Home » মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে নিউজিল্যান্ডের আল নূর মসজিদ

মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে নিউজিল্যান্ডের আল নূর মসজিদ

আল্লাহ তার বান্দাদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন শুধু মাত্র তার ইবাদাতের জন্য। কিন্তু যারা তাঁর ইবাদাতের বিপরিতে তার সৃষ্টির অবিশ্বাস করে, তারা মানুষ নামের পশু। এ বিষয় পবিত্র আল-কোরআনের উল্লেখ করা হয়েছেন, ‘উলায়িকা কাল আন’আম’। এমন এক পাশবিক মানুষের জিঘাংসা সারা দুনিয়ার মানুষের চক্ষু খুলে দিয়েছে। যার ফলে আমরা কিছু মানবপ্রেমিক বন্ধুর সন্ধান পেয়েছি যেমন- অস্ট্রিলিয়ার ডিম বালক খ্যাত উইল কনোলী।

এ বালক মুসলিমদের নিয়ে বিরূপ সমালোচনার করার কারণে নিজ দেশের সিনেটরের মাথায় ডিম ছুড়ে বলেছে মুসলিমরা সন্ত্রাসী নয়, সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই। যারা মুসলিমদের সন্ত্রাসী বলে তাদের মাথা সিনেটর ফ্রেজার এনিং এর মতো ফাঁকা।নিউজিল্যান্ডের আল নূর মসজিদে নারকীয় ঘটনায় যার নাম এবং কর্মকাণ্ড বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে তিনি হলেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন। হামলার পরপরই মুসলিম বিদ্বেষী বলে খ্যাত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেসিন্ডাকে ফোন দিয়ে জানতে চান তিনি তাদের জন্য কী করতে পারেন। জেসিন্ডা খুবই স্বাভাবিকভাবে বলেছেন, কিছুই করা লাগবে না, শুধু মুসলিমদের প্রতি আপনার সহানুভূতি আর ভালোবাসা চাই। এই হলেন বুদ্ধিমতী মমতাময়ী নারী জাসিন্দা আরদার্ন।

মুসলিমদের জন্য যে কথাটি তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলেছেন, সেটি দুনিয়ার কোনো রাষ্ট্রনায়ক বলেছেন বলে শুনা যায় না। তার কথাটির প্রতিধ্বনি যদি আমাদের রাষ্ট্রনায়করা করতে পারত তাহলে বিশ্বজুড়ে বার্মা থেকে ফিলিস্তিন, ফিলিস্তিন থেকে ফিজি আইল্যান্ড পর্যন্ত মুসলিমদের কান্না থেমে গিয়ে দুনিয়া প্রেমের রাজ্যে পরিণত হতো।নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর এ মুসলিম প্রীতির কারণে মুসলিমদের ঘরে ঘরে হাজার হাজার জাসিন্দার জন্ম হবে বলে বিশ্বাস।

পূর্ব গোলার্ধের মাওরী সভ্যতার ব্রিটিশ কলোনিয়াল দেশ নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশ টাইম থেকে ৬ ঘণ্টা এগিয়ে থাকায় তাদের জুমার নামাজের সময় আমাদের এখানে সকাল ৭টা। ১৫ মার্চ সকালে ইন্টারনেটে এই দুঃসংবাদ পাই। আমাদের দেশে জুমা শেষে অনেক মুসল্লি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানায়। এদিক থেকে নিউজিল্যান্ডের আল নূর মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি সে দেশের সরকার প্রধান আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন ‘সবার জন্য সবাই মোরা প্রত্যেকে আমরা প্রত্যেকের তরে’। 

প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরদার্ন ৮ মাসের শিশু সন্তানের কথা ভুলে মুসলিমদের সেবায় এগিয়ে এসেছেন। জাতীয় রেডিও টিভিতে জুমার আজান এবং নামাজ প্রচার করে মুসলিমদের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়েছেন। তিনি যদিও মুসলিম নন কিন্তু যে কাজগুলো করেছেন সেগুলো মুসলিমদেরই কাজ। যে কোনো শুভ বা নেক কাজকে ইসলাম স্বাগত জানায়। শুধু তাই নয়, এর উসিলায় মুক্তিও মেলে। বদরের যুদ্ধে জাহেলী যুগের আরব দানবীর হাতেম তাইয়ের এক অধস্তন পুরুষ কোরাইশ পক্ষে যুদ্ধ করে বন্দি হলে নবীজি হাতেম তাইয়ের দানের কথা স্মরণ করে তাকে মুক্তি দিয়ে দেন। ইসলামকে আমরা কিছু বেশভূষা আর আনুষ্ঠানিকতায় বেঁধে রেখেছি। ইসলাম কিন্তু বেশভূষা আর আনুষ্ঠানিকতার নাম নয়। 

আল্লাহ হাদিসে কুদসিতে বলেন, ‘লা ইয়ানজুরু ইলা সুয়ারিকুম আমি তোমাদের সুরাত বেশভূষার দিকে তাকাবো না’। আসলে ইসলামের মূল কাজ হল সৃষ্টির সেবা। মানুষে দয়া করা। নবীজি বলেন, যে দয়া করে না সে দয়া পায় না। এ দেশে যারা ইসলামের দাওয়াত নিয়ে এসেছেন তারা সুফিয়ানে কেরাম। তারা নিঃস্বার্থ সেবার মাধ্যমে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। এটাই ছিল নবীজির শিক্ষা।

বিশ্বে ইসলামকে তুলে ধরতে আমাদের জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সেবা এবং সহমর্মিতার কর্মসূচি নিয়ে এগুতে হবে। জাসিন্দা আরদার্ন আমাদের সে পথ দেখিয়েছেন। তার একটি কথা বারবার কানে বাজে ক্ষমতাধর ট্রামকে সঙ্গে সঙ্গেই বলেছিলনে, আমি কিছুই চাই না মুসলিমদের প্রতি আপনার সহানুভূতি ও ভালোবাসা চাই। আসলেই তো ভালোবাসার জন্যই তো পৃথিবী। আসুন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে ভালোবেসে পৃথিবীকে ভালোবাসার বাসরঘর বানাই।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *