Home » ৫০ হাজার কোটি টাকা বিদ্যুৎ খাতে ১০ বছরে লোকসান

৫০ হাজার কোটি টাকা বিদ্যুৎ খাতে ১০ বছরে লোকসান

১০ বছরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ খাতে শুধু বিল বকেয়াই নয় বরং বেশি দামে বিদ্যুৎ ক্রয় করে কম দামে বিক্রি করায় লোকসানের পরিমানও বাড়ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত গত বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নির্মাণাধীন বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে এলে সরকারকে উচ্চ ব্যয়ে বিদ্যুৎ ক্রয় করতে হবে না। সেক্ষেত্রে লোকসানও কমে আসবে।


সূত্রমতে, সরকারি, আধাসরকারি/ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রাইভেট খাত মিলিয়ে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা। অবশ্য বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বিতরণ কোম্পানিগুলোর বকেয়া বিলের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। আর ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বকেয়া বিলের যে তথ্য দিয়েছিলেন তাতে এর পরিমাণ উল্লেখ ছিল ৫ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি বিল বকেয়া আছে প্রাইভেট সেক্টরে। এই বিলের পরিমাণ ৫ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা। এরপর সর্বোচ্চ বকেয়া আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে, যার পরিমাণ ৭৬৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এছাড়া ৬৪২ কোটি ৯৮ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে। মন্ত্রণালয় ভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি বকেয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের, যার পরিমাণ ৩২৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

এরপর সবচেয়ে বেশি বিল বকেয়া রেখেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের কাছে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ ১৪২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
একইভাবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে বকেয়ার পরিমাণ ১২৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এছাড়া ৭৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা বকেয়া রেখেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৬২ কোটি ৫০ লাখ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৪৯ কোটি ২২ লাখ, ধর্ম মন্ত্রণালয় ৪৩ কোটি ১২ লাখ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৩১ কোটি ২৫ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে।
এর বাইরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ ২৪ কোটি ৪২ লাখ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কাছে ২৩ কোটি ১৭ লাখ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছে ১৮ কোটি ২১ লাখ, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে ১৪ কোটি ৭৩ লাখ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কাছে ১১ কোটি ৫৫ লাখ এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে ৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। সবচেয়ে কম বকেয়া শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাছে, যার পরিমান ২০ হাজার টাকা।


সূত্রমতে, বকেয়া বিলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিদ্যুৎ খাতের লোকসানও বাড়ছে। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত গত ১০ বছরে বিপিডিবির লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। শুধু গত অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান হয়েছে ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। তার আগের অর্থবছর এর পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৪৩৪ কোটি। এছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থবছর ৩ হাজার ৮৬৬ কোটি ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরেও ৭ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছিল বিপিডিবি।
বর্তমানে দেশে উৎপাদনে আছে মোট ১২৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর মধ্যে বিপিডিবির নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ৪১। বাকি ৮২টি রেন্টাল, কুইক রেন্টাল, আইপিপি ও স্মল ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (এসআইপিপি), যেগুলো থেকে বিদ্যুৎ কিনছে বিপিডিবি। এর মধ্যে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল ২৭টি এবং আইপিপি ও এসআইপিপি ৪৬টি। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫৪টিই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল, যা সবচেয়ে ব্যয়বহুল।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, ১ হাজার ১৬৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৪টি কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু আছে। বর্তমানে গ্যাস থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় ২ টাকা ৮০ পয়সা, ডিজেল থেকে ১৯ টাকা ৩০ পয়সা, ফার্নেস অয়েল থেকে ১১ টাকা ৪৮ পয়সা ও কয়লা থেকে ৭ টাকা ৩৮ পয়সা। উৎপাদন খরচ বেশি হলেও ভর্তুকি দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ৪ টাকা ৮২ পয়সা রাখা হয়েছে। এ কারণেই বিপিডিবিকে লোকসান গুনতে হচ্ছে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *