Home » করোনায় ১০০ প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু

করোনায় ১০০ প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু

গোপনীয়তা সংক্রান্ত আইনের কারণে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে মৃত ব্যক্তির নাগরিকত্ব জানানো হয় না। অনেকে আবার নাগরিক হয়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশি পরিচয় স্বীকার করেন না। তাই বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ মিশন সুনির্দিষ্ট করে প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিদের মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক তথ্য জানতে পারে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে ১০ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, ’বাংলাদেশি বা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কতজন মারা গেছে সেটি জানতে বাঙ্গালি কমিউনিটির মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। আমরা যতদুর জেনেছি এই সংখ্য ১০০ এর মতো কিন্তু এটি সমর্থিত না।’

ওই কর্মকর্তা বলেন, ’সৌদি আরবে পাচঁজন করেনাভাইরাসে মারা গেছেন এবং আরেকজন বাংলাদেশির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে তিনি মার্স ভাইরাসে মারা গেছেন। কাতারে ২ জন মারা গেছেন এবং ওই তথ্য কাতার সরকার আমাদের দিয়েছে। ইটালিতে যে তিনজন মারা গেছেন তাদের মৃত্যু সনদে বাংলাদেশি লেখা আছে।’

এদিকে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এবং বিভিন্ন মিশনে যোগাযোগ করে দেখা যায় করোনায় সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি মারা গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৫৮ জন বাংলাদেশির মৃত্যুর কথা জানা গেছে। তাদের মধ্যে ১১ জন নারী ও ৪৭ জন পুরুষ।

এছাড়া যুক্তরাজ্যে ২৪ জন, সৌদি আরবে ৬ জন, ইতালিতে ৩ জন, কাতারে ২ জন, স্পেনে ১জন ও সুইডেনে ১জন প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়।

দেশে দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মৃত্যু

বিভিন্ন মিশনে যোগাযোগ করে জানা গেছে, প্রায় সব দেশের সরকার মৃত ব্যক্তির জাতিয়তা প্রকাশ করছে না। সে কারণে স্ব স্ব দেশে বাংলাদেশি কমিউনিটির কাছ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করছেন।

যুক্তরাষ্ট্র 

উত্তর আমেরিকার দেশটিতে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বাস করে নিউ ইয়র্কে। ওই রাজ্যে সবচেয়ে বেশি করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী রয়েছে। মৃত বাংলাদেশিদের মধ্যে ৮৩ বছরের বৃদ্ধ যেমন আছেন, তেমনি আছেন ৩৮ বছর বয়সী তরুণ।

নিউ ইয়র্কে কর্মরত বাংলাদেশি কুটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মার্কিন সরকার মৃত ব্যক্তির নাগরিকত্ব প্রকাশ না করার কারণে বাঙ্গালি সম্প্রদায়ের কাছ থেকে তারা তথ্য সংগ্রহ করছেন। এ পরিস্থিতিতে সেখানকার বাংলাদেশ কনসুলেট ও স্থায়ী মিশন থেকে সব বাংলাদেশিকে সাবধানে থাকার জন্য এবং স্থানীয় আইন মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে ।

একজন কুটনীতিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ’এখানে আমরা সবাই ঘরবন্দী। আমরা টেলিফোন, ফেসবুক বা অন্য সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করছি।’

যুক্তরাজ্য

যুক্তরাষ্ট্রের পরে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মারা গেছেন যুক্তরাজ্যে। রবিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় রাত আটটায় যুক্তরাজ্য থেকে এক কুটনীতিক টেলিফোনে জানান, আজকে পর্যন্ত মৃত বাংলাদেশির সংখ্যা ২৪।

যুক্তরাষ্ট্রের মতো যুক্তরাজ্যেও মৃত ব্যক্তির নাগরিকত্ব প্রকাশ না করার কারণে বাঙ্গালি সম্প্রদায়ের কাছ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করছে সেখানকার বাংলাদেশ মিশন। এর মধ্যে কতজন নারী এবং কতজন পুরুষ জানতে চাইলে, ওই কর্মকর্তা বলেন, ’এটি আমরা এখনও আলাদা করিনি। তবে এতটুকু বলতে পারি পুরুষের সংখ্যা বেশি এবং এদের বেশিরভাগই বৃহত্তর সিলেটের।’

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শিশু কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক কারও মৃত্যু হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ’আমাদের কাছে এ ধরনের কোনও তথ্য নেই। তবে ব্রিটিশ গণমাধ্যমের খবর থেকে জেনেছি পাচঁ বছরের একটি বাচ্চা মারা গেছে যার স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছিল এবং সম্প্রতি দুইজন মারা গেছে যাদের বয়স ১৩ ও ১৯ কিন্তু তাদের কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছিল না।’

সৌদি আরব

পৃথিবীর সব দেশের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের ওই দেশটিতে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি বাস করে। সেখান থেকে এখন পর্যন্ত ছয়জন বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রিয়াদ ও জেদ্দা মিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশটির সরকার দ্রুত এবং কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে এখনও সেখানে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা তুলনামূলক কম।

একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ছয়জনের মারা যাওযার খবর নিশ্চিত করেছি। আরও দুইজনের বিষয়ে আমরা জেনেছি কিন্তু তারা করোনাভাইরাসে মারা গেছে কিনা তা নিশ্চিত নয়।’ তিনি জানান, যারা মারা গেছেন পাসপোর্ট অনুযায়ী তাদের দুইজনের বয়স  ৩৬ ও ৩৮ এবং সবচেয়ে বেশি যে বয়সী যিনি মারা গেছেন, তার বয়স ৬০ এর বেশি।  বাকিদের বয়স ৫০ এর ঘরে। মৃত ব্যক্তিরা চট্টগ্রাম, সাভার, পাবনা অঞ্চলের মানুষ।

ইতালি

গোটা ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ অবস্থা ইটালিতে।  ওই দেশের সরকারি হিসাব অনুযায়ী সেখানে ১ লাখ ৪০ হাজার বাংলাদেশি বাস করে।

সেখানে কর্মরত একজন কুটনীতিক বলেন, এখন পর্যন্ত তিনজন বাংলাদেশি মারা গেছেন এবং তাদের মৃত্যু সনদ ইস্যু করেছে ওই দেশের সরকার। যারা মারা গেছেন, তাদের বয়স ৫০ থেকে ৬০ এবং এদের মধ্যে একজনের বাড়ি নোয়াখালি, একজনের লাকসাম এবং অপরজনের বাড়ি চিটাগাং।

কাতার

মধ্যপ্রাচ্যের ওই দেশটিতে কয়েক লাখ বাংলাদেশির বাস। করোনা ভাইরাসে সেখানে এখন পর্যন্ত ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে প্রথম দুইজনই বাংলাদেশি। কাতারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ বলেন, ’কাতার সরকার দুইজন বাংলাদেশি মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরকে অবহিত করেছিল।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, ’কাতারে অবস্থিত বাংলাদেশিদের দেখভাল করার জন্য আমি ওই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি।’ তিনি জানান, যারা মারা গেছেন তাদের দুইজনের বয়স যথাক্রমে ৫৭ ও ৫৮।  একজন মৌলভীবাজারের, আরেকজন গাজিপুরের বাসিন্দা।

এছাড়া সুইডেনে ৮০ বছর বয়সী একজন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। স্পেনেও একজন বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *