Main Menu

সৎ থাকার জন্য কোনো যুক্তি দেখিনি আমি

শুদ্ধবার্তাটোয়েন্টিফোরডটকম : দেশের শিক্ষাব্যবস্থা যত জন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি তৈরি করেছে তার সিকিভাগও সৎ লোকের সৃষ্টি করতে পারেনি।
কারণ আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নৈতিকতা ও দেশ প্রেমের শিক্ষা দেওয়া হয় না। আমার সামান্য শিক্ষাজীবনেও খুব কম শিক্ষক(১/২ জন) পেয়েছি যিনি আমাকের দেশ প্রেম এবং নৈতিকতার শিক্ষা দিয়েছেন। স্যারেরা ক্লাসে এসে একটা টপিকের উপর আলোচনা করেই দায়িত্ব শেষ করেন। অথচ আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ স্যার নাকি ঢাকা কলেজে বেশিরভাগ সময় নৈতিকতা ও জ্ঞানের আলোই বিতরণ করেন। এমন শিক্ষকের ছাত্র হতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করতাম।
চাকরিজীবনে ট্রেনিংয়ের যে কয়জন শিক্ষক পেয়েছে তাদের অনেকেই সৎ এবং এবং খুব দক্ষ ছিলেন। তারা নিয়মিত পুলিশিংয়ে ঠিকতে পারেন না। তাই দেশের মানুষ সৎ এবং ন্যায়পরায়ণ পুলিশ চোখে দেখে না। সৎ সরকারি চাকুরীজীবী মানুষ দেখে না। আমরা একজন ম্যাজিস্ট্রেট এর নাম জানি যিনি একটা এয়ারপোর্ট এর চিত্রটাই পালটে দিয়েছেন নিজের সততার বলে (যতটা সম্ভব)।
গত শুক্রবার মসজিদের হুজুর ওয়াজ করলেন দেশের আইন না মানা মানে দেশের সাথে ওয়াদা ভঙ্গের শামিল। তিনি যে ফতোয়া দিলেন তার সারমর্ম হল এই, আপনি যদি রাস্তার উল্টো পথে চলেন তাহলেও আপনি আল্লাহর নিকট ওয়াদা ভঙ্গকারী হিসেবে বিবেচিত হবেন। আপনি যতই ঈমানদার হোন না কেন আল্লাহ আপনাকে ওয়াদা ভঙ্গকারী হিসেবেই বিবেচনা করবেন। এবার চিন্তা করেন ওয়াদা ভঙ্গকারী কি কখনো জান্নাতে যেতে পারবে? আমরা কদমে কদমে ওয়াদা ভঙ্গকারী।
এই দেশে যারাই দুর্নীতি করে তারা কোনো না কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সব থেকে ভালো ছাত্রদের একজন। কারণ ভাল ছাত্র ছাড়া ভাল চাকরী করা সম্ভব নয়। যারা আমার মতো নিম্নতর স্থরের ছাত্র তারা বড় কোনো চাকরী পায় না। বড় চাকরি বেশিরভাগ পায় মেধাবীরা। আমার দেশের কৃষকেরা দুর্নীতি করে না। কুলিকামার দুর্নীতি করে না। এরা দুর্নীতির শিকার হয়। দুর্নীতির কারণে এদের স্বপ্নভঙ্গ হয়। তবু তারা জমির খাজনা দিয়ে দেশে শিক্ষিত সমাজ সৃষ্টি করে।
দেশের সব থেকে মেধাবীরা ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হয়। তার পরের স্থরের মেধাবীরা হয় সরকারের বিভিন্ন প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। রাজনীতিবিদগনও মেধাবী উচ্চশিক্ষিত। এমনকি তাদের একটা বিঢ়াট অংশ মহান মুক্তিযোদ্ধে আত্মত্যাগকারী, জীবন উৎসর্গকারী বীরদের সন্তানও আছেন। তবুও দেশে অনিয়ম কমে না। দুর্নীতি কমে না। তার কারণ কি? তাহলে কি ধরেই নিবো যতবড় মেধাবী ততবড়……?
আমার মধ্যে যতটুকুই(অতি সামান্য) সততা এবং নৈতিকতা আছে তার বেশিরভাগ আমি পরিবার থেকে শিখেছি। আমি দেখেছি আমার বাবা সর্বোচ্চ সুযোগটুকু পেয়েও অসত উপায় অবলম্বন করেন নি। নিজের সম্পত্তি নষ্ট করেছেন কিন্তু সততা নষ্ট করেন নি। আমি যতটুকু অসত তা আমি রাষ্ট্রের পরিবেশ থেকে শিখেছি। আমি দেখেছি এই দেশে শত অনিয়ম করার পরেও সবাই তাকেই সম্মান করে। আমি দেখেছি যাদের টাকা ও ক্ষমতা আছে তারাই সমাজের কাছে সম্মানিত। যেকোনো অনুষ্ঠানে অতিথির আসন সেই অলংকৃত করে।
তাহলে আমি বা সে যারাই চাকরিতে আসে তারা সৎ থাকবে কেন? সৎ থাকার কোনো লজিক আমি এখন পর্যন্ত এই সমাজে দেখিনি। আমি আমার সন্তানকে কোনোদিন ভাল কাপড় দিতে পারবো না কিংবা ভাল স্কুলে পড়াতে পারবো না। কিন্তু তমুক অফিসের সব থেকে কম বেতন পাওয়া কর্মচারিও তার ছেলেকে বাজারের সব থেকে ভালো জামা কিনে দিবে ও শহরের দামি স্কুলে পড়াবে। আমি কোনো রকম একটি বাসা বাড়া নিয়ে পরে থাকবো। কিন্তু সরকারী অফিসের একজন পিয়নের একটা বড়সড় বাড়ি থাকবে। আমি ঠিকমত ডাল ভাত খেতে পারবো না আমার সামনেই এমএলএসএস বাজারের সব থেকে বড় মাছটা কিনে নিবে।
যে যতটুকু অসত তার জন্য রাষ্ট্র দায়ী এর শিক্ষাব্যবস্থা দায়ী। যেই যতটুকু দুর্নীতিবাজ তার জন্য এই সমাজ ব্যবস্থা দায়ী। আর যে যতটুই সৎ তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব কেবল তার। কৃতিত্ব তার পরিবারের। কৃতিত্ব আরেকজন সৎ লোকের।
আমার এই লেখাটা সেই সব বীরদের জন্য যারা চোখের সামনে লক্ষলক্ষ টাকা উড়তে দেখেও চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নেয় তাদের। আমার লেখায় কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে দুঃখিত।

লেখক-ফাহাদ মোহাম্মদ, ট্রাফিক সার্জেন্ট, বাংলাদেশ পুলিশ।

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.