Main Menu

ঢাকার বাড়ির পাশেই করোনায় মৃত্যু, অসহায় আমি জড়িয়ে ধরি ছেলেকে

সঞ্চিতা পাল: সকালের প্রথম দুঃসংবাদ-বুকটা ধড়াস করে উঠল। কী হবে এবার। জড়িয়ে ধরলাম ছেলে বাবনকে। আমার বাড়ি ঢাকার মিরপুরে। বাড়ির আসে পাশে দু জন করোনা রোগীর মৃত্যুর খবর পেলাম।
এমনিতেই বাংলাদেশে করোনার সবথেকে বিপদসংকুল এলাকায় থাকছি। এবার মৃত্যু এলো একেবারে বাড়ির কাছেই।
বাংলাদেশে বিবাহসূত্রে আসার পর এই প্রথম এতটা অসহায় লাগছে।

স্বামী নিয়াজ কর্মসূত্রে বেসরকারি টিভি চ্যানেলের রিপোর্টার। দিনভর বাইরে থাকে। কতো বড় ঘটনা-দুর্ঘটনার সংবাদ করতে গিয়েছে-চিন্তা হননি। কিন্তু এখন ? ভয়টা আরো বাড়ল। বাড়ির পাশেই যে করোনা ত্রাস।

বাংলাদেশের সবথেকে বিপজ্জনক করোনা সংক্রামিত এলাকা ঢাকার মিরপুর ও পাশের জেলা নারায়ণগঞ্জ। সংবাদ মাধ্যমে জানছি এই দুই এলাকায় লাল সতর্কতা জারি। আগেই বাংলাদেশ লকডাউনে গেছে। কিন্তু সংক্রমণের নাগপাশে পুরো ঢাকায় বিশেষ অবরুদ্ধ। এদিকে শ্বশুরবাড়ির দেশ জুড়ে চলছে করোনার সামাজিক সংক্রমণ পর্ব।

সরকারি হিসেবে ৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার সঙ্গে জুড়ল আমার বাড়ির পাশের গলির দু জনের মৃত্যু সংখ্যা। কয়েকদিন হলো বৈশাখ এসেছে। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ (পশ্চিমবঙ্গে বলি পয়লা বৈশাখ) মঙ্গল শোভাযাত্রা দিয়ে পালন করে বাংলাদেশ। এবার আতঙ্কিত জীবন সেসব দূরে রেখেছে।

বিয়ের পর আমার রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলা থেকে এসেছি বাংলাদেশের রাজধানীতে। বারবার ঢাকা-কলকাতা যাতায়াত করতে গিয়ে কিছুই মনে হয়না। এখন মনে হয় কতদূরে আমার দেশ। এখানকার আত্মীয়রা আমার বাপের বাড়ির আত্মীয়রা সবাই চিন্তিত। খবর পাচ্ছি হাওড়াতেও করোনা সংক্রমণ ছড়িয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি তো ভালো দেখছি না।
সেই জনচঞ্চল ঢাকা কেমন যেন ঝিমিয়ে গেলো। ভয় সর্বত্র। বাবন বলে- “বাবা, তোমার সাথে তো আমার আর দেখা হবে না, তাই না?”
চোখ টলটল, ধরা গলায় ফোনে কথা বলছে একটা ছোট্ট ছেলে তার বাবার সঙ্গে। সে গতকাল থেকে নিজের পরিবারের সঙ্গ ছেড়ে চলে গেছে পাশেরই একটা খালি ফ্ল্যাটে। তার পেশার চাহিদার জন্য সংবাদকর্মী stayhome , workfromhome করতে পারছে না।

তবে এসব গালভরা কথা বাদ দিয়ে শুধু নিজের পরিবারকে ভালো রাখতে এবং অবশ্যই তার নিজের পেশাকে খুব পছন্দ করার কারণেই প্রতিদিন সে ঘর থেকে বের হয়। আমি বিরক্ত হলে, ভয় পেলে বলে, “সাংবাদিকদের কাজ কি? আমি সেই কাজটাই করছি।” হ্যাঁ, কাজ করছে এবং কাজ শেষে নিঃসঙ্গভাবে একটা খালি ফ্ল্যাটে থাকছে।

ছোট্ট ছেলে রাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞাসা করছে, “মা, আমি আর বাবার সাথে দাবা খেলতে পারব না?” মা সাহস যোগায় “সব ঠিক হবে একদিন।”

সব ঠিক হোক। করোনা মুক্ত দিনে আবার আমরা একসঙ্গে মিরপুর ছাড়িয়ে বনানী পেরিয়ে দূরে যাব অনেকটা।আর যাব নিজের দেশে-ভারতে।

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.