচে থাকারঅক্সিজেনতোমাকে একবার দেখলে, একবার ছুঁতে পারলে-সুস্থ্য হয়ে বেঁচে রবো অন্তহীন

সবেমাত্র রিপোর্ট হাতে পেলাম কোভিড-১৯ পজেটিভলাস্ট স্টেজচলে যাচ্ছি হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক এবং হ্যান্ডগ্লাবস ঠিকমতো ব্যবহার করোনিজের যত্ন নিওনিরাপদেথেকো অবশেষে তোমার হৃৎপিণ্ডে আমাকে রেখো

অনিমেষ….রাখবে তো?

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *