Home » বাজেট ৫ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা

বাজেট ৫ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা

আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেটের সম্ভাব্য আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এ ব্যয় মেটাতে রাজস্ব আহরণ লক্ষ্য ধরা হয় ৩ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি নতুন সরকারের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ।বুধবার অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক কো-অডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে এটি প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। ওই বৈঠকে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট সংশোধন করা হয়। সেখানে কাটছাঁট করা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। এতে সংশোধিত বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আজকের বৈঠকে (অর্থনৈতিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল) বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অনুমোদন নেয়া হবে। এর আগে বাজেট প্রসঙ্গে কোনো কিছু বলা যাবে না। রাজস্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অবশ্য এটি চলতি অর্থবছরের তুলনায় বেশি হবে। তবে মোট রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা বলতে পারব না।বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে বেলা ১১টায় শুরু হয় অর্থনৈতিক কো-অডিনেশন কাউন্সিল বৈঠক। দুপুর দেড়টায় শুরু হয় সম্পদ কমিটির বৈঠক। দুটি কমিটির সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী। ওই বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, অর্থ সচিব ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিব, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের আকার নির্ধারণ এবং চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট সংশোধন করা হয়।

সূত্রে জানা গেছে, আগামী বাজেটে রাজস্ব আহরণকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সম্ভাব্য রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ননএনবিআর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১৪ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআর লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩৮ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরখাত থেকেও বড় অংকের অর্থ আসবে। বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যেই রাখা হয়েছে।সূত্র আরও জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার চলতি সংশোধিত বাজেটের চেয়ে প্রায় ৭৯ হাজার কোটি টাকা বাড়বে। চলতি বাজেট ঘোষণা করা হয় ৪ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। বুধবার তা সংশোধন করে ৪ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। পাশাপাশি চলতি বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। সেটি কাটছাঁট করে ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকায় আনা হয়েছে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা আশানুরূপ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত কাটছাঁট করা হয়।

এদিকে চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। এ হার ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ অর্জিত হওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হয়েছে। এদিকে প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ২ শতাংশ ধরে আগামী অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের মধ্যে রাখা, মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৫ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনা, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বৈঠকে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হয়। কারণ সরকারি বিনিয়োগ বাড়লে অবকাঠামোর উন্নতি হয়। অবকাঠামো বাড়লে তখন ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ উৎসাহিত হয়। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে।বাজেটে কৃষি ঋণের প্রবাহ, গ্রামীণ ক্ষুদ্র শিল্পে ঋণের জোগান বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। তবে নতুন বাজেটে চমক হিসেবে থাকবে বহুল আলোচিত তিন স্তরের ভ্যাট ঘোষণা, পহেলা জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইনের আংশিক কার্যকর, অটোমেশনের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র সেবা চালু, খেলাপি ঋণ আদায়ে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠন, কর্পোরেট কর হার হ্রাসের বিষয়।

কৃষকদের আনা হবে বীমার আওতায়, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি থেকে বের করে আনতে সংশ্লিষ্ট পরিবারে একটি করে চাকরি দেয়ার কর্মসূচিও ঘোষণাতে থাকবে বলে জানা গেছে। নির্বাচনী ইশতেহার অনুসারে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মনোযোগ দেয়া হবে বাজেটে। সে ধারাবাহিকতায় দেশের প্রতিটা গ্রাম শহরে রূপান্তর করা হবে। যেখানে সেখানে হাটবাজার হবে না। জমি সাশ্রয় করে কৃষিকাজে ব্যবহার করা হবে। দেশের তরুণেরা ভবিষ্যৎ। তরুণপ্রজন্মের জন্য বেশি বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। এমন সব উদ্যোগ থাকবে বাজেটে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য উৎপাদন খাতের অবদান জিডিপিতে বেশি হতে হবে। দেশের অর্থনীতি এখন সেদিকেই যাচ্ছে। কৃষির চেয়ে শিল্প খাতের অবদান বাড়ছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে কৃষি খাতের অবদান ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বাজেটে এ হার ছিল ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। আগামী বাজেটে শিল্প খাতের অবদানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ। গত বাজেটে ছিল শিল্প খাতে ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে সেবা খাতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ।গত বাজেটে ছিল ছিল ৫২ দশমিক ৮ শতাংশ।২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে অনেক গুণগত পরিবর্তন থাকবে। বাজেট বক্তৃতা হবে সংক্ষিপ্ত ও সাবলীল, যাতে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে। বাজেটের দর্শন হবে প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানবান্ধব। ঘরে ঘরে কর্মসংস্থান ছাড়াও গ্রাম উন্নয়নে প্রাধান্য থাকবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়ানোয় গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *