জানা গেছে, সব পাঁচ তারকা হোটেলেই ছিল পাপিয়ার এসকর্ট ব্যবসা। আলোচিত এই নারী হচ্ছেন নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাাদক। তিনি নিজেকে কেন্দ্রীয় নেত্রী হিসেবেও পরিচয় দিতেন। সর্বশেষ প্রচার করতেন সংরক্ষিত এমপি পদ পাচ্ছেন। কিন্তু তা না পেলেও থেমে ছিল না তার অপরাধমূলক কাজকর্ম। গতকাল সকালে স্বামী মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন, সাবিক্ষর খন্দকার (২৯), শেখ তায়্যিবা (২২)সহ আরও দুজন বিদেশে যাওয়ার প্রাক্কালে বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাকে আটক করেছে র্যাব। শুরুতে পাপিয়া প্রথমে নিজের দাপুটে অবস্থানের পরিচয় দেন। তবে কোনো কিছুতে গুরুত্ব না দিয়ে পাপিয়ার কাছ থেকে র্যাব কর্মকর্তারা উদ্ধার করতে থাকেন অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে, এই পাপিয়া হেন অপকর্ম নেই, যার সঙ্গে জড়িত নন।
পাঁচ তারকা হোটেলে নারী ও মাদক ব্যবসাই তার আয়ের মূল উৎস। দেশের অভিজাত কিছু মানুষ ও বিদেশিরাই এর গ্রাহক। ইন্টারনেটে স্কট সার্ভিস খুলে বসে খদ্দেরদের কাছে তাদের চাহিদামতো সুন্দরী তরুণী পাঠাতেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষিত সুন্দরী তরুণীদের সংগ্রহ করতেন। একপর্যায়ে তাদেরকে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের শয্যাসঙ্গী হতে বাধ্য করতেন পাপিয়া। এরই মধ্যে পাপিয়ার কাছ থেকে গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত অনেক ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তির অন্তরঙ্গ দৃশ্যের ভিডিও ক্লিপ উদ্ধার করেছেন র্যাব কর্মকর্তারা।
গোপন ক্যামেরায় মেয়েদের ছবি ধারণ করে তাদের নিয়মিতভাবে ব্ল্যাকমেইল করতেন তিনি। পাপিয়ার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়- পাপিয়া বসে আছেন বাইজিবাড়ির সর্দারনির মতো। তার হাতে মোটা একটি বেতের লাঠি। তার কব্জায় থাকা মেয়েরা কথা না শুনলে পেটাতেন। পাপিয়া একাধিক অভিজাত হোটেলের রুম ভাড়া নিতেন নামে-বেনামে। সর্বশেষ গতকাল পর্যন্ত একটি হোটেলের প্রেসিডেনশিয়াল স্যুটে তার নামে পাওয়া গেছে। এই পাঁচ তারকা হোটেলে বিভিন্ন মেয়েকে পাপিয়া নিজেই নিয়ে যেতেন। তাদেরকে দিয়ে করাতেন অবৈধ দেহব্যবসা। এরই মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদে সবকিছুই কবুল করেছেন পাপিয়া।
গত ১২ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ৫৯ দিন প্রেসিডেনশিয়াল স্যুট ভাড়া ছিল পাপিয়ার নামে। ওই ৫৯ দিনে তিনি ৮১ লাখ ৪২ হাজার টাকা নগদ (ক্যাশ) পরিশোধ করেছেন। পাপিয়ার স্বামী সুমন চৌধুরী বেশির ভাগ সময় থাইল্যান্ডে অবস্থান করলেও গত থার্টিফার্স্ট নাইটে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে অবস্থান করেন। ওই রাতে তার কক্ষেও চার-পাঁচ জন সুন্দরী নারী ছিল বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। পাপিয়ার সব কর্মকান্ডের অন্যতম অংশীদার তার স্বামী সুমন। একসময় নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ছিলেন সুমন।